‘বাজানের ফডো দেইখ্যাই ঈদ কাডাইছি’
‘বাজানের ফডো দেইখ্যাই ঈদ কাডাইছি’

- আপডেট সময় : ১২:০৩:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল ২০২৫
- / ১২৭ জন পড়েছেন
‘আমার জুবাইদ প্রত্যেক ঈদো নয়া কাপড় দিতো। অন্য ভাইরারে কইতো ঈদে আম্মারার কাপড়টা আমি দিয়াম। অহন শাড়ি তো আনলো তয় জুরবাইদেরডা নাই। এর লাইগ্যা আমার ঈদও নাই।
এই ফডোই আমারে কয়, আম্মা আমি আইতাছি। কিন্তু ঈদ গেলো আইলো না তো। আমার বাজানের ফডো দেইখ্যা ঈদ কাডাইছি।’
কথাগুলো বলছিলেন গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ জুবাইদ মিয়ার মা নাসিমা বেগম।
ছেলেকে হারিয়ে এখনো তিনি প্রাগলপ্রায়। দিন-রাত কেটে যায় ছেলের ছবি হাতে নিয়ে। অধিকাংশ সময় থাকেন নিজ ঘরে শুয়ে। ময়মনসিংহের নান্দাইলের চামরুল্লাহ গ্রামের আব্দুল আজিজ কুসুমের ছেলে মো. জুবাইদ মিয়া।
পরিবারের জন্য ১৬ বছর বয়েসেই ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় পারি জমায় জুবাইদ মিয়া। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় গোবিন্দপুর বাজারে একটি মনোহরির দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করত সে। মাসে ১২ হাজার টাকা বেতনের চাকরি দিয়ে মা-বাবার সংসারে সাহায্য করত জুবাইদ।
গত বছরের ২০ জুলাই দুপুরে আন্দোলন চলাকালে দোকানের সামনে দিয়ে যায় মিছিল। সেই মিছিলকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে পুলিশ।
পরে দোকান বন্ধ করে দৌড় দেয় জুবাইদ। এ সময় গুলিতে ঘটনাস্থলেই শহীদ হয় নাসিমা বেগমের আদরের ধন।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে শহীদ জুবাইদের বাড়ি উপজেলার চণ্ডীপাশা ইউনিয়নের চামরুল্লাহ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সদ্য পাকা করা কবরের দেয়ালের নামফলকে লেখা রয়েছে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ২০ জুলাই ২০২৪ তারিখে যাত্রাবাড়ী শনির আখরা গোবিন্দপুর বাজারে পুলিশের গুলিতে নির্মমভাবে শাহাদাত বরণকারী শহীদ মো. জুবাইদ ইসলামের সমাধিস্থল।’ এই কবরের পাশে এসে প্রত্যেক সকালে মা-বাবা দোয়া পড়েন। ঈদের দিন অধিকাংশ সময় নাসিমা বেগমের সময় কেটেছে ছেলের কবরের পাশে।
বাবা আব্দুল আজিজ কুসুম বলেন, ‘ছেড়াডা হারাইয়া আমগো সব শেষ হয়ে গেছে। ওর টেহাজা দিয়াই আমগো দুইজনের খরচপাতি চলতো।’
ছোট বোন লাইমা বলে, ‘ভাই তো আমার লাইগ্যা নতুন জামা ও সাজনের জিনিস আইনা দিল না। ঈদের আগেই পাঠাইতো। অহন তো ভাই নাই, হের লাইগ্যা আমার ঈদও নাই।’