ঢাকা ০৫:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে ধ্বংসের পথে নবীগঞ্জ গার্লস স্কুলের শিক্ষাব্যবস্থা

কালাম পুত্র আশা বেপরোয়া!

 সাব্বির হোসেন
  • আপডেট সময় : ০৪:৫৭:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫
  • / ৩১৬ জন পড়েছেন

সাব্বির হোসেন
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আবুল কাউসার আশার বিরুদ্ধে ক্রমেই বাড়ছে অভিযোগের পরিমাণ। গত ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন রাজনীতির মাঠে, তবে তাঁর কর্মকা- ঘিরে দলীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ পর্যন্ত বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ।
দলীয় সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে আবুল কাউসার আশা নিজস্ব বলয় গড়ে তুলেছেন। একদিকে তিনি বিএনপির নেতৃস্থানীয় একজন হিসেবে পরিচিত হলেও, অন্যদিকে বিভিন্ন সময়ে তাঁর সঙ্গে আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠতা ও সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে বন্দরে আওয়ামী লীগের একাধিক ‘কর্মী ও প্রভাবশালীদের’ তিনি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে আসছেন বলে অভিযোগ উঠেছে বিএনপির অভ্যন্তরেই।
আওয়ামী ঘনিষ্ঠতার অভিযোগঃ
বিএনপির স্থানীয় নেতাদের অভিযোগ, আশার রাজনৈতিক ভূমিকা এখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে। তিনি একদিকে দলীয় সভা-সমাবেশে উপস্থিত থাকেন, আবার অন্যদিকে বন্দরের আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীবাহিনী আজমেরী ওসমান,খান মাসুদদের অনুসারীসহ তাঁদের ঘনিষ্ঠ একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক ও সামাজিক যোগাযোগ রাখছেন। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, এর মাধ্যমে তিনি দুইপক্ষকেই ব্যবহার করে নিজের ‘মাঠ ও স্বার্থ’ রক্ষা করছেন।
এ নিয়ে স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন, “দলের নীতি-আদর্শের পরিপন্থী কাজ করে কাউসার আশা বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা না নিলে এই বার্তা নেতাকর্মীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়বে যে, অপরাধ করেও পার পাওয়া যায়!
মাদক ও অপরাধ জগতের সঙ্গে সম্পৃক্ততাঃ
আরো ভয়ঙ্কর যে অভিযোগ উঠেছে তা হলো, বন্দরে আশার প্রভাবে তাঁর অনুসারীদের ছত্রচ্ছায়ায় চলছে মাদক ব্যবসা। স্থানীয় বাসিন্দা ও একাধিক সূত্রের দাবি, তাঁর অনুসারীদের নেতৃত্বেই বন্দরে গড়ে উঠেছে কয়েকটি মাদক স্পট। বিশেষ করে নবীগঞ্জ, কলাবাগান, ইসলামবাগ, মদনপুর এলাকায় নিয়মিতই মাদক সরবরাহ ও বেচাকেনা চলছে।
র‌্যাব ও পুলিশের অভিযানে একাধিকবার আটক হয়েছে তাঁর অনুসারী হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিরা। এদের মধ্যে কয়েকজন বর্তমানে জামিনে মুক্ত হয়ে আবারো পুরনো কাজে ফিরে গেছেন বলে জানা যায়।
সন্ত্রাসী কর্মকা- ও দখলবাজিঃ
শুধু মাদক নয়, দখলবাজি ও চাঁদাবাজির অভিযোগেও নাম জড়িয়েছে এই সাবেক কাউন্সিলরের। বন্দরের একাধিক এলাকায় বিভিন্ন অবৈধ স্ট্যান্ড সহ নবীগঞ্জ ঘাট ও বন্দর ঘাট থেকে চাঁদা উঠানোর অভিযোগও রয়েছে। যেগুলো পরিচালিত হয় তাঁর আস্থাভাজনদের মাধ্যমে। ঘাট ও আশেপাশের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানাযায়, মাসিক হারে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দিতে হয় ‘আশার লোকদের’।
তাছাড়া, স্থানীয় কিছু নির্মাণ প্রকল্পে তাঁর প্রভাব খাটিয়ে ঠিকাদারি কাজের ভাগ নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগে ক্ষুব্ধ স্থানীয় ব্যবসায়ী মহল, তবে নিরাপত্তার কারণে প্রকাশ্যে কেউ কথা বলছেন না।
রাজনৈতিক প্রভাব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেঃ
গত ৩১ শে মে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নবীগঞ্জ স্কুলের সকারী প্রধান শিক্ষক ও অধ্যাক্ষকে সাময়িক বহিস্কার ও তাঁদের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন আবুল কাউসার আশার স্ত্রী স্কুল কমিটির সভাপতি ইফফাত আরা ও কমিটির সদস্য ফেরদোস ওয়াহিদ সুমন। এ ঘটনায় স্কুলের অভিবাবক শিক্ষার্থীদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ ঘটনায় এডহক কমিটির সভাপতি ইফফাতারা ও সদস্য ওয়াহিদ সুমনকে একাধিকবার ফোনে না পেয়ে আবুল কাউসার আশাকে ফোন করলে তিনি বিষয়টি দায়সারাভাবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপর চাপিয়ে দেন।
পরবর্তিতে এ বিষয়ে জানতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসফাকুর রহমানকে মুঠোফোন করলে তিনি জানায়, তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার ব্যাপারটি আমি জেনেছি তবে বহিস্কারের বিষয়ে আমি তেমন ক্লিয়ার ভাবে কিছু বলতে পারছিনা। তবে বিষয়টি নিয়ে আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি।
তাঁর এমন বক্তব্যে বিষয়টি ক্লিয়ার না হওয়ায় পরে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিয়াকে কল করলে তিনি জানায়, এডহক কমিটির কাওকে সরাসরি সভাপতি বহিষ্কার করতে পারবে কিনা বা করা যায় কিনা এটা আসলে আমার জানায় নাই তবে আমি খোঁজ নিচ্ছি নিয়ে আপনাকে জানাবো।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসা না ব্যক্তিগত ক্ষমতার খেলা?
তবে আশার অনুসারীরা এসব অভিযোগকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে দেখছেন। তাঁদের ভাষ্যমতে, “আশা সাহেব মাঠে সক্রিয় বলেই তাঁকে হেয় করার জন্য এইসব অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বন্দর এলাকায় তাঁর জনপ্রিয়তা দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ে এসব অপবাদ ছড়ানো হচ্ছে।”
অন্যদিকে স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “একজন রাজনীতিবিদের কাজ হলো জনসেবা, দলের আদর্শকে অনুসরণ করে সংগঠনকে শক্তিশালী করা। কিন্তু আবুল কাউসার আশা সেই জায়গা থেকে অনেকটাই সরে এসেছেন। তাঁর কর্মকা- এখন ‘রাজনৈতিক সুবিধাবাদিতার’ উদাহরণ হয়ে উঠছে।”
গত ৬ সেপ্টম্বর বন্দরে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইসুফ খান টিপুকে মারধরের ঘটনায় তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিলো। সেই ঘটানাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন আবু কাউসার আশা।
সর্বশেষ ২১ জুন রাতে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে মাত্র আড়াই ঘন্টার ব্যবধানে ২টি খুন হওয়ার পেছনে আশার অনুসারীদের নাম উঠেছে। স্থানীয় অনেকেই বলছে সাবেক কাউন্সিলর হান্নান ও আবুল কাউসার আশার এই দুই পক্ষের ক্ষমতার দাপট প্রদর্শন করতে গিয়ে বলি হলো দুইটি প্রাণ।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ কেউ এই বিষয়ে অবগত থাকলেও, এখনো পর্যন্ত কাউসার আশার বিরুদ্ধে প্রকাশ্য কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির এক সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “আমরা কেন্দ্রকে বিষয়টি জানিয়েছি। তিনি যে ধরনের কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়েছেন, তা দুঃখজনক। শিগগিরই তাঁকে দলীয়ভাবে শোকজ করার প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।”
এদিকে রাজনৈতিক বোদ্ধারা বলছেন,এই ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়লে দলীয় পরিচয় আর রক্ষা করতে পারবে না । কারণ, দলের ভাবমূর্তি ও জনসমর্থনের উপর এইসব নেতার কার্যকলাপ নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিএনপি নেতা আবুল কাউসার আশার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে তা শুধু ব্যক্তি নয়, গোটা দলের ভাবমূর্তির ওপরও আঘাত হানছে। যদি সত্যিই তিনি দলের আদর্শচ্যুত হয়ে অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়েন, তবে তা দলের জন্য আত্মঘাতী হয়ে উঠবে। দলীয়ভাবে দ্রুত তদন্ত ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া না হলে, দলীয় শৃঙ্খলা ও জনসমর্থন উভয়ই বিপন্ন হতে পারে।
সাধারণ মানুষের মধ্যেও এই নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। বন্দরের বাসিন্দাদের ভাষ্য অনুযায়ী, “এক সময় জনপ্রতিনিধি ছিলেন, এখন তাঁর অনুসারীরাই এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। কেউ প্রতিবাদ করলে হামলা-মামলা করা হয়।”
নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকা এক সময় রাজনীতির জন্য পরিচিত হলেও, বর্তমানে এটি অপরাধ, দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও মাদকের জন্য বেশি আলোচিত হচ্ছে। আর এর পেছনে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা কাজ করছে এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা।

ট্যাগ :

সংবাদটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে ধ্বংসের পথে নবীগঞ্জ গার্লস স্কুলের শিক্ষাব্যবস্থা

কালাম পুত্র আশা বেপরোয়া!

আপডেট সময় : ০৪:৫৭:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

সাব্বির হোসেন
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আবুল কাউসার আশার বিরুদ্ধে ক্রমেই বাড়ছে অভিযোগের পরিমাণ। গত ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন রাজনীতির মাঠে, তবে তাঁর কর্মকা- ঘিরে দলীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ পর্যন্ত বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ।
দলীয় সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে আবুল কাউসার আশা নিজস্ব বলয় গড়ে তুলেছেন। একদিকে তিনি বিএনপির নেতৃস্থানীয় একজন হিসেবে পরিচিত হলেও, অন্যদিকে বিভিন্ন সময়ে তাঁর সঙ্গে আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠতা ও সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে বন্দরে আওয়ামী লীগের একাধিক ‘কর্মী ও প্রভাবশালীদের’ তিনি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে আসছেন বলে অভিযোগ উঠেছে বিএনপির অভ্যন্তরেই।
আওয়ামী ঘনিষ্ঠতার অভিযোগঃ
বিএনপির স্থানীয় নেতাদের অভিযোগ, আশার রাজনৈতিক ভূমিকা এখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে। তিনি একদিকে দলীয় সভা-সমাবেশে উপস্থিত থাকেন, আবার অন্যদিকে বন্দরের আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীবাহিনী আজমেরী ওসমান,খান মাসুদদের অনুসারীসহ তাঁদের ঘনিষ্ঠ একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক ও সামাজিক যোগাযোগ রাখছেন। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, এর মাধ্যমে তিনি দুইপক্ষকেই ব্যবহার করে নিজের ‘মাঠ ও স্বার্থ’ রক্ষা করছেন।
এ নিয়ে স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন, “দলের নীতি-আদর্শের পরিপন্থী কাজ করে কাউসার আশা বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা না নিলে এই বার্তা নেতাকর্মীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়বে যে, অপরাধ করেও পার পাওয়া যায়!
মাদক ও অপরাধ জগতের সঙ্গে সম্পৃক্ততাঃ
আরো ভয়ঙ্কর যে অভিযোগ উঠেছে তা হলো, বন্দরে আশার প্রভাবে তাঁর অনুসারীদের ছত্রচ্ছায়ায় চলছে মাদক ব্যবসা। স্থানীয় বাসিন্দা ও একাধিক সূত্রের দাবি, তাঁর অনুসারীদের নেতৃত্বেই বন্দরে গড়ে উঠেছে কয়েকটি মাদক স্পট। বিশেষ করে নবীগঞ্জ, কলাবাগান, ইসলামবাগ, মদনপুর এলাকায় নিয়মিতই মাদক সরবরাহ ও বেচাকেনা চলছে।
র‌্যাব ও পুলিশের অভিযানে একাধিকবার আটক হয়েছে তাঁর অনুসারী হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিরা। এদের মধ্যে কয়েকজন বর্তমানে জামিনে মুক্ত হয়ে আবারো পুরনো কাজে ফিরে গেছেন বলে জানা যায়।
সন্ত্রাসী কর্মকা- ও দখলবাজিঃ
শুধু মাদক নয়, দখলবাজি ও চাঁদাবাজির অভিযোগেও নাম জড়িয়েছে এই সাবেক কাউন্সিলরের। বন্দরের একাধিক এলাকায় বিভিন্ন অবৈধ স্ট্যান্ড সহ নবীগঞ্জ ঘাট ও বন্দর ঘাট থেকে চাঁদা উঠানোর অভিযোগও রয়েছে। যেগুলো পরিচালিত হয় তাঁর আস্থাভাজনদের মাধ্যমে। ঘাট ও আশেপাশের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানাযায়, মাসিক হারে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দিতে হয় ‘আশার লোকদের’।
তাছাড়া, স্থানীয় কিছু নির্মাণ প্রকল্পে তাঁর প্রভাব খাটিয়ে ঠিকাদারি কাজের ভাগ নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগে ক্ষুব্ধ স্থানীয় ব্যবসায়ী মহল, তবে নিরাপত্তার কারণে প্রকাশ্যে কেউ কথা বলছেন না।
রাজনৈতিক প্রভাব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেঃ
গত ৩১ শে মে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নবীগঞ্জ স্কুলের সকারী প্রধান শিক্ষক ও অধ্যাক্ষকে সাময়িক বহিস্কার ও তাঁদের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন আবুল কাউসার আশার স্ত্রী স্কুল কমিটির সভাপতি ইফফাত আরা ও কমিটির সদস্য ফেরদোস ওয়াহিদ সুমন। এ ঘটনায় স্কুলের অভিবাবক শিক্ষার্থীদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ ঘটনায় এডহক কমিটির সভাপতি ইফফাতারা ও সদস্য ওয়াহিদ সুমনকে একাধিকবার ফোনে না পেয়ে আবুল কাউসার আশাকে ফোন করলে তিনি বিষয়টি দায়সারাভাবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপর চাপিয়ে দেন।
পরবর্তিতে এ বিষয়ে জানতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসফাকুর রহমানকে মুঠোফোন করলে তিনি জানায়, তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার ব্যাপারটি আমি জেনেছি তবে বহিস্কারের বিষয়ে আমি তেমন ক্লিয়ার ভাবে কিছু বলতে পারছিনা। তবে বিষয়টি নিয়ে আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি।
তাঁর এমন বক্তব্যে বিষয়টি ক্লিয়ার না হওয়ায় পরে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিয়াকে কল করলে তিনি জানায়, এডহক কমিটির কাওকে সরাসরি সভাপতি বহিষ্কার করতে পারবে কিনা বা করা যায় কিনা এটা আসলে আমার জানায় নাই তবে আমি খোঁজ নিচ্ছি নিয়ে আপনাকে জানাবো।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসা না ব্যক্তিগত ক্ষমতার খেলা?
তবে আশার অনুসারীরা এসব অভিযোগকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে দেখছেন। তাঁদের ভাষ্যমতে, “আশা সাহেব মাঠে সক্রিয় বলেই তাঁকে হেয় করার জন্য এইসব অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বন্দর এলাকায় তাঁর জনপ্রিয়তা দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ে এসব অপবাদ ছড়ানো হচ্ছে।”
অন্যদিকে স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “একজন রাজনীতিবিদের কাজ হলো জনসেবা, দলের আদর্শকে অনুসরণ করে সংগঠনকে শক্তিশালী করা। কিন্তু আবুল কাউসার আশা সেই জায়গা থেকে অনেকটাই সরে এসেছেন। তাঁর কর্মকা- এখন ‘রাজনৈতিক সুবিধাবাদিতার’ উদাহরণ হয়ে উঠছে।”
গত ৬ সেপ্টম্বর বন্দরে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইসুফ খান টিপুকে মারধরের ঘটনায় তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিলো। সেই ঘটানাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন আবু কাউসার আশা।
সর্বশেষ ২১ জুন রাতে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে মাত্র আড়াই ঘন্টার ব্যবধানে ২টি খুন হওয়ার পেছনে আশার অনুসারীদের নাম উঠেছে। স্থানীয় অনেকেই বলছে সাবেক কাউন্সিলর হান্নান ও আবুল কাউসার আশার এই দুই পক্ষের ক্ষমতার দাপট প্রদর্শন করতে গিয়ে বলি হলো দুইটি প্রাণ।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ কেউ এই বিষয়ে অবগত থাকলেও, এখনো পর্যন্ত কাউসার আশার বিরুদ্ধে প্রকাশ্য কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির এক সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “আমরা কেন্দ্রকে বিষয়টি জানিয়েছি। তিনি যে ধরনের কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়েছেন, তা দুঃখজনক। শিগগিরই তাঁকে দলীয়ভাবে শোকজ করার প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।”
এদিকে রাজনৈতিক বোদ্ধারা বলছেন,এই ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়লে দলীয় পরিচয় আর রক্ষা করতে পারবে না । কারণ, দলের ভাবমূর্তি ও জনসমর্থনের উপর এইসব নেতার কার্যকলাপ নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিএনপি নেতা আবুল কাউসার আশার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে তা শুধু ব্যক্তি নয়, গোটা দলের ভাবমূর্তির ওপরও আঘাত হানছে। যদি সত্যিই তিনি দলের আদর্শচ্যুত হয়ে অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়েন, তবে তা দলের জন্য আত্মঘাতী হয়ে উঠবে। দলীয়ভাবে দ্রুত তদন্ত ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া না হলে, দলীয় শৃঙ্খলা ও জনসমর্থন উভয়ই বিপন্ন হতে পারে।
সাধারণ মানুষের মধ্যেও এই নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। বন্দরের বাসিন্দাদের ভাষ্য অনুযায়ী, “এক সময় জনপ্রতিনিধি ছিলেন, এখন তাঁর অনুসারীরাই এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। কেউ প্রতিবাদ করলে হামলা-মামলা করা হয়।”
নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকা এক সময় রাজনীতির জন্য পরিচিত হলেও, বর্তমানে এটি অপরাধ, দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও মাদকের জন্য বেশি আলোচিত হচ্ছে। আর এর পেছনে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা কাজ করছে এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা।