৪৭ দিন পর জনসম্মুখে জামায়াত আমির, মুখে ঝরল কৃতজ্ঞতা
৪৭ দিন পর জনসম্মুখে জামায়াত আমির, মুখে ঝরল কৃতজ্ঞতা

- আপডেট সময় : ০৪:২৩:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ৯ জন পড়েছেন
অসুস্থ হওয়ার দীর্ঘ ৪৭ দিন পর সুস্থ হয়ে জনসম্মুখে এসে কথা বলেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢাকা-১০ আসনের কাফরুল দক্ষিণ থানার উদ্যোগে আয়োজিত ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন তিনি।
এ সময় তিনি শুরুতেই মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সুস্থ হয়ে আবারও জনসম্মুখে এসে কথা বলার সুযোগ পাওয়ায়।
জামায়াত আমির বলেন, দীর্ঘ একমাসের বেশি সময় পর মিডিয়ার সামনে দাঁড়ানোর সক্ষমতা আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন। এজন্য মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা আদায় করছি।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আল্লাহ তৌফিক না দিলে আমি আজ এখানে এসে কথা বলতে পারতাম না। এই সময়টা আমার মনে হয়েছে জাতিকে কিছু বলার দায়িত্ব আমার। আমার দায়িত্ব অন্য কেউ পালন করার আর সুযোগ নেই। তাই আমি আল্লাহর দরবারে তৌফিক কামনা করেছিলাম—যেন অন্তত সেই কথাগুলো বলতে পারি, যা মানুষের কল্যাণের জন্য জরুরি। আল্লাহ সেই সুযোগ দিয়েছেন।
নিজের অসুস্থতা হয়ে পড়ার ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সমাবেশের দিন আমি যখন পড়ে যাই, তখন দেশের মানুষ টিভি স্ক্রিন কিংবা হাতে মোবাইলের মাধ্যমে তা দেখছিলেন। তাদের মধ্যে ইউনাইটেড হসপিটালের খ্যাতিমান হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মমিনুজ্জামানও ছিলেন। তিনি তখনই আশঙ্কা প্রকাশ করেন, আমার সমস্যাটা মস্তিষ্কজনিত নয়, বরং হৃদযন্ত্রে হতে পারে। পরবর্তীতে তার আহ্বানে আমি চিকিৎসা নিই।
ডা. শফিকুর রহমান জানান, তার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে ২২ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠিত হয়। তারা হৃদযন্ত্রে ব্লক শনাক্ত করেন এবং ঝুঁকি বিবেচনায় তাকে দেশের বাইরে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, চিকিৎসকরা সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক কিংবা আমেরিকার মতো দেশের নাম বলেছিলেন। আমি তাদের আন্তরিক পরামর্শের জন্য কৃতজ্ঞ। তবে আমি জিজ্ঞেস করলাম—আল্লাহ কি কেবল সেই দেশগুলোতেই আছেন?
চিকিৎসকরা বললেন, আল্লাহ সর্বত্র আছেন। আমি তখন বললাম, আল্লাহ যদি সেখানে সুস্থ করতে পারেন, তাহলে তিনি চাইলে আমার জন্মভূমি বাংলাদেশেও আমাকে সুস্থ করতে পারেন।
তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, সুস্থতা-অসুস্থতা কার হাতে—এক বাক্যে সবাই স্বীকার করেছেন, আল্লাহর হাতে। তাই আমি বিশ্বাস করি, আল্লাহই আমাকে আবার জনসম্মুখে দাঁড়ানোর শক্তি দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আল্লাহ তৌফিক না দিলে আমি আজ এখানে এসে কথা বলতে পারতাম না। এই সময়টা আমার মনে হয়েছে জাতিকে কিছু বলার দায়িত্ব আমার। আমার দায়িত্ব অন্য কেউ পালন করার আর সুযোগ নেই। তাই আমি আল্লাহর দরবারে তৌফিক কামনা করেছিলাম—যেন অন্তত সেই কথাগুলো বলতে পারি, যা মানুষের কল্যাণের জন্য জরুরি। আল্লাহ সেই সুযোগ দিয়েছেন।
এর আগে গত ১৯ জুলাই রাজধানীতে নিজ দলের মহাসমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন জামায়াত আমির। বক্তব্যের এক পর্যায়ে হঠাৎ মঞ্চে পড়ে গেলে উপস্থিত নেতাকর্মীরা তাকে ধরে বসান। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি আবার উঠে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিতে চাইলে আবারও পড়ে যান, পরে মঞ্চে বসেই বক্তব্য চালিয়ে যান। সমাবেশ শেষে দ্রুত তাকে ধানমণ্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে নেওয়া হয়।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর চিকিৎসকরা তার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করেন। হাসপাতাল সূত্র জানায়, ডা. শফিকুর রহমানের রক্তচাপ, গ্লুকোজ ও হৃদ্যন্ত্রের কার্যক্রম পুরোপুরি স্বাভাবিক ছিল। মস্তিষ্কে কোনো জটিলতাও ধরা পড়েনি। সতর্কতার অংশ হিসেবে তাকে সেদিন হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।
দীর্ঘ ৪৬ দিন পর আবার জনসম্মুখে ফিরে আসায় তার সুস্থতা নিয়ে দলের ভেতরে স্বস্তি ফিরেছে। জামায়াত নেতারা মনে করছেন, রাজনৈতিকভাবে চ্যালেঞ্জিং সময়ের মধ্যে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জনসম্মুখে দেখতে পাওয়া কর্মী-সমর্থকদের জন্যও একটি ইতিবাচক বার্তা।