ঢাকা ০৯:৩৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

বন্দর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মুকুলের বস্ত্রহরণ!

সোজাসাপটা রিপোর্ট
  • আপডেট সময় : ০১:৪২:৫৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫
  • / ২৬ জন পড়েছেন

নারায়ণগঞ্জের বন্দরে পাওয়ারপ্ল্যান্টের স্ক্রাব দখল করতে গিয়ে প্রতিপক্ষ সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতি বজলুর রহমান (ওরফে) ডন বজলুর অনুসারীদের মারধরের শিকার হয়েছেন মহানগর বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ও বন্দর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল। এসময় মুকুলকে মারতে মারতে তার জামাকাপড় খুলে দিগম্বর করে ফেলে তারা।
রোববার (২৯ জুন) নারায়ণগঞ্জের বন্দরের ২৭ নং ওয়ার্ডের হরিপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানায়, সকালে বন্দরের হরিপুর ৪১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও জেলা মটর চালক লীগের সভাপতি আলাউদ্দিনের পক্ষে ঠিকাদারি কাজ চালু করতে ঘটনাস্থলে যান মুকুল। আওয়ামী লীগের আমলে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্ক্র্যাবের ব্যাবসা করতেন এই আলাউদ্দিন।
জানা যায় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ২৭ নং ওয়ার্ড শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত হরিপুর পাওয়ার প্লান্টের মধ্যে স্ক্রাব নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত। স্ক্রাবের বৈদ্যুতিক তারের ভেতরে থাকা তামার মোটা অংশ বেশ মূল্যবান বলে জানা যায়। বৈদ্যুতিক তার থেকে কয়েকশ কেজি তামার মোটা অংশ সরিয়ে নিতে পারলে চোরাই মার্কেটে এই তামা উচ্চ দামে বিক্রি করা যায়।
এই স্ক্র্যাব নিয়েই মুকুলের সাথে সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতি বজলুর রহমান (ওরফে) ডন বজলুর বিরোধ তৈরি হয়। রোববার দুপুরে আলাউদ্দিনের পক্ষে পাওয়ার প্ল্যান্টে যান মুকুল। এসময় বাদানুবাদের এক পর্যায়ে মুকুলকে গণপিটুনি দেয় বজলুর অনুসারীরা। পরবর্তীতে মারধরের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে মুকুলকে উদ্ধার করে পুলিশ সদস্যরা।
এ বিষয়ে আহত আতাউর রহমান মুকুল বলেন, মদনপুরে হরিপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে শ্রমিক নিয়োগের বিষয়ে টেন্ডার (দরপত্র) দাখিলের শিডিউল ছিলো বলেই তিনি সেখানে গিয়েছিলেন, এসময় ডন বজলুর নেতৃত্বে অতর্কিতভাবে তার উপর এই হামলা চালানো হয়েছে। তিনি এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার দাবি করেন।
সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতি বজলুর রহমান বলেন, আমাদের কাছে তথ্য আসলো ছাত্র-জনতার ওপর হামলাকারী ও মোটর শ্রমিক লীগের নেতা আলাউদ্দিন এখানে (ঘটনাস্থলে) এসে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ঢুকবে। এটা জানার পর তিন এলাকার মানুষ জড়ো হয়। এরপর সেখানে একটি গাড়ি এসে থামে। তখন দেখা যায়, আলাউদ্দিনের মেয়ের জামাই ও নাতি জামাই এসেছে, কিন্তু আলাউদ্দিন আসিনি। গাড়ির সামনে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মুকুল বসে ছিলেন। তখন এলাকার মানুষ মুকুলকে প্রশ্ন করছে যে, সে এখানে কেন এসেছে? এবং তার সাথে আলাউদ্দিনের আত্মীয়রা কেন। জনগণকে তখন মুকুল বলেছে, আমি ভিতরে যাবো ও আলাউদ্দিনের কাজ শুরু করব। এই কথার এক পর্যায় বাক-বিত-া হয় ও ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। এই ধাক্কাধাক্কিতে তার (মুকুলের) পাঞ্জাবী-পায়জামা ছিড়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, আলাউদ্দিন বিগত সরকারের আমলে মানুষের ঘরবাড়িতে লুটপাট, হামলা ও বিএনপির নেতা কর্মীদের মারধর থেকে শুরু করে সকল রকমের নির্যাতন করেছে। ফ্যাসিস্টের আমলে এই নির্যাতনের কারণেই তিন গ্রামের মানুষ তার বিরুদ্ধে খুবই ক্ষিপ্ত। এই তিন গ্রামের মানুষের সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ আজ ঘটেছে।
এ বিষয়ে বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) লিয়াকত আলী বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি, বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন আছেন। কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে, বর্তমানে তিনি জামিনে রয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) তারেক আল মেহেদী জানান, হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মুকুলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এঘটনায় এখনও কোন মামলা দায়ের করা হয়নি, মামলা হলে আমরা পদক্ষেপ নেবো।
জানা যায়, আওয়ামী লীগের আমলে স্থানীয় এমপি সেলিম ওসমানের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল মুকুলের। বিএনপির রাজনীতি করলেও সেসময় বন্দরে ওসমান পরিবারের আদেশ, নির্দেশই পালন করতেন মুকুল। বিভিন্ন সময় সেলিম ওসমানের সাথে বিভিন্ন সভা সমাবেশে দেখা যেত মুকুলকে। সেলিম ওসমানের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর অভিযোগও রয়েছে মুকুলের বিরুদ্ধে।
২০২৩ সালে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করার অভিযোগে মুকুলকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পদ থেকে বহিষ্কার করে বিএনপি।

ট্যাগ :

সংবাদটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বন্দর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মুকুলের বস্ত্রহরণ!

আপডেট সময় : ০১:৪২:৫৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

নারায়ণগঞ্জের বন্দরে পাওয়ারপ্ল্যান্টের স্ক্রাব দখল করতে গিয়ে প্রতিপক্ষ সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতি বজলুর রহমান (ওরফে) ডন বজলুর অনুসারীদের মারধরের শিকার হয়েছেন মহানগর বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ও বন্দর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল। এসময় মুকুলকে মারতে মারতে তার জামাকাপড় খুলে দিগম্বর করে ফেলে তারা।
রোববার (২৯ জুন) নারায়ণগঞ্জের বন্দরের ২৭ নং ওয়ার্ডের হরিপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানায়, সকালে বন্দরের হরিপুর ৪১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও জেলা মটর চালক লীগের সভাপতি আলাউদ্দিনের পক্ষে ঠিকাদারি কাজ চালু করতে ঘটনাস্থলে যান মুকুল। আওয়ামী লীগের আমলে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্ক্র্যাবের ব্যাবসা করতেন এই আলাউদ্দিন।
জানা যায় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ২৭ নং ওয়ার্ড শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত হরিপুর পাওয়ার প্লান্টের মধ্যে স্ক্রাব নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত। স্ক্রাবের বৈদ্যুতিক তারের ভেতরে থাকা তামার মোটা অংশ বেশ মূল্যবান বলে জানা যায়। বৈদ্যুতিক তার থেকে কয়েকশ কেজি তামার মোটা অংশ সরিয়ে নিতে পারলে চোরাই মার্কেটে এই তামা উচ্চ দামে বিক্রি করা যায়।
এই স্ক্র্যাব নিয়েই মুকুলের সাথে সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতি বজলুর রহমান (ওরফে) ডন বজলুর বিরোধ তৈরি হয়। রোববার দুপুরে আলাউদ্দিনের পক্ষে পাওয়ার প্ল্যান্টে যান মুকুল। এসময় বাদানুবাদের এক পর্যায়ে মুকুলকে গণপিটুনি দেয় বজলুর অনুসারীরা। পরবর্তীতে মারধরের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে মুকুলকে উদ্ধার করে পুলিশ সদস্যরা।
এ বিষয়ে আহত আতাউর রহমান মুকুল বলেন, মদনপুরে হরিপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে শ্রমিক নিয়োগের বিষয়ে টেন্ডার (দরপত্র) দাখিলের শিডিউল ছিলো বলেই তিনি সেখানে গিয়েছিলেন, এসময় ডন বজলুর নেতৃত্বে অতর্কিতভাবে তার উপর এই হামলা চালানো হয়েছে। তিনি এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার দাবি করেন।
সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতি বজলুর রহমান বলেন, আমাদের কাছে তথ্য আসলো ছাত্র-জনতার ওপর হামলাকারী ও মোটর শ্রমিক লীগের নেতা আলাউদ্দিন এখানে (ঘটনাস্থলে) এসে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ঢুকবে। এটা জানার পর তিন এলাকার মানুষ জড়ো হয়। এরপর সেখানে একটি গাড়ি এসে থামে। তখন দেখা যায়, আলাউদ্দিনের মেয়ের জামাই ও নাতি জামাই এসেছে, কিন্তু আলাউদ্দিন আসিনি। গাড়ির সামনে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মুকুল বসে ছিলেন। তখন এলাকার মানুষ মুকুলকে প্রশ্ন করছে যে, সে এখানে কেন এসেছে? এবং তার সাথে আলাউদ্দিনের আত্মীয়রা কেন। জনগণকে তখন মুকুল বলেছে, আমি ভিতরে যাবো ও আলাউদ্দিনের কাজ শুরু করব। এই কথার এক পর্যায় বাক-বিত-া হয় ও ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। এই ধাক্কাধাক্কিতে তার (মুকুলের) পাঞ্জাবী-পায়জামা ছিড়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, আলাউদ্দিন বিগত সরকারের আমলে মানুষের ঘরবাড়িতে লুটপাট, হামলা ও বিএনপির নেতা কর্মীদের মারধর থেকে শুরু করে সকল রকমের নির্যাতন করেছে। ফ্যাসিস্টের আমলে এই নির্যাতনের কারণেই তিন গ্রামের মানুষ তার বিরুদ্ধে খুবই ক্ষিপ্ত। এই তিন গ্রামের মানুষের সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ আজ ঘটেছে।
এ বিষয়ে বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) লিয়াকত আলী বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি, বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন আছেন। কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে, বর্তমানে তিনি জামিনে রয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) তারেক আল মেহেদী জানান, হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মুকুলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এঘটনায় এখনও কোন মামলা দায়ের করা হয়নি, মামলা হলে আমরা পদক্ষেপ নেবো।
জানা যায়, আওয়ামী লীগের আমলে স্থানীয় এমপি সেলিম ওসমানের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল মুকুলের। বিএনপির রাজনীতি করলেও সেসময় বন্দরে ওসমান পরিবারের আদেশ, নির্দেশই পালন করতেন মুকুল। বিভিন্ন সময় সেলিম ওসমানের সাথে বিভিন্ন সভা সমাবেশে দেখা যেত মুকুলকে। সেলিম ওসমানের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর অভিযোগও রয়েছে মুকুলের বিরুদ্ধে।
২০২৩ সালে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করার অভিযোগে মুকুলকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পদ থেকে বহিষ্কার করে বিএনপি।