সাদিক কায়েমের বিরুদ্ধে নাহিদের অভিযোগ নিয়ে যা বললেন জুলকারনাইন সায়ের
সাদিক কায়েমের বিরুদ্ধে নাহিদের অভিযোগ নিয়ে যা বললেন জুলকারনাইন সায়ের

- আপডেট সময় : ০৪:৪৮:২৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫
- / ১৩ জন পড়েছেন
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া সমন্বয়কদের সাবেক সংগঠন ও অভ্যুত্থানে ছাত্রশিবির নেতা সাদিক কায়েমের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তার সেই অভিযোগের জবাব দিয়েছেন আল-জাজিরার সংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের।
নাহিদ ইসলামের অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়ে তিনি দাবি করেছেন, জুলাই আন্দোলনে সম্মুখ সারিতে থাকা সাদিক কায়েমের নামে একটাও অসততার অভিযোগ আসেনি।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বেলা ২টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এমন কথা বলেন।
জুলকারনাইন সায়ের বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে সম্মুখ সারিতে ছিল এবং ৫ই আগস্ট ২০২৪-এর পর এখনো পর্যন্ত যেই ছেলেটার নামে একটাও অসততার অভিযোগ আসেনি, তার নাম আবু সাদিক (Md Abu Shadik)’।
পোস্টে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই তাকে ও তার শুভানুধ্যায়ীদের নিয়ে অনেকে মুখরোচক চটকদার আলাপ তৈরি করবে। কিন্তু এসব আলাপ তৈরি করে কি নিজেদের গোপনতম সত্য লুকানো সম্ভব হবে?’
এর আগে, এদিন দুপুরে ফেসবুক দেওয়া এক পোস্টে শিবির, সাদিক কায়েম এবং ‘ক্যু পরিকল্পনা’সহ বেশকিছু বিষয় নিয়ে মন্তব্য করেন নাহিদ ইসলাম। যা নিয়ে রীতিমত দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
পোস্টে শিবির নেতা সাদিক কায়েমের বক্তব্যকে ‘মিথ্যাচার’ উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, ‘সম্প্রতি একটা টকশোতে তিনি বলেছেন, ছাত্রশক্তির গঠনপ্রক্রিয়ায় শিবির যুক্ত ছিল, শিবিরের ইনস্ট্রাকশনে আমরা কাজ করতাম। এটা মিথ্যাচার’।
এরপর তিনি বলেন, ‘গুরুবার আড্ডা’ পাঠচক্রের সঙ্গে জড়িত একটা অংশ এবং ঢাবি ছাত্র অধিকার থেকে পদত্যাগ করা একটা অংশ মিলে ছাত্রশক্তি গঠিত হয়। সঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) একটা স্টাডি সার্কেলও যুক্ত হয়’।
একটা নতুন ছাত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠার জন্য গুরুবার আড্ডা পাঠচক্রে দীর্ঘসময় ধরে কাজ করা হয়েছে জানিয়ে নাহিদ আরও বলেন, আমরা ক্যাম্পাসে আট বছর রাজনীতি করছি। ফলে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব সংগঠন ও নেতৃত্বকে আমরা চিনতাম এবং সব পক্ষের সঙ্গেই আমাদের যোগাযোগ ও সম্পর্ক ছিল। সেই কারণে ঢাবি শিবিরের সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল। যোগাযোগ, সম্পর্ক বা কখনো সহযোগিতা করা মানে এই না যে, তারা আমাদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিল।
সাদিক কায়েম বৈষম্যেবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সমন্বয়ক ছিল না জানিয়ে নাহিদ বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি এই পরিচয় ব্যবহার করেছেন। অভ্যুত্থানে শিবিরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণেই সাদিক কায়েমকে প্রেস ব্রিফিংয়ে বসার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু সাদিক কায়েমরা অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ঢালাও প্রচারণা করেছে, এই অভ্যুত্থান ঢাবি শিবিরই নেতৃত্ব দিয়েছে, আমরা সামনে শুধু পোস্টার ছিলাম। অভ্যুত্থানে শিবিরের ভূমিকা কেউ অস্বীকার করেনি। কিন্তু এই অভ্যুত্থান শিবিরের একক নয়, শিবিরের ইনস্ট্রাকশন বা ডিরেকশনেও হয়নি। আমরা সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেই সিদ্ধান্ত নিতাম। আর কারা ক্ষমতার ভাগ বাঁটোয়ারা করতে চাইছে, গোষ্ঠী স্বার্থ রক্ষা করতে চাইছে, সে বিষয়ে অন্যদিন বলবো বলেও জানান এনসিপির এই নেতা।
আর্মি ক্যু নিয়েও মুখ খুলেছেন এনসিপির আহ্বায়ক। তিনি বলেন, গত বছরের ২ আগস্ট রাতে জুলকারনাইন সায়েররা একটা আর্মি ক্যু করে সামরিক বাহিনীর এক অংশের হাতে ক্ষমতা দিতে চেয়েছিল। এ উদ্দেশে কথিত সেইফ হাউজে থাকা ছাত্র সমন্বয়কদের চাপ প্রয়োগ করা হয়, থ্রেট করা হয় যাতে সে রাতে ফেসবুকে তারা সরকার পতনের একদফা ঘোষণা করে আর আমাদের সাথে যাতে আর কোনো যোগাযোগ না রাখে। রিফাতদের বিভিন্ন লেখায় এ বিষয়ে বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের বক্তব্য ছিল একদফার ঘোষণা মাঠ থেকে, জনগণের মধ্য থেকে দিতে হবে। আর যারা এভাবে চাপ প্রয়োগ করছে, তাদের উদ্দেশ্য সন্দেহজনক। আমাদের ভেতর প্রথম থেকে এটা স্পষ্ট ছিল যে, ক্ষমতা কোনোভাবে সেনাবাহিনী বা সেনাবাহিনী সমর্থিত কোনো গ্রুপের কাছে দেওয়া যাবে না। এতে আরেকটা ‘এক-এগারো’ হবে এবং আওয়ামী লীগ ফিরে আসার সুযোগ তৈরি হবে এবং আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটাকে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত গণঅভ্যুত্থান হিসেবে সফল করতে হবে এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সামনে আগাতে হবে। পাঁচ আগস্ট থেকে আমরা এ অবস্থান ব্যক্ত করে গিয়েছি।
এসব নিয়ে ফেসবুকে দেওয়া আরেক পোস্টে নাহিদ ইসলাম ও তার বাবার সঙ্গে চাঁদাবাজির দায়ে গ্রেফতার রিয়াদের ছবি জুড়ে দিয়ে কয়েকটি প্রশ্ন ছুড়ে দেন জুলকারনাইন সায়ের।
ওই পোস্টে তিনি বলেন,
‘কিছু প্রশ্নঃ
১. বিপ্লবের আগে ছাত্রশক্তির ঢাবি’তে লোকবল কত ছিলো?
২. দেশের অন্য কোন-কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের কমিটি ছিল?
৩. বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কদের নাহিদ ইসলাম ৫ ই আগস্টের পূর্বে চিনতো কিনা ?
৪. কেবল মাত্র ছাত্র শক্তির বিপ্লব সংগঠিত করার মতো সাংগঠনিক কাঠামো ছিলো কিনা ?
৫. গুটিকয়েক সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী না জানালে সাদেক কায়েমের অবদানের কথা নাহিদ ইসলামরা জাতিকে জানাতেন কিনা ?
পুনশ্চঃ নাহিদ ইসলাম, আপনার অবগতির জন্যে জানাচ্ছি, আমি বৈষম্য বিরোধী চাঁদাবাজ রিয়াদকে কোনো রকমের সার্ভেলেন্সে রাখি নাই। আর সে চাঁদা আনতে গিয়ে যে সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে সেটা লাগানোতেও আমার কোন ভূমিকা নাই।
রিয়াদ যে আপনার শেল্টারে ছিল সেটা আমি জানতাম। পরে জানতে পারলাম, আপনার ও আপনার বাবার সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠতার কথা। আপনি আমার উপর ক্ষেপে গেছেন কারণ আপনাকে মিথ্যা তথ্য দেয়া হয়েছে যে রিয়াদকে ধরিয়ে দিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নাকি আমার।
আমি দৃঢ়ভাবে আপনাকে জানিয়ে দিতে চাই যে, চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গ্রেফতার রিয়াদকে পাকড়াও করার ঘটনায আমার কোন হাত নাই।’