নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সাবেক এমপিরা কে কোথায়?

- আপডেট সময় : ০৪:১২:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫
- / ৬৮ জন পড়েছেন
নারায়ণগঞ্জ একসময় বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে দেশব্যাপী পরিচিত ছিল। ভোটের রাজনীতিতে নব্বইয়ের দশক থেকেই নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি সংসদীয় আসনে বিএনপির ফলাফল ছিল ঈর্ষণীয়। তবে ২০০৯ সালের পর থেকেই এ জেলায় বিএনপির রাজনীতি পাল্টে যেতে শুরু করে। বিএনপির একসময়ের দোর্দ- প্রতাপশালী এমপিদের বেশিরভাগই বিগত ১৬ বছরে রাজনীতি থেকে দূরে চলে গেছেন।
নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের বিএনপির তিনবারের এমপি ছিলেল সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মতিন চৌধুরী। বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে আসনটি থেকে নির্বাচিত হন মতিন চৌধুরী। ২০০৮ সালে এ আসনটিতে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের কাছে পরাজিত হন কাজী মনিরুজ্জামান মনির। পরবর্তীতে তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনে আসনটি দখলে রাখে আওয়ামী লীগ। ২০১২ সালে আবদুল মতিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর এ আসনে বর্তমানে বিএনপির প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ হিসেবে সামনে এসেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু। এছাড়াও আলোচনায় আছেন ২০০৮ সালে নির্বাচনে অংশ নেয়া কাজী মনিরুজ্জামান মনিরও।
নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির মনোনয়নে তিনবার এমপি নির্বাচিত হন আতাউর রহমান খান আঙ্গুর। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে এ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে এমপি নির্বাচুত হন তিনি। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন পাননি আঙ্গুর। তার বিরুদ্ধে এক এগারো সরকারের আমলে সংস্কারপন্থী নেতা হিসেবে অভিযোগ রয়েছে।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন আঙ্গুর। দীর্ঘদিন যাবৎ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপি আন্দোলন সংগ্রাম করে গেলেও মাঠে ছিলেননা আঙ্গুর। ২০২৩ সাল থেকে পুনরায় ঢাকার বিভিন্ন কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদেী নিয়ে হাজির হতে দেখা গেছে আঙ্গুরকে। তবে নারায়ণগঞ্জে এবং বিশেষত আড়াইহাজারের রাজনীতিতে আঙ্গুর কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছেন। আন্দোলনে মাঠে না থাকা ও নিষ্ক্রিয় থাকায় নারায়ণগঞ্জ-২ আসন কেন্দ্রীক একাধিক নেতার আবির্ভাব ঘটেছে। বর্তমানে এই এলাকার নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ। বিগত সময়ে আন্দোলন সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা গেছে আজাদকে। এছাড়াও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমনও এ আসন থেকে বিএনপির নেতৃত্ব দিতে চান।
নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনে বিএনপির সাবেক এমপি ছিলেন রেজাউল করিম। তিনি এ আসনটি থেকে টানা চারবার ১৯৯১, ১৯৯৬, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে এমপি নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন পাননি রেজাউল করিম। তার বিরুদ্ধে সংস্কারপন্থী হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
২০০৩ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন রেজাউল করিম। সেসময় নারায়ণগঞ্জ বিএনপির রাজনীতিতে সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা হিসেবে ধরা হত রেজাউল করিমকে। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে রাজনীতি থেকে দূরে চলে যান রেজাউল করিম।
বিগত ১৬ বছর নারায়ণগঞ্জে বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় দেখা যায়নি রেজাউল করিমকে। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে কোণঠাসা অবস্থায় আছেন তিনি। তবে পাঁচ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সক্রিয় হতে শুরু করেছেন তিনি। নারায়ণগঞ্জে বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন তিনি। সর্বশেষ ৩১ দফা দাবীতে আয়োজিত নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কর্মশালায়ও দেখা গেছে রেজাউল করিমকে। এছাড়াও এ আসনে বিএনপির নেতৃত্বে আলোচনায় আছেন সোনারগা থানা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান। বিগত ১৬ বছর যাবৎ রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখা গেছে মান্নানের।
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে ২০০১ সালে বিএনপির মনোনয়নে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী শামীম ওসমানকে বিপুল ভোটে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন। তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সদ্য সাবেক সভাপতি। ২০২২ সালে সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির পুনর্জাগরণ ঘটলে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নেতৃত্বে আসেন গিয়াসউদ্দিন। ২০২৪ সালে ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থান পর্যন্ত ঢাকায় ও নারায়ণগঞ্জে বিএনপির কর্মসূচি গুলোতে গিয়াসউদ্দিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
আসনটিতে আগামী নির্বাচনে আলোচনায় আছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মামুন মাহমুদ। এছাড়াও ২০০৯ সালের নির্বাচনে আসনটির ধানের শীষের প্রার্থী শাহ্ আলমও সক্রিয় আছেন। এদিকে ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক কেন্দ্রীক আন্দোলনে গিয়াসউদ্দিনের ব্যাপক অবদান থাকলেও পাঁচ আগষ্ট পরবর্তী সময়ে নানান বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে তাকে ঘিরে। বিতর্কের পর জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করে দেয় বিএনপি। তবে আসন্ন নির্বাচন আসনটিতে মনোনয়নের ক্ষেত্রে আলোচনায় আছেব এই সাবেক এমপি।
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়নে তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন আবুল কালাম। তিনি নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সভাপতি হিসেবেও দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শুরু দিকে আন্দোলন সংগ্রামে বেশ সক্রিয় ছিলেন কালাম। রাজনৈতিক কারণে জেলেও যেতে হয়েছে তাকে। বর্তমানে শারিরীক অসুস্থতার কারণে রাজনীতি থেকে কিছুটা দূরে আছেন আবুল কালাম তবে নির্বাচন ঘনিয়ে এলে মাঠে দেখা যেতে পারে তাকে।
এছাড়াও এ আসনে বিএনপির নেতৃত্বে আলোচনায় আছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। সাখাওয়াত ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ এ আসনের নেতৃত্বে আলোচনায় আছেন।