ঢাকা ১১:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
‘আড়ালেই থাকতে চাই, ক্যামেরাম্যান খুঁজে বের করে’ অদ্ভূত কারণে উইম্বলডন স্থগিত রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরিতে সুখবর পেলেন মান্ধানা গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করে শহীদদের ঋণ পরিশোধের এখনই সময়: তারেক রহমান পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে প্রাথমিকভাবে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে এনবিআরের আরও ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে সিদ্ধান্ত বুধবার: নৌ উপদেষ্টা চট্টগ্রামের সাবেক ডিআইজিসহ আরও তিন পুলিশ কর্মকর্তা বরখাস্ত আ.লীগ নিষিদ্ধ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে আমরা হতাশ: নুর মুজিববাদী সংবিধান ফেলে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে: আখতার হোসেন
ইসলামী দলগুলোর প্রার্থী চূড়ান্ত, গণসংযোগ শুরু

৪ আসনে বিএনপির মনোনয়ন যুদ্ধ

সোজাসাপটা রিপোর্ট
  • আপডেট সময় : ০৬:২৮:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫
  • / ৮৪ জন পড়েছেন

জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন ঘিরে উত্তাপও ততই চড়ছে। বিএনপির তিন হেভিওয়েট প্রার্থী মুহাম্মদ শাহ আলম, সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দীন এবং জেলা আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে ঘিরে এখন জমজমাট মনোনয়ন যুদ্ধ চলছে। আসনটি নিয়ে ভোটারদের আগ্রহ, রাজনৈতিক জল্পনা আর কেন্দ্রীয় বিএনপির সিদ্ধান্ত—সব মিলে এক রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা তৈরি হয়েছে।

এই আসন নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত বহু আগেই। একসময় কল্যাণ পার্টির কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ থাকা মুহাম্মদ শাহ আলম নবম জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হয়ে কবরীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। এরপর সংগঠনের নানা পর্যায়ে সক্রিয় থাকলেও মূল রাজনীতিতে তেমন দৃশ্যমান ছিলেন না। এবার আবারও মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে উঠে এসেছেন আলোচনার কেন্দ্রে। দলের কেন্দ্রীয় সূত্র বলছে, ব্যবসায়ী এবং কেন্দ্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে মনোনয়ন দৌড়ে বেশ খানিকটা এগিয়ে রয়েছেন শাহ আলম।

অন্যদিকে সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন বহুদলীয় রাজনৈতিক জীবনের পর ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দিয়েই এমপি নির্বাচিত হন। তবে মাঝে মাঝে দলের বিরুদ্ধে দেওয়া কিছু বক্তব্য তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। আবার তৃণমূলে তার নিজস্ব অনুসারী গোষ্ঠী রয়েছে, যারা এবারও গিয়াসউদ্দীনকেই প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায়।

তবে বিএনপির মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের অনেকে এবার নতুন মুখের প্রতি আস্থা রাখতে চাচ্ছেন। এ অবস্থায় আলোচনায় উঠে এসেছে অধ্যাপক মামুন মাহমুদের নাম। দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল রাজনীতিতে সক্রিয় এই নেতা বর্তমানে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সংগঠনের নানা আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়ার কারণে অনেকেই মনে করছেন, আগামী নির্বাচনে তার নেতৃত্বেই বিএনপি এই আসনে শক্ত অবস্থানে যেতে পারে।

তবে সবকিছুর মধ্যেই রয়েছে ভয়াবহ বিভক্তি। শাহ আলম ও গিয়াসউদ্দীনের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুধু ব্যক্তি পর্যায়ে নয়, তা ছড়িয়ে পড়েছে কর্মীদের মাঝেও। একাধিক যুব নেতা ইতোমধ্যেই প্রচারে নেমে পড়েছেন নিজেদের মতো করে, যা বিএনপির সাংগঠনিক ঐক্যে বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি দল সময়মতো ঐক্য ফিরিয়ে আনতে না পারে, তাহলে মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীর অবস্থান আরও দুর্বল হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

এদিকে ইসলামী দলগুলোও বসে নেই। জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও মহানগর আমির মাওলানা আব্দুল জব্বার পেয়েছেন জামায়াতের টিকিট। তিনি ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে মুফতি ইসমাঈল সিরাজী এবং জমিয়ত ওলামায়ে ইসলাম থেকে মুফতি মনির কাসেমী সক্রিয়ভাবে মাঠে রয়েছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে জমিয়তের প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীক পেয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি করেছিল। এবারও যদি শরিকদের কাউকে মনোনয়ন দেয়া হয়, তবে একই প্রতিক্রিয়া ফিরে আসতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তৃণমূল বিএনপি নেতারা।

 সবমিলিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ এখন যেন একটি রাজনৈতিক বিস্ফোরণের আগমুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছে। দলীয় মনোনয়ন কোন পথে মোড় নেয়, সেই দিকেই তাকিয়ে আছেন নেতা-কর্মীসহ হাজারো ভোটার। আগামী জুলাই মাসে মনোনয়ন বোর্ডের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে-আর সেখানেই নির্ধারিত হবে, শাহ আলম, গিয়াসউদ্দীন নাকি মামুন মাহমুদের কার হাতে উঠছে বিএনপির ‘ধানের শীষ’।

 এ আসনটি নিয়ে জোর আলোচনা শুধু দলের ভিতরেই নয়, বরং জাতীয় পর্যায়েও। কারণ নারায়ণগঞ্জ-৪ জয় মানেই রাজনীতির ব্যাটিং পিচে বড় অবস্থান নিশ্চিত। সেটা সব দলই ভালোভাবে জানে। তাই এবার ‘মূল খেলা’ হবে এখানেই ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জে

ট্যাগ :

সংবাদটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ইসলামী দলগুলোর প্রার্থী চূড়ান্ত, গণসংযোগ শুরু

৪ আসনে বিএনপির মনোনয়ন যুদ্ধ

আপডেট সময় : ০৬:২৮:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫

জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন ঘিরে উত্তাপও ততই চড়ছে। বিএনপির তিন হেভিওয়েট প্রার্থী মুহাম্মদ শাহ আলম, সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দীন এবং জেলা আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে ঘিরে এখন জমজমাট মনোনয়ন যুদ্ধ চলছে। আসনটি নিয়ে ভোটারদের আগ্রহ, রাজনৈতিক জল্পনা আর কেন্দ্রীয় বিএনপির সিদ্ধান্ত—সব মিলে এক রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা তৈরি হয়েছে।

এই আসন নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত বহু আগেই। একসময় কল্যাণ পার্টির কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ থাকা মুহাম্মদ শাহ আলম নবম জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হয়ে কবরীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। এরপর সংগঠনের নানা পর্যায়ে সক্রিয় থাকলেও মূল রাজনীতিতে তেমন দৃশ্যমান ছিলেন না। এবার আবারও মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে উঠে এসেছেন আলোচনার কেন্দ্রে। দলের কেন্দ্রীয় সূত্র বলছে, ব্যবসায়ী এবং কেন্দ্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে মনোনয়ন দৌড়ে বেশ খানিকটা এগিয়ে রয়েছেন শাহ আলম।

অন্যদিকে সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন বহুদলীয় রাজনৈতিক জীবনের পর ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দিয়েই এমপি নির্বাচিত হন। তবে মাঝে মাঝে দলের বিরুদ্ধে দেওয়া কিছু বক্তব্য তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। আবার তৃণমূলে তার নিজস্ব অনুসারী গোষ্ঠী রয়েছে, যারা এবারও গিয়াসউদ্দীনকেই প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায়।

তবে বিএনপির মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের অনেকে এবার নতুন মুখের প্রতি আস্থা রাখতে চাচ্ছেন। এ অবস্থায় আলোচনায় উঠে এসেছে অধ্যাপক মামুন মাহমুদের নাম। দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল রাজনীতিতে সক্রিয় এই নেতা বর্তমানে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সংগঠনের নানা আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়ার কারণে অনেকেই মনে করছেন, আগামী নির্বাচনে তার নেতৃত্বেই বিএনপি এই আসনে শক্ত অবস্থানে যেতে পারে।

তবে সবকিছুর মধ্যেই রয়েছে ভয়াবহ বিভক্তি। শাহ আলম ও গিয়াসউদ্দীনের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুধু ব্যক্তি পর্যায়ে নয়, তা ছড়িয়ে পড়েছে কর্মীদের মাঝেও। একাধিক যুব নেতা ইতোমধ্যেই প্রচারে নেমে পড়েছেন নিজেদের মতো করে, যা বিএনপির সাংগঠনিক ঐক্যে বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি দল সময়মতো ঐক্য ফিরিয়ে আনতে না পারে, তাহলে মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীর অবস্থান আরও দুর্বল হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

এদিকে ইসলামী দলগুলোও বসে নেই। জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও মহানগর আমির মাওলানা আব্দুল জব্বার পেয়েছেন জামায়াতের টিকিট। তিনি ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে মুফতি ইসমাঈল সিরাজী এবং জমিয়ত ওলামায়ে ইসলাম থেকে মুফতি মনির কাসেমী সক্রিয়ভাবে মাঠে রয়েছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে জমিয়তের প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীক পেয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি করেছিল। এবারও যদি শরিকদের কাউকে মনোনয়ন দেয়া হয়, তবে একই প্রতিক্রিয়া ফিরে আসতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তৃণমূল বিএনপি নেতারা।

 সবমিলিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ এখন যেন একটি রাজনৈতিক বিস্ফোরণের আগমুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছে। দলীয় মনোনয়ন কোন পথে মোড় নেয়, সেই দিকেই তাকিয়ে আছেন নেতা-কর্মীসহ হাজারো ভোটার। আগামী জুলাই মাসে মনোনয়ন বোর্ডের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে-আর সেখানেই নির্ধারিত হবে, শাহ আলম, গিয়াসউদ্দীন নাকি মামুন মাহমুদের কার হাতে উঠছে বিএনপির ‘ধানের শীষ’।

 এ আসনটি নিয়ে জোর আলোচনা শুধু দলের ভিতরেই নয়, বরং জাতীয় পর্যায়েও। কারণ নারায়ণগঞ্জ-৪ জয় মানেই রাজনীতির ব্যাটিং পিচে বড় অবস্থান নিশ্চিত। সেটা সব দলই ভালোভাবে জানে। তাই এবার ‘মূল খেলা’ হবে এখানেই ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জে