ক্রাইম জোনে রূপ নিচ্ছে না’গঞ্জ নগরী!

- আপডেট সময় : ০৩:৩১:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫
- / ৩৯ জন পড়েছেন
একদিকে যখন জেলা প্রশাসন ‘গ্রীন অ্যান্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ’ স্লোগানে শহরকে পরিচ্ছন্ন, পরিবেশবান্ধব ও সৌন্দর্যমন্ডিত করার কর্মসূচিতে ব্যাপৃত, ঠিক তখনই অপরদিকে শহরের বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ হারে বাড়ছে খুন, চুরি, ছিনতাই, মাদক ও কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য। প্রশাসনের সব নজর যেখানে রাস্তা,ঘাট পরিষ্কার রাখা, দেয়ালে রঙ করা বা বৃক্ষরোপণে ব্যস্ত, সেখানে অপরাধীরা নিচ্ছে সুযোগ। ধীরে ধীরে নারায়ণগঞ্জকে পরিণত করছে ‘ক্রাইম জোন’ হিসেবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিয়ার নেতৃত্বে সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে চলছে জোরেশোরে পরিবেশগত কর্মসূচি। পরিষ্কার শহর, নিরাপদ শহর,সবুজ বাঁচলে, শহর বাঁচবে, পরিবেশ দূষণ রোধে গাছ লাগান, প্রতিটি সরকারি অফিস ও স্কুলে গাছ লাগানো ,রাস্তার পাশে ফুলের টব বসানো , নদী তীর পরিস্কারকরণ অভিযান ,পলিথিন বিরোধী ক্যাম্পেইনসহ চলছে খাল সংস্কার ও পরিচ্ছন্নতা অভিযান।
এক বক্তব্য সাংবাদিকের জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিয়া বলছেন, “আগামী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য নারায়ণগঞ্জ গড়ে তুলতেই আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি।”
নগরীকে গ্রীন অ্যান্ড ক্লিন করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলা প্রশাসক জাহিদুলিসলাম মিয়া। এর ফাঁকে অপরাধীরা নগরীকে পরিনিত করছে ক্রাইম জোনে। পরিচ্ছন্ন শহর গড়ার মহৎ উদ্যোগ চলাকালীন সময়ে অপরাধ বেড়েই চলেছে, আর সেগুলোর বেশিরভাগই প্রশাসনের নজর এড়িয়ে যাচ্ছে। বিগত এক মাসের সংবাদ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দেখা যায়, মাত্র ১৫ দিনে ৫টি হত্যাকাণ্ড ও ৯টি লাশ উদ্ধার,প্রতিদিনই ছিনতাইয়ের শিকার সাধারণ মানুষ, দুর্ধর্ষ কিশোর গ্যাং রীতিমতো ‘এলাকা নিয়ন্ত্রণ’ করছে, শহরের কেন্দ্রে প্রকাশ্যে ইয়াবা ও গাঁজার কেনাবেচা, বিভিন্ন মার্কেট ও হাসপাতাল এলাকায় পকেটমার, চাঁদাবাজ ও উঠতি সন্ত্রাসীদের দাপট বেড়েই চলেছে অথচ এই বিষয়ে প্রশাসনের তেমন কোন নজরদারী নেই বললেই চলে।
নগরীর স্থানীয় বাসিন্দাদারা বলছেন, শহরের গাছে পানি দেওয়ার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এখন শহরের মানুষকে বাঁচানো। চাষাড়া, ডিএনডি, ফতুল্লা, আমলাপাড়া, খানপুর, দেওভোগ, সাইনবোর্ড, এসব এলাকার বহু বাসিন্দা অভিযোগ করছেন রাতে নিরাপদে চলাচল করতে পারি না। সিসিটিভি থাকলেও কাজ হয় না। থানা চুপচাপ, আর জেলা প্রশাসন ব্যস্ত ফেসবুক পোস্ট নিয়ে।
প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব?
জেলা প্রশাসন এখন মূলত পরিচ্ছন্নতা, পরিবেশ, ভ্রাম্যমাণ আদালত ও লাইসেন্সবিহীন ব্যবসা বন্ধ করতে তৎপর। অন্যদিকে জেলা পুলিশ ও থানা পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের দেখা যাচ্ছে অনেকটা নীরব দর্শক ভূমিকায়।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর এক নেতা বলেন,জেলা প্রশাসক ভালো কাজ করছেন পরিবেশ রক্ষায়, কিন্তু এই শহরে মানুষ খুন হলে ফুলের টব দিয়ে কি হবে?
অন্যদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, নারায়ণগঞ্জে অপরাধ বাড়ার বেশকিছু কারণ রয়েছে যার মধ্যে অন্যতম গুলো হলঃ-
কিশোর গ্যাংয়ের বিস্তার:
স্কুলছুট, বেকার ও উঠতি বয়সের তরুণরা মাদক, মোটরসাইকেল চুরি ও ব্ল্যাকমেইলে যুক্ত হচ্ছে। তাদের ‘সাপোর্ট’ দিচ্ছে কিছু রাজনৈতিক শক্তি।
মাদকের বিস্তার:
মাদকের মূল রুট এখন সদর থানা এলাকা থেকে বন্দর ও রূপগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রশাসনের কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত সদস্য এ ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগও উঠেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা:
কয়েকটি থানায় ওসি পর্যায়ে নেতৃত্বের দুর্বলতা, গুজব ও মামলা না নেওয়ার অভিযোগে সাধারণ মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে।
ফুটপাত ও হকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সিন্ডিকেট:
এসব এলাকায় টোকেন ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও পুলিশের নীরব সমর্থনে চলে পকেটমার ও ছিনতাই কার্যক্রম।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি গবেষণা সংস্থা “সেফ সিটি ইনডেক্স” প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, নারায়ণগঞ্জের শহরাঞ্চলে অপরাধ প্রবণতা ঢাকার উপশহরগুলোর মধ্যে অন্যতম বেশি।
বিশেষ করে:
- নারী ও শিশু নির্যাতন
- চাঁদাবাজি ও দখলবাজি
- মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা
- দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীর প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানো
এসবই ইঙ্গিত করে যে নারায়ণগঞ্জ একটি নতুন ক্রাইম জোনে রূপ নিচ্ছে।
নগরীর সচেতন নাগরীকদের ভাষ্যমতে, জেলা প্রশাসক নারায়ণগঞ্জকে সবুজ ও পরিচ্ছন্ন করতে নিরলস পরিশ্রম করছেন, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। কিন্তু একই সাথে অপরাধ দমন, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না হলে “সবুজ শহর, নিরাপদ নয়” হয়ে উঠবে কেবল একটি ফাঁকা স্লোগান। অপরাধীদের জন্য শহরটা যদি নিরাপদ হয়ে ওঠে, তাহলে নাগরিকদের জীবনে গাছগাছালি দিয়ে আর যাই হোক স্বস্তি ফেরানো যাবেনা।