ঢাকা ০৪:২৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দেশ কি আবার রাজনৈতিক সংকটের দিকে ধাবিত হচ্ছে?

প্রতিবেদকের নাম :
  • আপডেট সময় : ০৬:২০:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৫
  • / ১২৯ জন পড়েছেন
সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ বলেছেন, দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে নতুন করে রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কা উঁকি দিচ্ছে। একদিকে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে হামলা, অন্যদিকে গণ অধিকার পরিষদের নেতা নুরের ওপর সশস্ত্র আক্রমণ—এই দুই ঘটনায় রাজনীতিতে উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে। এ অবস্থায় আবারও আলোচনায় এসেছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, দোষারোপ আর দলীয় সংঘাতের প্রশ্ন। প্রধান উপদেষ্টার সক্রিয়তা ও রাজনৈতিক নেতাদের পরস্পরবিরোধী অবস্থান প্রশ্ন তুলছে—দেশ কি আবারও একটি অচলাবস্থার দিকে এগোচ্ছে?

রবিবার (৩১ আগস্ট) নিজের ইউটিউব চ্যানেল ‘ভয়েস বাংলা’তে তিনি এসব কথা বলেন।

মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ‘রাজধানীতে বর্তমানে একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। হঠাৎ করে জাতীয় পার্টিকে ঘিরে এত উত্তেজনার কারণ কী? সেখানে কেন হামলা হলো? আর সেই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় নুরের ওপর কেন হামলা হবে?—দুটি ঘটনাই অত্যন্ত নিন্দনীয় ও উদ্বেগজনক।’

তিনি বলেন, এসব ঘটনার পেছনে বিএনপি বা জামায়াতের সরাসরি কোনো সম্পৃক্ততা নেই। অথচ তারা তো বড় সংগঠন—চাইলেই জাতীয় পার্টির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারত কিংবা রাজনৈতিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারত।

বিএনপি বা জামায়াত তো এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় তাহলে অন্যরা এত বেশি সক্রিয় কেন?তিনি আরো বলেন, আজ প্রধান উপদেষ্টা তিনটি দল নিয়ে বৈঠকে বসবেন—কিন্তু কী ফলাফল হবে সেটা কেউ জানে না। এমনকি দেখা যায়, যখনই এমন বৈঠক হয় তখনই পরিস্থিতি ভালো নয় বলেই ধরে নিতে হয়। সর্বশেষ এক বৈঠকে চারটি রাজনৈতিক দলকে ডাকা হয়েছিল। ঠিক তখনই মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের ভেতর ঢুকে পড়ে এবং সৃষ্টি হয় এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি।

তখনও আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সে সময় মন্তব্য করেছিলেন, যদি প্রধান উপদেষ্টা নিয়মিত এমন বৈঠক করতেন, সপ্তাহে অন্তত একবার—তাহলে অনেক সমস্যা ধীরে ধীরে মীমাংসা করা যেত।মোস্তফা ফিরোজ বলেন, গত মে মাসে প্রধান উপদেষ্টা একবার ‘অভিমান’ করে জানিয়েছিলেন, তিনি দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চান। তখন সবাই তাকে বুঝিয়ে ঠেকিয়েছিল। এখন আবার কি তিনি অভিমান করবেন? আজ তিনি তিনটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসবেন বলে শোনা যাচ্ছে—কিন্তু আদৌ কোনো সমাধান আসবে কি না সেই বিষয়ে আমি কোনো ইতিবাচক আলামত দেখতে পাচ্ছি না।

বিএনপি যা বলছে, অন্যরা বলছে তার ঠিক উল্টো। আবার অন্যদের কথার বিরুদ্ধে কথা বলছে বিএনপি। এই পরস্পরবিরোধী অবস্থানের মাঝখানে প্রশ্ন জাগে—সমাধানটা কোথায়?তিনি বলেন, ‘দেশের কোথাও কি এখন কোনো নিয়ন্ত্রণ আছে? দেখুন—একদিকে বুয়েটের প্রকৌশলী, আরেক দিকে ডিপ্লোমা প্রকৌশলী, দুই পক্ষই রাস্তায়। কেউ অবরোধ দিচ্ছে, কেউ যমুনা ঘেরাও করছে। তখন বাধা দিতে গেলে পুলিশ হয়ে যাচ্ছে ভিলেন। এবারে আবার পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। কারণ রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারাই আক্রান্ত হচ্ছেন। অবশ্যই এ ধরনের হামলা নিন্দনীয়। কিন্তু কেউ যদি রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে জাতীয় পার্টির অফিসে হামলা চালায় সেটা কি কোনো দলের কাজ হতে পারে? জাতীয় পার্টি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত থাকলে তা সরকারকে জানানো উচিত, সচিবালয় ঘেরাও করুন, মন্ত্রীদের জবাবদিহির মুখে ফেলুন—এটাই তো রাজনৈতিক ভাষা।

তিনি মনে করেন,  দেশের এই অবস্থায় মানুষের মধ্যে একটা হতাশা তৈরি হচ্ছে। যেন কয়েক দিন পরই কেউ হয়তো বলবে, ‘শেখ হাসিনার সময়টা ভালো ছিল—তা-ও একটা চেইন ছিল, একটা গতি ছিল। নির্বাচন যত দেরি হচ্ছে ততই যেন রাজনৈতিক জটিলতা বাড়ছে। সবাই ক্ষমতায় যেতে চায়—জামায়াত, বিএনপি, এনসিপি, গণ অধিকার—সবাই। যেন একটা হ-য-ব-র-ল অবস্থা। পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। এই সংকট একেবারেই অপ্রত্যাশিত। বাকিটা নির্ধারণ করবে দেশবাসী—আপনারা।’

ট্যাগ :

সংবাদটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

দেশ কি আবার রাজনৈতিক সংকটের দিকে ধাবিত হচ্ছে?

আপডেট সময় : ০৬:২০:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৫
সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ বলেছেন, দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে নতুন করে রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কা উঁকি দিচ্ছে। একদিকে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে হামলা, অন্যদিকে গণ অধিকার পরিষদের নেতা নুরের ওপর সশস্ত্র আক্রমণ—এই দুই ঘটনায় রাজনীতিতে উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে। এ অবস্থায় আবারও আলোচনায় এসেছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, দোষারোপ আর দলীয় সংঘাতের প্রশ্ন। প্রধান উপদেষ্টার সক্রিয়তা ও রাজনৈতিক নেতাদের পরস্পরবিরোধী অবস্থান প্রশ্ন তুলছে—দেশ কি আবারও একটি অচলাবস্থার দিকে এগোচ্ছে?

রবিবার (৩১ আগস্ট) নিজের ইউটিউব চ্যানেল ‘ভয়েস বাংলা’তে তিনি এসব কথা বলেন।

মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ‘রাজধানীতে বর্তমানে একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। হঠাৎ করে জাতীয় পার্টিকে ঘিরে এত উত্তেজনার কারণ কী? সেখানে কেন হামলা হলো? আর সেই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় নুরের ওপর কেন হামলা হবে?—দুটি ঘটনাই অত্যন্ত নিন্দনীয় ও উদ্বেগজনক।’

তিনি বলেন, এসব ঘটনার পেছনে বিএনপি বা জামায়াতের সরাসরি কোনো সম্পৃক্ততা নেই। অথচ তারা তো বড় সংগঠন—চাইলেই জাতীয় পার্টির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারত কিংবা রাজনৈতিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারত।

বিএনপি বা জামায়াত তো এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় তাহলে অন্যরা এত বেশি সক্রিয় কেন?তিনি আরো বলেন, আজ প্রধান উপদেষ্টা তিনটি দল নিয়ে বৈঠকে বসবেন—কিন্তু কী ফলাফল হবে সেটা কেউ জানে না। এমনকি দেখা যায়, যখনই এমন বৈঠক হয় তখনই পরিস্থিতি ভালো নয় বলেই ধরে নিতে হয়। সর্বশেষ এক বৈঠকে চারটি রাজনৈতিক দলকে ডাকা হয়েছিল। ঠিক তখনই মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের ভেতর ঢুকে পড়ে এবং সৃষ্টি হয় এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি।

তখনও আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সে সময় মন্তব্য করেছিলেন, যদি প্রধান উপদেষ্টা নিয়মিত এমন বৈঠক করতেন, সপ্তাহে অন্তত একবার—তাহলে অনেক সমস্যা ধীরে ধীরে মীমাংসা করা যেত।মোস্তফা ফিরোজ বলেন, গত মে মাসে প্রধান উপদেষ্টা একবার ‘অভিমান’ করে জানিয়েছিলেন, তিনি দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চান। তখন সবাই তাকে বুঝিয়ে ঠেকিয়েছিল। এখন আবার কি তিনি অভিমান করবেন? আজ তিনি তিনটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসবেন বলে শোনা যাচ্ছে—কিন্তু আদৌ কোনো সমাধান আসবে কি না সেই বিষয়ে আমি কোনো ইতিবাচক আলামত দেখতে পাচ্ছি না।

বিএনপি যা বলছে, অন্যরা বলছে তার ঠিক উল্টো। আবার অন্যদের কথার বিরুদ্ধে কথা বলছে বিএনপি। এই পরস্পরবিরোধী অবস্থানের মাঝখানে প্রশ্ন জাগে—সমাধানটা কোথায়?তিনি বলেন, ‘দেশের কোথাও কি এখন কোনো নিয়ন্ত্রণ আছে? দেখুন—একদিকে বুয়েটের প্রকৌশলী, আরেক দিকে ডিপ্লোমা প্রকৌশলী, দুই পক্ষই রাস্তায়। কেউ অবরোধ দিচ্ছে, কেউ যমুনা ঘেরাও করছে। তখন বাধা দিতে গেলে পুলিশ হয়ে যাচ্ছে ভিলেন। এবারে আবার পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। কারণ রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারাই আক্রান্ত হচ্ছেন। অবশ্যই এ ধরনের হামলা নিন্দনীয়। কিন্তু কেউ যদি রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে জাতীয় পার্টির অফিসে হামলা চালায় সেটা কি কোনো দলের কাজ হতে পারে? জাতীয় পার্টি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত থাকলে তা সরকারকে জানানো উচিত, সচিবালয় ঘেরাও করুন, মন্ত্রীদের জবাবদিহির মুখে ফেলুন—এটাই তো রাজনৈতিক ভাষা।

তিনি মনে করেন,  দেশের এই অবস্থায় মানুষের মধ্যে একটা হতাশা তৈরি হচ্ছে। যেন কয়েক দিন পরই কেউ হয়তো বলবে, ‘শেখ হাসিনার সময়টা ভালো ছিল—তা-ও একটা চেইন ছিল, একটা গতি ছিল। নির্বাচন যত দেরি হচ্ছে ততই যেন রাজনৈতিক জটিলতা বাড়ছে। সবাই ক্ষমতায় যেতে চায়—জামায়াত, বিএনপি, এনসিপি, গণ অধিকার—সবাই। যেন একটা হ-য-ব-র-ল অবস্থা। পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। এই সংকট একেবারেই অপ্রত্যাশিত। বাকিটা নির্ধারণ করবে দেশবাসী—আপনারা।’