শামীম ওসমানের অঢেল সম্পদ ও ব্যবসা টিকিয়ে রাখছে কারা
শামীম ওসমানের অঢেল সম্পদ ও ব্যবসা টিকিয়ে রাখছে কারা

- আপডেট সময় : ০৭:৪১:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল ২০২৫
- / ৬১ জন পড়েছেন
গণঅভ্যুত্থানের পরে সারা দেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য সহ তাদের অনুসারীরা পালিয়ে গেছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান পালিয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। সেখান থেকে তার ব্যবস্থা বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে অংশীদার খুঁজছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। তার সেই ব্যবসা বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে বিএনপির এক নেতার নাম আলোচনায় উঠে আসছে।
জানা গেছে, গত ১৬ বছর একটানা আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল। এই সময়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছিল ওসমান পরিবারের নিয়ন্ত্রণাধীন। এ পরিবারের প্রভাবশালী দুই সদস্য শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের রয়েছে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার সম্পদ।
গার্মেন্টস, শিপিং, পরিবহন, আবাসনসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা রয়েছে তাদের। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান ওসমান পরিবারের প্রভাবশালীরা।
সম্প্রতি নিউইয়র্কের জ্যামাইকা শহরের একটি রেস্টুরেন্টে বসে শামীম ওসমান ও তার বন্ধু অনুপকে জম্পেশ আড্ডা দিতে দেখা গেছে। এর আগে তাকে ভারতের নিজামউদ্দিন আউলিয়ার দরবারে দেখা গেছে। এখন বিদেশে বসে নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য অংশীদার খুঁজছেন তারা।
এছাড়া ওসমান পরিবারের আরেক সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান আত্মগোপনে রয়েছেন।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, অনেক আগে থেকেই শামীম ওসমানসহ এ পরিবারের সদস্যদের বেনামি অংশীদারত্ব ছিল দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি ব্যবসায়ী গ্রুপে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শিল্প গ্রুপটিতে ওসমান পরিবারের অংশীদারত্ব আরো বেড়েছে। আর নতুন করে ওসমান পরিবারের ব্যবসায়িক অংশীদার হয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির এক সদস্য।
আবাসন ব্যবসায়ী ওই বিএনপি নেতার গুলশানের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন শামীম ওসমান। এখন ওসমান পরিবারের বাড়ি, গাড়িসহ সম্পত্তির দেখভাল করছেন তিনি।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের টিকিটে নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন শামীম ওসমান। তবে ২০০১ সালে বিএনপির প্রার্থী গিয়াসউদ্দিনের সাথে পরাজিত হয়ে দেশ ছাড়েন শামীম ওসমান।
ফের আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় এলে ২০০৯ সালে দেশে ফেরার পর ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন শামীম ওসমান। সেসময় তিনি হলফনামায় জানিয়ে ছিলেন বাড়ি-এপার্টমেন্ট-দোকানভাড়া, ব্যবসা ও ব্যাংকে আমানতের সুদ থেকে বার্ষিক আয় পেতেন ২৭ লাখ টাকা। তার নামে ১০ শতাংশ কৃষিজমি, ১৬ শতাংশ জমির ওপর দোতলা বাড়ি ও উত্তরায় ৯ কাঠা জমি রয়েছে। অথচ ১০ বছর পর দ্বাদশ নির্বাচনের সময় শামীম ওসমান হলফনামায় উল্লেখ করেন, তিনি বছরে ৭৯ লাখ টাকা আয় করেন। তার নামে ১২৩ শতাংশ কৃষিজমি, ১০ শতাংশ অকৃষিজমি, পূর্বাচলে রাজউকের নিউ টাউনে ১০ কাঠার প্লটসহ- ২টি টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার গাড়ি রয়েছে। অর্থাৎ ১০ বছরে তার আয় বাড়ে কয়েকগুণ।
শামীম ওসমান তার উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে দেখিয়েছেন পণ্য, জ্বালানি তেল আমদানি, পরিবহন ও সরবরাহকারী একাধিক প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে আবার তার স্ত্রী-ছেলে-মেয়েরও মালিকানা রয়েছে। তবে এর বাইরে থাকা তার সম্পদের তথ্য তিনি লুকিয়েছিলেন নানা কৌশলে।
খোঁজ মিলেছে শামীম ওসমানের মালিকানাধীন অন্তত ১৩টি পণ্যবাহী জাহাজ রয়েছে। এসব জাহাজ নিতাইগঞ্জের আটা-ময়দা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পদক ও মীম সারত গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সোহাগের মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন কোম্পানির কাছে ভাড়া দিতেন। এমনকি জাহাজ ব্যবসার পাশাপাশি করতেন বহুতল বিল্ডিং নির্মাণের ব্যবসাও।
এ ছাড়া তার ছেলে অয়ন ওসমানকে দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করাতেন শহর-বন্দর-সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লার ইন্টারনেট সংযোগের কারবার। যা থেকে বিপুল অর্থ লুপাট করেছেন তিনি। এ ছাড়া চাষাড়া রূপায়ণ টাওয়ারে তার ছেলের নামে রয়েছে ফ্ল্যাটও।
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রোডে চলাচল করা সিটি বন্ধন ও উৎসব পরিবহনসহ বিভিন্ন বাস থেকে নিতেন মাসিক টাকা। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রোডে চলাচল করা (বিলুপ্ত) নসিব পরিবহনের মালিকরা সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, ‘রাইফেলস ক্লাবে ডেকে নসিব পরিবহনের পুরো ব্যবসাই দখল করে নেন শামীম ওসমান।
এলজিইডি- গর্ণপূর্তসহ উন্নয়নমূলক কাজ করে এমন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ছিল তার নিয়ন্ত্রণে। শামীম ওসমানের সুপারিশে ইজারা বা ঠিকাধারি পেয়ে যেত তার লোকজন। শামীম ওসমান আদমজী ইপিজেডের ঝুট সেক্টরও নিয়ন্ত্রণ করতেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের সভাপতি মতিউর রহমান মতিকে দিয়ে।
বিনিময়ে এসব খাত থেকে পেতেন মোটা অঙ্কের অর্থ। এসব টাকা দিয়ে দিয়ে তিনি নামে ও বেনামে বিভিন্ন স্থানে নানা সম্পদ গড়েছেন।
শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ ক্লাব চালাতেন শ্যালক তানভীর আহাম্মেদ টিটুকে দিয়ে। তাকে বিসিবির পরিচালক পদ পাইয়ে দিতে নানা মহলে তদ্বির চালিয়ে ছিলেন তিনি।
এরপর বসান নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সভাপতির চেয়ারে। এ ক্লাবে প্রতি রাতে আড্ডা বসতো শিল্পপতিদের। এ ছাড়া চাষাড়া রাইফেলস ক্লাব ছিল শামীম ওসমান ও তার অনুসারীদের আখড়া।
এই রাইফেলস ক্লাবকে ব্যবহার করা হতো শামীম ওসমানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের মতো। প্রায় রাতে তিনি এখানে বিচার সালিশ, বৈঠক, সভা করতেন। এখানে বসে বিভিন্ন ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে প্রতিপক্ষকে দমনে হুমকি-নির্যাতন-নিপীড়ন চালানো হতো। এমনকি নানা অপকর্মের নির্দেশও দেওয়া হতো এখান থেকেই।