৪ আগস্ট নতুন সরকার গঠনের জন্য ড. ইউনূসে সঙ্গে আলোচনা হয়, ট্রাইব্যুনালে নাহিদ

- আপডেট সময় : ০৪:৪৫:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ১৭ জন পড়েছেন
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আসামিদের বিরুদ্ধে করা মামলায় ৪৭তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে ট্রাইব্যুনালে এ জবানবন্দি দেন নাহিদ ইসলাম।
এর আগে বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) আংশিক জবানবন্দিতে ২০১৮ সাল থেকে বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরেন নাহিদ ইসলাম। সেখানে তিনি গত বছরের ১৯ জুলাই পর্যন্ত ঘটনা তুলে ধরেন।
বৃহস্পতিবার আন্দোলনের সময় ডিবি ও ডিজিএফআইয়ের হাতে গুম ও নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন নাহিদ ইসলাম। এ ছাড়া ১৯ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের ঘটনার বিবরণও তুলে ধরেন।
সরকার পতনের ঘোষণার বিষয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, সমন্বয়ক ও অন্যান্য ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র সংগঠন যেমন, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির এবং বামপন্থী কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে সরকার পতনের এক দফা ঘোষণা করি। এক দফায় আমরা ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থার বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানাই। সরকার পতনের এক দফা দাবিতে দেশব্যাপী অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করি। ৪ আগস্ট শাহবাগে অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করি। এদিন ৬ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করি। সরকার কারফিউ ঘোষণা করে এবং দেশব্যাপী ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালায়। আমরা জানতে পারি যে, ৬ তারিখ মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ব্যর্থ করার উদ্দেশ্যে সরকার ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। আরও জানতে পারি যে, সরকার মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট বন্ধ করে দিবে, আমাদের হত্যা বা গুম করা হতে পারে। তাই আমরা আমাদের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি এক দিন এগিয়ে ৫ আগস্ট নির্ধারণ করি।
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘মার্চ টু ঢাকা‘ কর্মসূচি সফল করার উদ্দেশ্যে সমন্বয়কদের পক্ষে মাহফুজ আলম অন্যান্য ছাত্রসংগঠন এবং নাগরিক সমাজের সঙ্গে লিয়াজোঁ করছিলেন। পূর্ব প্রস্ততি হিসেবে আমরা নতুন সরকার গঠনের জন্য ড. ইউনুস স্যারের সঙ্গে আলোচনা করি। তাকে নতুন সরকার প্রধানের দায়িত্ব পালনের প্রস্তাব দেই।
৫ আগস্টের বিষয়ে তিনি বলেন, ৫ আগস্ট সারা দেশের মানুষ ঢাকায় আসতে থাকে। আমরা শাহবাগে অবস্থান গ্রহণের চেষ্টা করি। শহীদ মিনার ও চানখারপুল এলাকায় আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানো হয়। সেনাবাহিনী এক পর্যায়ে রাস্তা ছেড়ে দিলে আমরা শাহবাগে অবস্থান করি।
কিছুক্ষণের মধ্যে শাহবাগ জনসমুদ্রে পরিণত হয়। আমরা শুনতে পাই ঢাকার প্রবেশ মুখগুলো যেমন, যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা দিয়ে লাখ লাখ মানুষ ঢাকায় প্রবেশ করছে। শাহবাগ থেকে মিছিল নিয়ে আমরা গণভবনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই। পথিমধ্যে সংবাদ পাই যে, গণবিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে হেলিকপ্টারে করে পালিয়ে গেছেন। আরও শুনতে পাই যে, ছাত্র-জনতা গণভবনে প্রবেশ করেছে।
সন্ধ্যায় আমরা সংবাদ সম্মেলন করে অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার গঠনের এবং সব রাজবন্দিদের মুক্তির দাবি জানাই। আমরা কোনো ধরনের সেনা শাসন বা সেনা সমর্থিত শাসন মেনে নেবো না বলে ঘোষণা দেই- বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন নাহিদ ইসলাম।
এ মামলার অপর দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
এর আগে গত ১০ জুলাই এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে সাবেক আইজিপি মামুন নিজেকে ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হিসেবে যে আবেদন করেছেন, তা মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল।