ঢাকা ০২:১৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এনসিপির জন্য সব দলের নিবন্ধন আটকে রেখেছে ইসি

প্রতিবেদকের নাম :
  • আপডেট সময় : ০৫:৪৪:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫
  • / ১৭ জন পড়েছেন

সরকার জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) বগলে নিয়ে ঘুরছে; এমন অভিযোগ তুলে কার্যক্রমে নিবন্ধনের অপেক্ষায় থাকা অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো বলেছে, এনসিপিকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) অন্য দলগুলোর নিবন্ধন প্রক্রিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে আটকে রেখেছে। তাই অধিকতর তদন্তের পরিবর্তে আগের তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নিবন্ধন সনদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে তারা।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) রাজধানীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রথম তদন্তে উত্তীর্ণ দুটি দল— মৌলিক বাংলা ও বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিজেডিডিপি) এ দাবি জানায়।

মৌলিক বাংলার সভাপতি খান শোয়েব আমান বলেন, নির্বাচন কমিশন এখন বাংলাদেশের অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতোই ক্ষমতাসীনদের প্রতিনিধিত্ব করছে। তারা যদি সরকারের প্রতিনিধি না হতেন, তাহলে আমাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, আমাদের অবস্থান বা ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে এমন প্রশ্ন তুলতে পারতেন না। তদন্ত কর্মকর্তারা আমাদের সঙ্গে যে আচরণ করেছেন, তা অত্যন্ত অপ্রীতিকর ও সংবেদনশীল। আমরা তাদের নাম-পরিচয় নোট করে রেখেছি। উনারা আমাদের যে সমস্ত কথা বলেছেন, তা খুবই অপ্রীতিকর। খুবই সেনসিটিভ কথা যা রাজনৈতিক দলের প্রতি সরকারি কোনো মানুষ বলতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, ২০১২ সাল থেকে অনেক দল নিবন্ধন পেয়েছে, আমরা জানি তারা কীভাবে নিবন্ধন পেয়েছে। আমরা কোনো অবস্থাতেই ফ্যাসিস্ট সরকারের সঙ্গে আপস করিনি, আর সেই কারণেই আজও আমরা নিবন্ধন থেকে বঞ্চিত। সময় হলে আমরা ওই কর্মকর্তাদের নাম প্রকাশ করবো।

মৌলিক বাংলার সাধারণ সম্পাদক ছাদেক আহমেদ সজীব বলেন, বর্তমান সরকার এনসিপির নেতাকর্মীদের বগলে নিয়ে ঘুরছে। ভাবসাব দেখলে মনে হয়, তারা এখনই নেতা হয়ে গিয়েছে। আমাদের ওপর যারা অত্যাচার করছে, সেই জামায়াত বা বিএনপির লোকজনদের ক্ষেত্রে মনে হয় তারা ইতোমধ্যে নির্বাচিত হয়ে গিয়েছেন। বর্তমানে যারা রাজনীতি করছে তারা কেউই আগামী দিনের কথা ভাবছে না। তারা ভাবছে বর্তমানের কথা।

ইসি প্রথমে তদন্ত, পরে পুনর্তদন্ত, এখন আবার অধিকতর তদন্ত করছে। এতে আমাদের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। আমাদের অনেক নেতাকর্মী অন্য পেশার পাশাপাশি রাজনীতি করেন। বারবার মাঠ পরিদর্শনে ডেকে নেওয়ায় তাদের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এই তদন্ত আসলে রাজনৈতিক ‘ময়নাতদন্তের’ মতো।

তিনি অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা সহযোগিতার চেয়ে অসহযোগিতাই বেশি করেছেন। বিধিমালা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সব নথি জমা দেওয়ার পরও তারা আমাদের অফিসের মালিকের সম্পত্তির দলিল চাচ্ছেন, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অনৈতিক।

ছাদেক আহমেদ আরও বলেন, ইসি তাদের প্রক্রিয়াগুলো এমনভাবে করছে যেন একটি দলকে (এনসিপি) নিবন্ধন দিতে গিয়ে অন্য সব দলের নিবন্ধন স্থগিত রাখা হয়। এনসিপিকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে কমিশন তিন ধাপে তদন্ত চালাচ্ছে, যা সংবিধান ও ইসির নিজস্ব নীতিমালার লঙ্ঘন।

এদিকে বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টিও অধিকতর তদন্ত না করে প্রথম তদন্তের ভিত্তিতে নিবন্ধন দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। দলটির পক্ষ থেকে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করারও আহ্বান জানানো হয়েছে।

প্রাথমিক তদন্তে এই দুটি দলই টিকে ছিল। তবে ইসি এখন আরও নয়টি দলের সঙ্গে তাদেরও অধিকতর তদন্ত করছে। ইতিমধ্যে এনসিপিকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন, তবে তাদের নিবন্ধন ‘শাপলা প্রতীক’ জটিলতায় আটকে আছে।

ইসি বলছে, শাপলা প্রতীক কোনো দলকে দেওয়া যাবে না। অন্যদিকে এনসিপির দাবি, শাপলা প্রতীক দিতে কোনো আইনগত বা রাজনৈতিক বাধা নেই এবং তারা এই প্রতীক ছাড়া নিবন্ধন নেবে না।

বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৫২টি।

ট্যাগ :

সংবাদটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

এনসিপির জন্য সব দলের নিবন্ধন আটকে রেখেছে ইসি

আপডেট সময় : ০৫:৪৪:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫

সরকার জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) বগলে নিয়ে ঘুরছে; এমন অভিযোগ তুলে কার্যক্রমে নিবন্ধনের অপেক্ষায় থাকা অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো বলেছে, এনসিপিকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) অন্য দলগুলোর নিবন্ধন প্রক্রিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে আটকে রেখেছে। তাই অধিকতর তদন্তের পরিবর্তে আগের তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নিবন্ধন সনদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে তারা।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) রাজধানীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রথম তদন্তে উত্তীর্ণ দুটি দল— মৌলিক বাংলা ও বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিজেডিডিপি) এ দাবি জানায়।

মৌলিক বাংলার সভাপতি খান শোয়েব আমান বলেন, নির্বাচন কমিশন এখন বাংলাদেশের অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতোই ক্ষমতাসীনদের প্রতিনিধিত্ব করছে। তারা যদি সরকারের প্রতিনিধি না হতেন, তাহলে আমাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, আমাদের অবস্থান বা ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে এমন প্রশ্ন তুলতে পারতেন না। তদন্ত কর্মকর্তারা আমাদের সঙ্গে যে আচরণ করেছেন, তা অত্যন্ত অপ্রীতিকর ও সংবেদনশীল। আমরা তাদের নাম-পরিচয় নোট করে রেখেছি। উনারা আমাদের যে সমস্ত কথা বলেছেন, তা খুবই অপ্রীতিকর। খুবই সেনসিটিভ কথা যা রাজনৈতিক দলের প্রতি সরকারি কোনো মানুষ বলতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, ২০১২ সাল থেকে অনেক দল নিবন্ধন পেয়েছে, আমরা জানি তারা কীভাবে নিবন্ধন পেয়েছে। আমরা কোনো অবস্থাতেই ফ্যাসিস্ট সরকারের সঙ্গে আপস করিনি, আর সেই কারণেই আজও আমরা নিবন্ধন থেকে বঞ্চিত। সময় হলে আমরা ওই কর্মকর্তাদের নাম প্রকাশ করবো।

মৌলিক বাংলার সাধারণ সম্পাদক ছাদেক আহমেদ সজীব বলেন, বর্তমান সরকার এনসিপির নেতাকর্মীদের বগলে নিয়ে ঘুরছে। ভাবসাব দেখলে মনে হয়, তারা এখনই নেতা হয়ে গিয়েছে। আমাদের ওপর যারা অত্যাচার করছে, সেই জামায়াত বা বিএনপির লোকজনদের ক্ষেত্রে মনে হয় তারা ইতোমধ্যে নির্বাচিত হয়ে গিয়েছেন। বর্তমানে যারা রাজনীতি করছে তারা কেউই আগামী দিনের কথা ভাবছে না। তারা ভাবছে বর্তমানের কথা।

ইসি প্রথমে তদন্ত, পরে পুনর্তদন্ত, এখন আবার অধিকতর তদন্ত করছে। এতে আমাদের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। আমাদের অনেক নেতাকর্মী অন্য পেশার পাশাপাশি রাজনীতি করেন। বারবার মাঠ পরিদর্শনে ডেকে নেওয়ায় তাদের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এই তদন্ত আসলে রাজনৈতিক ‘ময়নাতদন্তের’ মতো।

তিনি অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা সহযোগিতার চেয়ে অসহযোগিতাই বেশি করেছেন। বিধিমালা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সব নথি জমা দেওয়ার পরও তারা আমাদের অফিসের মালিকের সম্পত্তির দলিল চাচ্ছেন, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অনৈতিক।

ছাদেক আহমেদ আরও বলেন, ইসি তাদের প্রক্রিয়াগুলো এমনভাবে করছে যেন একটি দলকে (এনসিপি) নিবন্ধন দিতে গিয়ে অন্য সব দলের নিবন্ধন স্থগিত রাখা হয়। এনসিপিকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে কমিশন তিন ধাপে তদন্ত চালাচ্ছে, যা সংবিধান ও ইসির নিজস্ব নীতিমালার লঙ্ঘন।

এদিকে বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টিও অধিকতর তদন্ত না করে প্রথম তদন্তের ভিত্তিতে নিবন্ধন দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। দলটির পক্ষ থেকে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করারও আহ্বান জানানো হয়েছে।

প্রাথমিক তদন্তে এই দুটি দলই টিকে ছিল। তবে ইসি এখন আরও নয়টি দলের সঙ্গে তাদেরও অধিকতর তদন্ত করছে। ইতিমধ্যে এনসিপিকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন, তবে তাদের নিবন্ধন ‘শাপলা প্রতীক’ জটিলতায় আটকে আছে।

ইসি বলছে, শাপলা প্রতীক কোনো দলকে দেওয়া যাবে না। অন্যদিকে এনসিপির দাবি, শাপলা প্রতীক দিতে কোনো আইনগত বা রাজনৈতিক বাধা নেই এবং তারা এই প্রতীক ছাড়া নিবন্ধন নেবে না।

বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৫২টি।