ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতির পরিকল্পনা হামাসকে পুরস্কৃত নয়: যুক্তরাজ্য
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতির পরিকল্পনা হামাসকে পুরস্কৃত নয়: যুক্তরাজ্য

- আপডেট সময় : ০৪:৫৫:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫
- / ১২ জন পড়েছেন
ইসরাইলকে চাপ দিয়ে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবাহ এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার শর্তে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণার পর, হামাসকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে—ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে যুক্তরাজ্য।
প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ২৯ জুলাই এক ভাষণে ঘোষণা দেন, সেপ্টেম্বরের মধ্যে ইসরাইল যদি গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি না দেয়, পশ্চিম তীর দখলের পরিকল্পনা ত্যাগ না করে এবং দুই-রাষ্ট্রভিত্তিক শান্তি আলোচনায় অঙ্গীকারবদ্ধ না হয়, তবে ব্রিটেন জাতিসংঘে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে।
এরপরই ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, এই ঘোষণায় হামাসকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে এবং ২০২৩ সালের হামলার শিকারদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও মন্তব্য করেন, ‘হামাসের মতো সংগঠনকে স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেওয়া উচিত নয়।’
তবে ব্রিটিশ সরকার এই সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করেছে। পরিবহন মন্ত্রী হেইডি আলেকজান্ডার ৩০ জুলাই একাধিক গণমাধ্যমে বলেন, ‘এটি হামাসের জন্য কোনও পুরস্কার নয়। হামাস একটি জঘন্য সন্ত্রাসী সংগঠন। আমাদের এই পদক্ষেপটি গাজার ক্ষুধার্ত শিশুদের জন্য, ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই ইসরাইল সরকার মানবিক সহায়তার উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নিক।’
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এর আগেই ঘোষণা দিয়েছেন, সেপ্টেম্বরেই প্যারিস ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। স্টারমার সেই পথেই এগোচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য পশ্চিমা শক্তিগুলো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে শান্তি আলোচনার মাধ্যমে অর্জনের লক্ষ্য হিসেবে দেখেছে। তবে গাজার ভয়াবহ পরিস্থিতি ও দুই-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনা বিপন্ন হওয়ায় ব্রিটেন এবার অবস্থান পরিবর্তন করছে।
স্টারমার বলেন, ইসরাইল যদি গাজায় সহায়তা প্রবেশের অনুমতি না দেয়, পশ্চিম তীর দখলের পরিকল্পনা বাতিল না করে এবং একটি টেকসই শান্তি প্রক্রিয়ায় অংশ না নেয়, তবে সেপ্টেম্বরের জাতিসংঘ অধিবেশনে যুক্তরাজ্য ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে।
এর তাৎক্ষণিক প্রভাব হিসেবে ব্রিটেনের লন্ডনে অবস্থিত ফিলিস্তিনি মিশনকে পূর্ণাঙ্গ দূতাবাসে উন্নীত করা হতে পারে এবং ব্রিটেনও ভবিষ্যতে পশ্চিম তীরে দূতাবাস খুলতে পারে বলে এক সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
তবে চ্যাথাম হাউসের প্রধান নির্বাহী ব্রনওয়েন ম্যাডক্স সতর্ক করে বলেন, ‘স্টারমার যদি স্বীকৃতিকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে চাপের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেন, তবে এটি ব্রিটেনের নীতিগত অবস্থানকে ঘোলাটে করে দেয়। বরং ইসরাইলের বিরুদ্ধে অস্ত্রনিয়ন্ত্রণ বা নিষেধাজ্ঞার মতো কৌশল বেশি কার্যকর হতে পারত।’
ব্রিটেনের ইহুদি সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় সংগঠন বোর্ড অব ডেপুটিজ অফ ব্রিটিশ জিউস উদ্বেগ জানিয়েছে, যেখানে হামাস এখনো ৫০ জন ইসরাইলি জিম্মি করে রেখেছে, সেখানে তাদের প্রতি কোনো শর্ত আরোপ করা হয়নি কেন।
এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী হেইডি আলেকজান্ডার জানান, ‘স্বীকৃতি দেওয়ার আগে সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হবে। ব্রিটেন সবসময় বলেছে, হামাসকে জিম্মিদের মুক্তি দিতে হবে।’
অন্যদিকে, মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন বলেছে, ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ‘অপরিহার্য অধিকার’ হিসেবে ঘোষণা করা হলেও সেটিকে শর্তসাপেক্ষ করার মাধ্যমে সরকারের অবস্থান পরস্পরবিরোধী হয়ে গেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্রিটেনের এই অবস্থান আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে তাদের সক্রিয় ভূমিকা তুলে ধরলেও, বাস্তব পরিবর্তন আনবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।