ঢাকা ১১:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
‘আড়ালেই থাকতে চাই, ক্যামেরাম্যান খুঁজে বের করে’ অদ্ভূত কারণে উইম্বলডন স্থগিত রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরিতে সুখবর পেলেন মান্ধানা গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করে শহীদদের ঋণ পরিশোধের এখনই সময়: তারেক রহমান পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে প্রাথমিকভাবে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে এনবিআরের আরও ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে সিদ্ধান্ত বুধবার: নৌ উপদেষ্টা চট্টগ্রামের সাবেক ডিআইজিসহ আরও তিন পুলিশ কর্মকর্তা বরখাস্ত আ.লীগ নিষিদ্ধ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে আমরা হতাশ: নুর মুজিববাদী সংবিধান ফেলে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে: আখতার হোসেন
জামায়াতের আনোয়ার মোল্লাও মাঠে

বিএনপির মনোনয়ন যুদ্ধে উত্তপ্ত নারায়ণগঞ্জ-১

সোজাসাপটা রিপোর্ট
  • আপডেট সময় : ০৪:৪২:১৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫
  • / ৪৬ জন পড়েছেন

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে বিএনপির অভ্যন্তরীণ মনোনয়ন প্রতিযোগিতা দিন দিন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। ইতোমধ্যে মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির দুই নেতা—একদিকে ক্লিন ইমেজের রাজনীতিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক বিজিএমইএ সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির, অন্যদিকে দীর্ঘদিনের কর্মীবান্ধব নেতা মুস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া দিপু। এদিকে পেছনে নেই জামায়াতে ইসলামীর আনোয়ার হোসেন মোল্লা—নিজস্ব কৌশলে ভোটের মাঠে শক্ত অবস্থান তৈরির চেষ্টায় আছেন তিনিও।
বিএনপির নেতা কাজী মনিরুজ্জামান মনির দলীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকলেও তৃণমূল বিএনপির বড় অংশ তার পক্ষেই রয়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় নেতারা। তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, ব্যবসায়িক দক্ষতা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় তাকে এলাকায় আলাদা মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। সম্প্রতি কাঞ্চন পৌরসভা মাঠে বিএনপির আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিয়ে তিনি তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফার বাস্তবায়নে জনগণের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আহ্বান জানান। মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ভূমিকা এবং অতীত আন্দোলনে সক্রিয়তা তাকে রূপগঞ্জ বিএনপির বড় অংশের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে।
অন্যদিকে, মুস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া দিপু মাঠে বরাবরের মতো সক্রিয়। দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচি, পাড়ায় পাড়ায় গণসংযোগ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা—সবমিলিয়ে তিনি রূপগঞ্জের তরুণ ও মধ্যবিত্ত ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা গড়েছেন। পূর্বাচলের রাজউক মাঠে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, “দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা বাস্তবায়ন করতে হবে। বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশই শহীদদের রক্তের প্রকৃত মর্যাদা দিতে পারে।”
তিনি একজন কর্মীবান্ধব নেতা হিসেবে জনপ্রিয়। নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এবং দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক দক্ষতায় তিনি ধীরে ধীরে শক্ত ঘাঁটি গড়ে তুলেছেন। রূপগঞ্জসহ পূর্বাচল এলাকাজুড়ে তিনি দলীয় কর্মসূচিতে সক্রিয় থাকায় তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে।
এই দুই নেতার পাল্লা সমান ভারী হলেও বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের কয়েকটি সূত্র জানায়, দলীয় হাইকমান্ড এখনো কোনো প্রার্থীকে ‘সবুজ সংকেত’ দেয়নি। তবে রূপগঞ্জের রাজনীতিতে বিভক্তি ঠেকিয়ে দলীয়ভাবে একজন শক্ত প্রার্থীকে সামনে আনাই হবে বিএনপির মূল কৌশল।
বিএনপির অভ্যন্তরীণ প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফাঁকে মাঠে জায়গা করে নিচ্ছেন জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী আনোয়ার হোসেন মোল্লা। জামায়াতে ইসলামী’র পক্ষ থেকে আনোয়ার হোসেন মোল্লা নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন একাধিক কৌশল নিয়ে। সম্প্রতি তারাব পৌরসভার খাদুন এলাকায় ঈদ উপহার বিতরণের মাধ্যমে তিনি গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মধ্যে রাজনৈতিক বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন। এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন জেলা জামায়াতের আমীর মমিনুল হক সরকারসহ জামায়াতের শীর্ষ নেতারা। এ সময় বক্তারা বলেন, “জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় এলে কোরআনের আলোকে দেশে ন্যায়বিচার ও জনকল্যাণের সমাজ গড়ে উঠবে।” তিনি ইতোমধ্যে তারাব পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় সামাজিক কর্মকা-ের মাধ্যমে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। ঈদের আগে ৫ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় ২০০ পরিবারের মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরণ করেছেন তিনি। ঈদুল আযহায় দিয়েছেন গরুর মাংস। অন্যদিকে নিয়মিত তিনি নিয়মিত ব্যস্ত রয়েছেন সভা-সমাবেশ, উঠান বৈঠক, প্রস্তুতি সভা সহ নানা কর্মসূচি নিয়ে।
ভোটের রাজনীতিতে জামায়াতের এমন উপস্থিতি বিএনপির জন্য আশীর্বাদ না হুমকি—তা নিয়ে চলছে বিশ্লেষণ। স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি যদি অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিরসন করে একজন যোগ্য প্রার্থীকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ প্রচারণা চালাতে পারে, তাহলে জামায়াত বা অন্য কারও জন্য খুব বেশি সুযোগ থাকবে না।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, মনির ও দিপুর বাইরে এই আসনে বিএনপির আরও কিছু সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘুরলেও নির্বাচনী মাঠ মূলত এই দুই নেতার নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। পাশাপাশি জামায়াতের আনোয়ার মোল্লা তার নিজস্ব ধারায় ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, রূপগঞ্জের রাজনীতির সমীকরণ ততই জটিল হয়ে উঠছে। এখন দেখার বিষয়—বিএনপি শেষমেশ কাকে বেছে নেয়, তৃণমূলের চাওয়া অনুযায়ী “মনির” না কি “দিপু”? আর এই ফাঁকে জামায়াত কতোটা জায়গা করে নিতে পারে ভোটের খাতায়? সময়ই বলবে সেই উত্তর।

ট্যাগ :

সংবাদটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

জামায়াতের আনোয়ার মোল্লাও মাঠে

বিএনপির মনোনয়ন যুদ্ধে উত্তপ্ত নারায়ণগঞ্জ-১

আপডেট সময় : ০৪:৪২:১৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে বিএনপির অভ্যন্তরীণ মনোনয়ন প্রতিযোগিতা দিন দিন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। ইতোমধ্যে মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির দুই নেতা—একদিকে ক্লিন ইমেজের রাজনীতিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক বিজিএমইএ সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির, অন্যদিকে দীর্ঘদিনের কর্মীবান্ধব নেতা মুস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া দিপু। এদিকে পেছনে নেই জামায়াতে ইসলামীর আনোয়ার হোসেন মোল্লা—নিজস্ব কৌশলে ভোটের মাঠে শক্ত অবস্থান তৈরির চেষ্টায় আছেন তিনিও।
বিএনপির নেতা কাজী মনিরুজ্জামান মনির দলীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকলেও তৃণমূল বিএনপির বড় অংশ তার পক্ষেই রয়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় নেতারা। তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, ব্যবসায়িক দক্ষতা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় তাকে এলাকায় আলাদা মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। সম্প্রতি কাঞ্চন পৌরসভা মাঠে বিএনপির আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিয়ে তিনি তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফার বাস্তবায়নে জনগণের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আহ্বান জানান। মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ভূমিকা এবং অতীত আন্দোলনে সক্রিয়তা তাকে রূপগঞ্জ বিএনপির বড় অংশের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে।
অন্যদিকে, মুস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া দিপু মাঠে বরাবরের মতো সক্রিয়। দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচি, পাড়ায় পাড়ায় গণসংযোগ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা—সবমিলিয়ে তিনি রূপগঞ্জের তরুণ ও মধ্যবিত্ত ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা গড়েছেন। পূর্বাচলের রাজউক মাঠে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, “দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা বাস্তবায়ন করতে হবে। বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশই শহীদদের রক্তের প্রকৃত মর্যাদা দিতে পারে।”
তিনি একজন কর্মীবান্ধব নেতা হিসেবে জনপ্রিয়। নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এবং দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক দক্ষতায় তিনি ধীরে ধীরে শক্ত ঘাঁটি গড়ে তুলেছেন। রূপগঞ্জসহ পূর্বাচল এলাকাজুড়ে তিনি দলীয় কর্মসূচিতে সক্রিয় থাকায় তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে।
এই দুই নেতার পাল্লা সমান ভারী হলেও বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের কয়েকটি সূত্র জানায়, দলীয় হাইকমান্ড এখনো কোনো প্রার্থীকে ‘সবুজ সংকেত’ দেয়নি। তবে রূপগঞ্জের রাজনীতিতে বিভক্তি ঠেকিয়ে দলীয়ভাবে একজন শক্ত প্রার্থীকে সামনে আনাই হবে বিএনপির মূল কৌশল।
বিএনপির অভ্যন্তরীণ প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফাঁকে মাঠে জায়গা করে নিচ্ছেন জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী আনোয়ার হোসেন মোল্লা। জামায়াতে ইসলামী’র পক্ষ থেকে আনোয়ার হোসেন মোল্লা নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন একাধিক কৌশল নিয়ে। সম্প্রতি তারাব পৌরসভার খাদুন এলাকায় ঈদ উপহার বিতরণের মাধ্যমে তিনি গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মধ্যে রাজনৈতিক বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন। এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন জেলা জামায়াতের আমীর মমিনুল হক সরকারসহ জামায়াতের শীর্ষ নেতারা। এ সময় বক্তারা বলেন, “জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় এলে কোরআনের আলোকে দেশে ন্যায়বিচার ও জনকল্যাণের সমাজ গড়ে উঠবে।” তিনি ইতোমধ্যে তারাব পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় সামাজিক কর্মকা-ের মাধ্যমে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। ঈদের আগে ৫ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় ২০০ পরিবারের মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরণ করেছেন তিনি। ঈদুল আযহায় দিয়েছেন গরুর মাংস। অন্যদিকে নিয়মিত তিনি নিয়মিত ব্যস্ত রয়েছেন সভা-সমাবেশ, উঠান বৈঠক, প্রস্তুতি সভা সহ নানা কর্মসূচি নিয়ে।
ভোটের রাজনীতিতে জামায়াতের এমন উপস্থিতি বিএনপির জন্য আশীর্বাদ না হুমকি—তা নিয়ে চলছে বিশ্লেষণ। স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি যদি অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিরসন করে একজন যোগ্য প্রার্থীকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ প্রচারণা চালাতে পারে, তাহলে জামায়াত বা অন্য কারও জন্য খুব বেশি সুযোগ থাকবে না।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, মনির ও দিপুর বাইরে এই আসনে বিএনপির আরও কিছু সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘুরলেও নির্বাচনী মাঠ মূলত এই দুই নেতার নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। পাশাপাশি জামায়াতের আনোয়ার মোল্লা তার নিজস্ব ধারায় ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, রূপগঞ্জের রাজনীতির সমীকরণ ততই জটিল হয়ে উঠছে। এখন দেখার বিষয়—বিএনপি শেষমেশ কাকে বেছে নেয়, তৃণমূলের চাওয়া অনুযায়ী “মনির” না কি “দিপু”? আর এই ফাঁকে জামায়াত কতোটা জায়গা করে নিতে পারে ভোটের খাতায়? সময়ই বলবে সেই উত্তর।