ঢাকা ০৬:২৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

সরকারের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ই-সিগারেট উৎপাদনের পাঁয়তারা

প্রতিবেদকের নাম :
  • আপডেট সময় : ০৯:০৪:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ১৬ জন পড়েছেন
সরকার আমদানি নিষিদ্ধ করলেও আন্তর্জাতিক সিগারেট কম্পানিগুলো সুকৌশলে দেশীয় কিছু দোকানদারদের মাধ্যমে এবং অনলাইনে ই-সিগারেট প্রসারের চেষ্টা করছে। যদিও ই-সিগারেটের বাজার খুবই কম। তার পরও সুকৌশলে তারা ই-সিগারেটের বৈধতা নেওয়ার চেষ্টা করছে এবং যুবসমাজকে ধূমপানে ও ই-সিগারেটে আসক্ত করছে। তামাক নিয়ন্ত্রণকর্মীরা ই-সিগারেটের নিষিদ্ধ বিধান বাস্তবায়নে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি) ও ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি আয়োজিত গবেষণার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন।

টিসিআরসির প্রকল্প পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক মো. বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে গবেষণার ফল প্রকাশ করেন টিসিআরসির প্রজেক্ট অফিসার মো. জুলহাস আহমেদ।

তিনি বলেন, সিগারেট কম্পানিগুলো তাদের ব্যবসা সচল রাখার জন্য প্রতিনিয়ত বিভিন্ন পণ্য বাজারে নিয়ে আসছে, যার মূল উদ্দেশ্য তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করা। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ই-সিগারেটের ব্যবহার বিশেষত তরুণদের মধ্যে একটি ক্রমবর্ধমান জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।

টিসিআরসি কর্তৃক গত এপ্রিল থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, অনলাইন প্ল্যাটফরম ও বিভিন্ন খুচরা বিক্রয়কেন্দ্রে ই-সিগারেট সহজলভ্য। জনসমাগম এলাকাগুলোতে ই-সিগারেটের বিক্রয়কেন্দ্র গড়ে উঠেছে এবং বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে ই-সিগারেট প্রদর্শিত হচ্ছে। বাজারে বিভিন্ন ফ্লেভারের ই-লিকুইড জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। খুচরা বিক্রেতারা অবৈধভাবে ই-সিগারেট ও ই-লিকুইড আমদানি করছে।

এ ছাড়া বেশ কিছু এলাকায় ই-লিকুইড তৈরি করে সারা দেশে সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে ই-সিগারেট বেশ সহজলভ্য হয়ে গেছে। অনলাইন বিক্রেতারাও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন বাজারে ই-সিগারেটের বিক্রয় ও প্রচার করছে। গবেষণার এসব ফল দুর্বল আইন প্রয়োগকে চিহ্নিত করছে এবং উৎপাদন, বিপণন, অনলাইন বিক্রি ও বিতরণকে নিয়ন্ত্রণের জন্য সমন্বিত আইনি কাঠামোর জরুরি প্রয়োজনীয়তাকে সামনে আনছে বলে মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়।অনুষ্ঠানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক ন্যাশনাল প্রফেসনাল অফিসার সৈয়দ মাহফুজুল হক বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ভ্যাপিং করছে তাদের অর্ধেকেরও বেশি সাধারণ সিগারেট ও ই-সিগারেট দুটোতেই আসক্ত।

অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশ ই-সিগারেটকে তাদের দেশের প্রধান স্বাস্থ্যঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কিন্তু আমদানি নিষিদ্ধের পরেও বাজারে ই-সিগারেটের বিক্রয় বন্ধ হয়নি, যা স্পষ্টভাবে সরকারের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে যায়। শুধু আমদানি নিষিদ্ধ বললে হবে না, পাশাপাশি কঠোরভাবে এর প্রয়োগ করতেআইন ও নীতি বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, ‘বহুজাতিক কম্পানিগুলো উন্নয়নশীল দেশে ব্যবসা করতে আসে কারণ তারা ট্যাক্স ফাঁকি দিতে পারে, পরিবেশের ক্ষতি করে উৎপাদন করতে পারে, জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি করে ব্যবসা করতে পারে। এদের মূল টার্গেটই থাকে ব্যবসা। এরা জনস্বাস্থ্যের কথা ভাবে না। তাহলে সরকার কেন তাদের মতামত শুনবে। জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা সরকারের দায়িত্ব। এই দায়িত্ব তাদের পালন করতেই হবে। ই-সিগারেট এ দেশে আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য, এর উৎপাদনও নিষিদ্ধ, তাহলে অবশ্যই ই-সিগারেট সামগ্রিকভাবে নিষিদ্ধ। ই-সিগারেটের বিক্রয় নিষিদ্ধ, এর প্রচারণা নিষিদ্ধ। সব ই-সিগারেটের দোকানে মোবাইল কোর্ট করা উচিত এবং সব ই-সিগারেট, লিকুইড বাজেয়াপ্ত করা উচিত।

টিসিআরসির প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর ফারহানা জামান লিজার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তৃতা করেন ঢাকা আহছানিয়া মিশনের হেলথ অ্যান্ড ওয়াশ প্রকল্পের পরিচালক ইকবাল মাসুদ, বাংলাদেশ পাবলিক হেলথ ল’ইয়ার নেটওয়ার্কের সদস্যসচিব ব্যারিস্টার নিশাত মাহমুদ, প্রত্যাশা মাদকবিরোধী সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল হেলাল আহমেদ, এইড ফাউন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালক শাগুফতা সুলতানা প্রমুখ।

ট্যাগ :

সংবাদটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

সরকারের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ই-সিগারেট উৎপাদনের পাঁয়তারা

আপডেট সময় : ০৯:০৪:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সরকার আমদানি নিষিদ্ধ করলেও আন্তর্জাতিক সিগারেট কম্পানিগুলো সুকৌশলে দেশীয় কিছু দোকানদারদের মাধ্যমে এবং অনলাইনে ই-সিগারেট প্রসারের চেষ্টা করছে। যদিও ই-সিগারেটের বাজার খুবই কম। তার পরও সুকৌশলে তারা ই-সিগারেটের বৈধতা নেওয়ার চেষ্টা করছে এবং যুবসমাজকে ধূমপানে ও ই-সিগারেটে আসক্ত করছে। তামাক নিয়ন্ত্রণকর্মীরা ই-সিগারেটের নিষিদ্ধ বিধান বাস্তবায়নে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি) ও ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি আয়োজিত গবেষণার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন।

টিসিআরসির প্রকল্প পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক মো. বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে গবেষণার ফল প্রকাশ করেন টিসিআরসির প্রজেক্ট অফিসার মো. জুলহাস আহমেদ।

তিনি বলেন, সিগারেট কম্পানিগুলো তাদের ব্যবসা সচল রাখার জন্য প্রতিনিয়ত বিভিন্ন পণ্য বাজারে নিয়ে আসছে, যার মূল উদ্দেশ্য তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করা। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ই-সিগারেটের ব্যবহার বিশেষত তরুণদের মধ্যে একটি ক্রমবর্ধমান জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।

টিসিআরসি কর্তৃক গত এপ্রিল থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, অনলাইন প্ল্যাটফরম ও বিভিন্ন খুচরা বিক্রয়কেন্দ্রে ই-সিগারেট সহজলভ্য। জনসমাগম এলাকাগুলোতে ই-সিগারেটের বিক্রয়কেন্দ্র গড়ে উঠেছে এবং বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে ই-সিগারেট প্রদর্শিত হচ্ছে। বাজারে বিভিন্ন ফ্লেভারের ই-লিকুইড জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। খুচরা বিক্রেতারা অবৈধভাবে ই-সিগারেট ও ই-লিকুইড আমদানি করছে।

এ ছাড়া বেশ কিছু এলাকায় ই-লিকুইড তৈরি করে সারা দেশে সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে ই-সিগারেট বেশ সহজলভ্য হয়ে গেছে। অনলাইন বিক্রেতারাও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন বাজারে ই-সিগারেটের বিক্রয় ও প্রচার করছে। গবেষণার এসব ফল দুর্বল আইন প্রয়োগকে চিহ্নিত করছে এবং উৎপাদন, বিপণন, অনলাইন বিক্রি ও বিতরণকে নিয়ন্ত্রণের জন্য সমন্বিত আইনি কাঠামোর জরুরি প্রয়োজনীয়তাকে সামনে আনছে বলে মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়।অনুষ্ঠানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক ন্যাশনাল প্রফেসনাল অফিসার সৈয়দ মাহফুজুল হক বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ভ্যাপিং করছে তাদের অর্ধেকেরও বেশি সাধারণ সিগারেট ও ই-সিগারেট দুটোতেই আসক্ত।

অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশ ই-সিগারেটকে তাদের দেশের প্রধান স্বাস্থ্যঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কিন্তু আমদানি নিষিদ্ধের পরেও বাজারে ই-সিগারেটের বিক্রয় বন্ধ হয়নি, যা স্পষ্টভাবে সরকারের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে যায়। শুধু আমদানি নিষিদ্ধ বললে হবে না, পাশাপাশি কঠোরভাবে এর প্রয়োগ করতেআইন ও নীতি বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, ‘বহুজাতিক কম্পানিগুলো উন্নয়নশীল দেশে ব্যবসা করতে আসে কারণ তারা ট্যাক্স ফাঁকি দিতে পারে, পরিবেশের ক্ষতি করে উৎপাদন করতে পারে, জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি করে ব্যবসা করতে পারে। এদের মূল টার্গেটই থাকে ব্যবসা। এরা জনস্বাস্থ্যের কথা ভাবে না। তাহলে সরকার কেন তাদের মতামত শুনবে। জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা সরকারের দায়িত্ব। এই দায়িত্ব তাদের পালন করতেই হবে। ই-সিগারেট এ দেশে আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য, এর উৎপাদনও নিষিদ্ধ, তাহলে অবশ্যই ই-সিগারেট সামগ্রিকভাবে নিষিদ্ধ। ই-সিগারেটের বিক্রয় নিষিদ্ধ, এর প্রচারণা নিষিদ্ধ। সব ই-সিগারেটের দোকানে মোবাইল কোর্ট করা উচিত এবং সব ই-সিগারেট, লিকুইড বাজেয়াপ্ত করা উচিত।

টিসিআরসির প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর ফারহানা জামান লিজার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তৃতা করেন ঢাকা আহছানিয়া মিশনের হেলথ অ্যান্ড ওয়াশ প্রকল্পের পরিচালক ইকবাল মাসুদ, বাংলাদেশ পাবলিক হেলথ ল’ইয়ার নেটওয়ার্কের সদস্যসচিব ব্যারিস্টার নিশাত মাহমুদ, প্রত্যাশা মাদকবিরোধী সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল হেলাল আহমেদ, এইড ফাউন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালক শাগুফতা সুলতানা প্রমুখ।