যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু অস্ত্র চুক্তি নিয়ে নতুন সুর পুতিনের
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু অস্ত্র চুক্তি নিয়ে নতুন সুর পুতিনের

- আপডেট সময় : ০৪:৪৯:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫
- / ৪ জন পড়েছেন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন পরমাণু অস্ত্র চুক্তির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
ইউক্রেন ইস্যু নিয়ে বৈঠকে কেন পরমাণু অস্ত্র প্রসঙ্গ?
পুতিন এখন ট্রাম্পের চাপের মুখে আছেন, যাতে তিন বছর ছয় মাস ধরে চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান হয়। তবে মস্কো বলছে, এটি একটি জটিল নিরাপত্তা সংকটের অংশ, যা শীতল যুদ্ধের পর থেকে পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক উত্তেজনা তৈরি করেছে।
ধারণা করা হচ্ছে, এই বৈঠকে নতুন পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তির প্রতি আগ্রহের কথা জানিয়ে পুতিন নিজেকে বৃহত্তর শান্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। যাতে ট্রাম্প রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা থেকে বিরত থাকেন।
এছাড়া এটি ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের প্রচেষ্টারও অংশ হতে পারে, বিশেষ করে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, যেখানে ক্রেমলিনের মতে, বিশাল অনাবিষ্কৃত সম্ভাবনা রয়েছে।
পুতিন কেন বারবার রাশিয়ার পারমাণবিক শক্তির কথা তুলছেন?
পুরো যুদ্ধজুড়ে পুতিন বারবার হুমকি দিয়েছেন যে, রাশিয়া পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে পারে এবং সতর্ক করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষ বিশ্বযুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
মৌখিক সতর্কবার্তা, সামরিক মহড়া এবং পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সীমা আরও কমিয়ে আনার মাধ্যমে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
রাশিয়ার হাতে বিশ্বের যে কোনো দেশের তুলনায় বেশি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে, যা এই খাতে তাকে এমন মর্যাদা দিয়েছে যা তার প্রচলিত সামরিক বা অর্থনৈতিক ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি। ফলে নিরাপত্তা ইস্যুতে পুতিন বিশ্বমঞ্চে ট্রাম্পের সমান অবস্থানে দাঁড়াতে পারেন।
রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কত পারমাণবিক অস্ত্র আছে?
আমেরিকান সায়েন্টিস্ট ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্রের মজুত ৪,৩০৯টি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ৩,৭০০টি। চীন অনেক পিছিয়ে, প্রায় ৬০০টি ওয়ারহেডের মালিক এই এশিয়ান জায়ান্ট।
বর্তমান যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া চুক্তি কী বলে?
২০১০ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ স্বাক্ষরিত নিউ স্টার্ট চুক্তি অনুযায়ী, দুই দেশই সর্বোচ্চ ১,৫৫০ কৌশলগত পারমাণবিক ওয়ারহেড এবং সর্বাধিক ৭০০টি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমারু বিমান মোতায়েন করতে পারবে।
চুক্তিটি ২০১১ সালে কার্যকর হয় এবং ২০২১ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার পর পাঁচ বছরের জন্য নবায়ন করা হয়। ২০২৩ সালে পুতিন রাশিয়ার অংশগ্রহণ স্থগিত করলেও মস্কো জানিয়েছে, তারা এখনো ওয়ারহেড সীমা মেনে চলবে।
চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, নবায়ন বা বিকল্প চুক্তি না হলে উভয় পক্ষই আগ্রাসী হয়ে উঠবে।
অন্য বিরোধপূর্ণ ইস্যুগুলো কী?
সম্প্রতি ট্রাম্প দাবি করেছেন, মেদভেদেভের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে দেওয়া হুমকিমূলক মন্তব্যের কারণে তিনি দুইটি মার্কিন পারমাণবিক সাবমেরিন রাশিয়ার কাছাকাছি পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। ক্রেমলিন ঘটনাটিকে গুরুত্ব না দিলেও সতর্ক করে বলেছে—পারমাণবিক বিষয়ে সবাইকে খুব, খুব সতর্ক থাকতে হবে।
এছাড়া স্বল্প ও মধ্যপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ইস্যুতেও নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ধরনের অস্ত্রেও পারমাণবিক ওয়ারহেড বহনের ক্ষমতা থাকে।
যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, ২০২৬ সাল থেকে জার্মানিতে এসএম-৬, টমাহকসহ নতুন হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করবে, যেগুলো আগে মূলত নৌযানে স্থাপন করা হতো।
রাশিয়াও এ মাসে ঘোষণা করেছে, তারা আর কোথায় মধ্য-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করবে সে বিষয়ে কোনো সীমাবদ্ধতা মানবে না।