ঢাকা ০৪:৩৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চলতি মাসেই ২০০ আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত করবে বিএনপি

সোজাসাপটা রিপোর্ট
  • আপডেট সময় : ০১:১৭:১৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫
  • / ৫ জন পড়েছেন

আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চলতি মাসেই ২০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করবে বিএনপি। যাকে চূড়ান্ত প্রার্থী করা হবে দল থেকে তাকে গ্রিন সিগন্যাল দেয়া হলে বিভ্রান্ত সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। সেজন্য আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করতে বিএনপি’র হাইকমান্ডকে পরামর্শ দিয়েছেন তারা। অন্যথায় নির্বাচনের মাঠে তারা পিছিয়ে পড়বে বলেও মনে করছেন নেতারা। গত সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপি’র সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।

বৈঠক সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রার্থী যাচাই-বাছাইয়ে প্রায় ১৫০ আসনে তেমন জটিলতা দেখছে না দল। এসব আসনে প্রার্থী মোটামুটি চূড়ান্ত। তবে একাধিক প্রার্থী এবং গ্রুপিং থাকায় শতাধিক আসনকে জটিলতাপূর্ণ বিবেচনা করে সংকট নিরসনে সাংগঠনিক উদ্যোগ নেয় বিএনপি। এর অংশ হিসেবে এসব আসনের প্রার্থীদের কেন্দ্রে ডেকে দল থেকে মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে তারেক রহমানের কঠোর নির্দেশনার কথা জানিয়ে দেয়া হয়। এই সাংগঠনিক উদ্যোগের পরেই আসনভিত্তিক একক প্রার্থীকে গ্রিন সিগন্যাল দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে বিএনপি। এক্ষেত্রে কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করা হচ্ছে। বিষয়টি প্রতিদ্বন্দ্বী বা অন্য প্রার্থীদের না জানাতে হাইকমান্ড থেকে দেয়া হচ্ছে কঠোর নির্দেশনা।

বৈঠকে নির্বাচনের তফসিলের পর দলীয় সাংগঠনিক প্রক্রিয়া তথা পার্লামেন্টারি বোর্ডের মধ্যদিয়ে প্রার্থী চূড়ান্ত করার বিষয়ে আলোচনা হয়। বলা হয়, মাঠে একাধিক প্রার্থী থাকায় এভাবে গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে একজনকে গ্রিন সিগন্যাল দেয়ায় এবং সে বিষয়টি কেন্দ্র কিংবা দায়িত্বশীল কোনো পর্যায় থেকে খোলাসা না করায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে।

ওদিকে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নির্বাচনের মাঠে না থাকায় আগামী নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীকে বিএনপি’র প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। তবে জামায়াত ইতিমধ্যে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে মাঠে থাকলেও বিএনপি এখনো তাদের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করেনি। তবে প্রতিটি আসনে বিএনপি’র একাধিক প্রার্থী প্রচারণায় রয়েছে। এমন অবস্থায় নির্বাচনের মাঠে বিএনপি যাতে পিছিয়ে না পড়ে, সেজন্য দলের সাংগঠনিক সম্পাদকরা গত মাসে তাদের প্রতিবেদনে দ্রুততম সময়ে প্রার্থী ঘোষণা করতে হাইকমান্ডকে পরামর্শ দেন।

সূত্র জানায়, বৈঠকে নির্বাচন সামনে রেখে চলতি অক্টোবর মাসের মধ্যেই ‘ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল’ প্রস্তুত করতে নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগ নিয়েও আলোচনা হয়। বলা হয়, সারা দেশে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার যে প্যানেল প্রস্তুত করা হচ্ছে, সেটির অধিকাংশ কর্মকর্তা ছাত্রজীবনে ছাত্রশিবির এবং বর্তমানে জামায়াতপন্থি। এমনটা হলে নির্বাচনে তারা একটা বিশেষ দলকে বিজয়ী করতে ভূমিকা রাখতে পারে। এতে করে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তাই সতর্কভাবে দল-মত-নির্বিশেষে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে যাতে এই তালিকা প্রণয়ন করা হয়, সে ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এ লক্ষ্যে আজ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানাবে বলেও বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়।

এ ছাড়া স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে অনুষ্ঠেয় বিএনপি’র প্রতিনিধি দলের বৈঠকের বিষয়বস্তু নিয়েও আলোচনা হয়। স্থায়ী কমিটির সদস্যরা মনে করছেন, কিছু কিছু উপদেষ্টার বক্তব্য, তৎপরতা ও কার্যক্রমে সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হচ্ছে। প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল-পদায়ন নিয়ে কিছু উপদেষ্টা পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে, বিশেষ একটি দলের পক্ষে কাজ করছে। বিশেষ করে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে জামাতীকরণ করা হচ্ছে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এসব রদবদল করা হচ্ছে বলে মনে করছেন তারা। বৈঠকে নেতারা বলেন, এসব ঘটনায় বিএনপি উদ্বিগ্ন। এই উদ্বেগের কথা জানাতে এবং একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরতে গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন।

সংবাদটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

চলতি মাসেই ২০০ আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত করবে বিএনপি

আপডেট সময় : ০১:১৭:১৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫

আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চলতি মাসেই ২০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করবে বিএনপি। যাকে চূড়ান্ত প্রার্থী করা হবে দল থেকে তাকে গ্রিন সিগন্যাল দেয়া হলে বিভ্রান্ত সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। সেজন্য আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করতে বিএনপি’র হাইকমান্ডকে পরামর্শ দিয়েছেন তারা। অন্যথায় নির্বাচনের মাঠে তারা পিছিয়ে পড়বে বলেও মনে করছেন নেতারা। গত সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপি’র সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।

বৈঠক সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রার্থী যাচাই-বাছাইয়ে প্রায় ১৫০ আসনে তেমন জটিলতা দেখছে না দল। এসব আসনে প্রার্থী মোটামুটি চূড়ান্ত। তবে একাধিক প্রার্থী এবং গ্রুপিং থাকায় শতাধিক আসনকে জটিলতাপূর্ণ বিবেচনা করে সংকট নিরসনে সাংগঠনিক উদ্যোগ নেয় বিএনপি। এর অংশ হিসেবে এসব আসনের প্রার্থীদের কেন্দ্রে ডেকে দল থেকে মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে তারেক রহমানের কঠোর নির্দেশনার কথা জানিয়ে দেয়া হয়। এই সাংগঠনিক উদ্যোগের পরেই আসনভিত্তিক একক প্রার্থীকে গ্রিন সিগন্যাল দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে বিএনপি। এক্ষেত্রে কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করা হচ্ছে। বিষয়টি প্রতিদ্বন্দ্বী বা অন্য প্রার্থীদের না জানাতে হাইকমান্ড থেকে দেয়া হচ্ছে কঠোর নির্দেশনা।

বৈঠকে নির্বাচনের তফসিলের পর দলীয় সাংগঠনিক প্রক্রিয়া তথা পার্লামেন্টারি বোর্ডের মধ্যদিয়ে প্রার্থী চূড়ান্ত করার বিষয়ে আলোচনা হয়। বলা হয়, মাঠে একাধিক প্রার্থী থাকায় এভাবে গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে একজনকে গ্রিন সিগন্যাল দেয়ায় এবং সে বিষয়টি কেন্দ্র কিংবা দায়িত্বশীল কোনো পর্যায় থেকে খোলাসা না করায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে।

ওদিকে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নির্বাচনের মাঠে না থাকায় আগামী নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীকে বিএনপি’র প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। তবে জামায়াত ইতিমধ্যে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে মাঠে থাকলেও বিএনপি এখনো তাদের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করেনি। তবে প্রতিটি আসনে বিএনপি’র একাধিক প্রার্থী প্রচারণায় রয়েছে। এমন অবস্থায় নির্বাচনের মাঠে বিএনপি যাতে পিছিয়ে না পড়ে, সেজন্য দলের সাংগঠনিক সম্পাদকরা গত মাসে তাদের প্রতিবেদনে দ্রুততম সময়ে প্রার্থী ঘোষণা করতে হাইকমান্ডকে পরামর্শ দেন।

সূত্র জানায়, বৈঠকে নির্বাচন সামনে রেখে চলতি অক্টোবর মাসের মধ্যেই ‘ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল’ প্রস্তুত করতে নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগ নিয়েও আলোচনা হয়। বলা হয়, সারা দেশে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার যে প্যানেল প্রস্তুত করা হচ্ছে, সেটির অধিকাংশ কর্মকর্তা ছাত্রজীবনে ছাত্রশিবির এবং বর্তমানে জামায়াতপন্থি। এমনটা হলে নির্বাচনে তারা একটা বিশেষ দলকে বিজয়ী করতে ভূমিকা রাখতে পারে। এতে করে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তাই সতর্কভাবে দল-মত-নির্বিশেষে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে যাতে এই তালিকা প্রণয়ন করা হয়, সে ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এ লক্ষ্যে আজ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানাবে বলেও বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়।

এ ছাড়া স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে অনুষ্ঠেয় বিএনপি’র প্রতিনিধি দলের বৈঠকের বিষয়বস্তু নিয়েও আলোচনা হয়। স্থায়ী কমিটির সদস্যরা মনে করছেন, কিছু কিছু উপদেষ্টার বক্তব্য, তৎপরতা ও কার্যক্রমে সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হচ্ছে। প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল-পদায়ন নিয়ে কিছু উপদেষ্টা পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে, বিশেষ একটি দলের পক্ষে কাজ করছে। বিশেষ করে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে জামাতীকরণ করা হচ্ছে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এসব রদবদল করা হচ্ছে বলে মনে করছেন তারা। বৈঠকে নেতারা বলেন, এসব ঘটনায় বিএনপি উদ্বিগ্ন। এই উদ্বেগের কথা জানাতে এবং একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরতে গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন।