ঢাকা ১২:২৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৮ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ছাড় দিতে রাজি নয় কোনো দল

ছাড় দিতে রাজি নয় কোনো দল

প্রতিবেদকের নাম :
  • আপডেট সময় : ০৪:২৩:৪৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ৭ জন পড়েছেন

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো আগের অবস্থানে আছে। বিএনপি বলছে, সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত বিষয়গুলো পরবর্তী নির্বাচিত সরকার বাস্তবায়ন করবে। এক্ষেত্রে বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ চায় জামায়াত।

আর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বলছে, গণপরিষদ গঠন করে নতুন সংবিধান তৈরি করতে হবে। ফলে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দলগুলোর বৈঠক শেষ হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে রোববার বিকালে আবারও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে এসব বিষয় উঠে আসে। সংলাপে বিভিন্ন দল আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, সনদ নিয়ে ঐকমত্য না হলে নির্বাচিত সরকার দুর্বল হবে। অথবা নির্বাচন নিয়েও আশঙ্কা আছে।

সভা শেষে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় দুটি বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সুপারিশের যেসব বিষয় সংবিধানসংশ্লিষ্ট নয়, সেসব বিষয় বাস্তবায়নের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ জারি করতে পারে।

যেসব বিষয় সরকারি বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আদেশ ও বিধি প্রণয়নের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব, সেগুলো অন্তর্বর্তী সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করতে পারে।

বিএনপি: সভা শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জুলাই সনদের সব সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনি ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করবে। এভাবে তারা জাতির কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।

তিনি বলেন, যে বা যারাই ম্যান্ডেট পাবে, পার্লামেন্টে যাবে, তারা এগুলো বাস্তবায়নের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবে। সংবিধান সংশোধনী সংক্রান্ত বিষয়গুলো এখন প্রতিশ্রুতি আকারে স্বাক্ষর থাকবে। সেই প্রতিশ্রুতি পরবর্তী সময়ে গঠিত জাতীয় সংসদে দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন হবে। এভাবে আমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। অধ্যাদেশ এবং নির্বাহী আদেশের মধ্য দিয়ে জুলাই সনদের এমন সব সুপারিশ বাস্তবায়ন করা যাবে, যেগুলো সংবিধানকে স্পর্শ করে না।

এ বিষয়ে লিখিত মতামত, মৌখিক মতামত সব সময় দেওয়া ছিল। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও একইরকম মতামত দেওয়া হয়েছে। বিএনপি যেগুলোয় নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে, বিএনপি এগুলো বাস্তবায়ন করবে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন বলেন, ২টি বিষয়ে আমরা নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছি। এগুলো ইশতেহারে উল্লেখ থাকবে। আমরা জনগণের ম্যান্ডেট পেলে সেভাবেই বাস্তবায়ন করব।

জামায়াত: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন জুলাই সনদের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, ‘কমিশনের পক্ষ থেকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পাঁচটি বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেখানে জামায়াতের একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আছে। আশা করি, এই পাঁচটি প্রস্তাবের মধ্যে আমরা কাছাকাছি আসতে পারব এবং জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি হবে। জুলাই সনদের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’

জামায়াতের দেওয়া প্রস্তাব প্রসঙ্গে সংলাপে অংশ নেওয়া প্রতিনিধিদলের সদস্য অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেন, ‘আমরা একটি বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ জারি করে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের কথা বলেছি। অর্থাৎ ঐকমত্য কমিশন যেসব বিষয়ে একমত পোষণ করেছে, এর মধ্যে যে বিষয়গুলো সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, সেগুলো একটি বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ জারি করে সংবিধানের উপরে প্রাধান্য দেওয়া। বাকি ক্ষেত্রে সংবিধান যেমন আছে, তেমনই থাকবে।

এনসিপি: জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, আমাদের গণপরিষদ নির্বাচন ও নতুন সংবিধানের দাবি কোনো জটিল বিষয় নয়, বরং এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার। যদি রাজনৈতিক দলগুলো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সামনে একটি গণপরিষদ নির্বাচন হবে, তাহলে ফেব্রুয়ারি নয়, ডিসেম্বরেই গণপরিষদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা সম্ভব। এ কারণে আমরা এটিকে কোনো জটিল সিদ্ধান্ত বলে মনে করি না। এটিকে কোনো কঠিন সিদ্ধান্ত বলে মনে করি না। এটি অবাস্তব কোনো কিছু নয়। শুধু রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ওপরই এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা যে কোনো সময় সম্ভব বলেই আমরা মনে করি। আখতার হোসেন বলেন, ঐকমত্য কমিশন আবার কনফার্ম করেছে জুলাই সনদের দুটি পার্ট হবে। একটি পার্ট হবে যেখানে জুলাই সনদে যে বিষয়গুলো নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছি, সে বিষয়গুলো সেখানে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া একটা আলাদা ডকুমেন্ট হবে।

ট্যাগ :

সংবাদটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ছাড় দিতে রাজি নয় কোনো দল

ছাড় দিতে রাজি নয় কোনো দল

আপডেট সময় : ০৪:২৩:৪৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো আগের অবস্থানে আছে। বিএনপি বলছে, সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত বিষয়গুলো পরবর্তী নির্বাচিত সরকার বাস্তবায়ন করবে। এক্ষেত্রে বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ চায় জামায়াত।

আর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বলছে, গণপরিষদ গঠন করে নতুন সংবিধান তৈরি করতে হবে। ফলে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দলগুলোর বৈঠক শেষ হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে রোববার বিকালে আবারও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে এসব বিষয় উঠে আসে। সংলাপে বিভিন্ন দল আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, সনদ নিয়ে ঐকমত্য না হলে নির্বাচিত সরকার দুর্বল হবে। অথবা নির্বাচন নিয়েও আশঙ্কা আছে।

সভা শেষে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় দুটি বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সুপারিশের যেসব বিষয় সংবিধানসংশ্লিষ্ট নয়, সেসব বিষয় বাস্তবায়নের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ জারি করতে পারে।

যেসব বিষয় সরকারি বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আদেশ ও বিধি প্রণয়নের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব, সেগুলো অন্তর্বর্তী সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করতে পারে।

বিএনপি: সভা শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জুলাই সনদের সব সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনি ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করবে। এভাবে তারা জাতির কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।

তিনি বলেন, যে বা যারাই ম্যান্ডেট পাবে, পার্লামেন্টে যাবে, তারা এগুলো বাস্তবায়নের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবে। সংবিধান সংশোধনী সংক্রান্ত বিষয়গুলো এখন প্রতিশ্রুতি আকারে স্বাক্ষর থাকবে। সেই প্রতিশ্রুতি পরবর্তী সময়ে গঠিত জাতীয় সংসদে দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন হবে। এভাবে আমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। অধ্যাদেশ এবং নির্বাহী আদেশের মধ্য দিয়ে জুলাই সনদের এমন সব সুপারিশ বাস্তবায়ন করা যাবে, যেগুলো সংবিধানকে স্পর্শ করে না।

এ বিষয়ে লিখিত মতামত, মৌখিক মতামত সব সময় দেওয়া ছিল। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও একইরকম মতামত দেওয়া হয়েছে। বিএনপি যেগুলোয় নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে, বিএনপি এগুলো বাস্তবায়ন করবে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন বলেন, ২টি বিষয়ে আমরা নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছি। এগুলো ইশতেহারে উল্লেখ থাকবে। আমরা জনগণের ম্যান্ডেট পেলে সেভাবেই বাস্তবায়ন করব।

জামায়াত: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন জুলাই সনদের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, ‘কমিশনের পক্ষ থেকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পাঁচটি বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেখানে জামায়াতের একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আছে। আশা করি, এই পাঁচটি প্রস্তাবের মধ্যে আমরা কাছাকাছি আসতে পারব এবং জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি হবে। জুলাই সনদের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’

জামায়াতের দেওয়া প্রস্তাব প্রসঙ্গে সংলাপে অংশ নেওয়া প্রতিনিধিদলের সদস্য অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেন, ‘আমরা একটি বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ জারি করে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের কথা বলেছি। অর্থাৎ ঐকমত্য কমিশন যেসব বিষয়ে একমত পোষণ করেছে, এর মধ্যে যে বিষয়গুলো সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, সেগুলো একটি বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ জারি করে সংবিধানের উপরে প্রাধান্য দেওয়া। বাকি ক্ষেত্রে সংবিধান যেমন আছে, তেমনই থাকবে।

এনসিপি: জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, আমাদের গণপরিষদ নির্বাচন ও নতুন সংবিধানের দাবি কোনো জটিল বিষয় নয়, বরং এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার। যদি রাজনৈতিক দলগুলো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সামনে একটি গণপরিষদ নির্বাচন হবে, তাহলে ফেব্রুয়ারি নয়, ডিসেম্বরেই গণপরিষদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা সম্ভব। এ কারণে আমরা এটিকে কোনো জটিল সিদ্ধান্ত বলে মনে করি না। এটিকে কোনো কঠিন সিদ্ধান্ত বলে মনে করি না। এটি অবাস্তব কোনো কিছু নয়। শুধু রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ওপরই এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা যে কোনো সময় সম্ভব বলেই আমরা মনে করি। আখতার হোসেন বলেন, ঐকমত্য কমিশন আবার কনফার্ম করেছে জুলাই সনদের দুটি পার্ট হবে। একটি পার্ট হবে যেখানে জুলাই সনদে যে বিষয়গুলো নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছি, সে বিষয়গুলো সেখানে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া একটা আলাদা ডকুমেন্ট হবে।