ঢাকা ০২:০৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৬ অগাস্ট ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ইরানকে ‘শক্তিশালী রাষ্ট্র’ আখ্যা দিয়ে যে বার্তা দিলেন ফরাসি প্রতিরক্ষামন্ত্রী

ইরানকে ‘শক্তিশালী রাষ্ট্র’ আখ্যা দিয়ে যে বার্তা দিলেন ফরাসি প্রতিরক্ষামন্ত্রী

প্রতিবেদকের নাম :
  • আপডেট সময় : ০৪:৩০:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫
  • / ৩৪ জন পড়েছেন

‘ইরানের মতো একটা শক্তিশালী রাষ্ট্রকে ছোট করে দেখা বড্ড ভুল’ বলে উল্লেখ করেছেন ফ্রান্সের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সেবাস্তিয়ান লেকর্নু। তিনি ইরানের কৌশলগত ও প্রযুক্তিগত গভীরতা সম্পর্কে সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন এবং পশ্চিমা নীতিনির্ধারকদের ইরানের সামর্থ্যকে হালকাভাবে না নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

সম্প্রতি ফরাসি ম্যাগাজিন লা ক্লাব-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ আহ্বান জানান। খবর বার্তা সংস্থা মেহের-এর।

লেকর্নু বলেন, ‘আমরা (পশ্চিমারা) আসলে ইরানের কৌশলগত, প্রযুক্তিগত, বৈজ্ঞানিক এবং প্রাকৃতিক সম্পদের গভীরতাকে অবমূল্যায়ন করি। আমরা ওদের এমনভাবে দেখি, যেন ওরা খুবই ক্ষুদ্র একটি দেশ।’

তিনি উল্লেখ করেন, ‘ইরান ১৯৭৯ সাল থেকে চরম নিরাপত্তাগত চ্যালেঞ্জের মুখেও টিকে আছে এবং আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও টিকে থাকার কৌশলে পারদর্শী হয়ে উঠেছে।’

লেকর্নুর এই মন্তব্য মূলত গত মাসে হওয়া ইরান-যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল সংঘাতের প্রেক্ষাপটে এসেছে।

যুদ্ধবাজ ইসরাইল গত ১৩ জুন ইরানের ওপর একতরফা ও উসকানিমূলক হামলা চালিয়ে কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করে।

এরপর ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের নাতাঞ্জ, ইসফাহান ও ফোরদো নামক তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়—যা জাতিসংঘ সনদ ও পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির (এনপিটি) লঙ্ঘন বলে মনে করা হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে ইরান মোট ২২ দফা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যা ইসরাইলি সামরিক ঘাঁটিগুলোতে ব্যাপকভাবে আঘাত হানে ও ক্ষয়ক্ষতি ঘটায়।এছাড়া মার্কিন হামলার জবাবেও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে থাকা তাদের সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালায় ইরান।

এর প্রেক্ষিতে এক পর্যায়ে ইসরাইল একতরফাভাবে রণভঙ্গ দেয়, যা মূলত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে প্রকাশ পায়।

এ নিয়ে লেকর্নু বলেন, ‘গত দুই দশকে ইরান তার প্রযুক্তিগত জ্ঞান এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে, যেটা এখন আর কিছু বিজ্ঞানীকে হত্যা করে ধ্বংস করার বিষয় না।’

তার ভাষায়, ‘কয়েকজন বিজ্ঞানীকে হত্যা করলে কেবল ভয় তৈরি হয়, কাজে কিছুটা বিলম্ব হয়। কিন্তু পুরো প্রযুক্তি জ্ঞান মুছে ফেলা যায় না।’

ফরাসি প্রতিরক্ষামন্ত্রী উল্লেখ করেন, ইরান বর্তমানে ‘মিসাইল প্রপালশন বা ক্ষেপণাস্ত্র চালন প্রযুক্তিতে সম্পূর্ণ দক্ষতা অর্জন করেছে’।একই সঙ্গে এটিকে ‘সাম্প্রতিক বছরের সবচেয়ে চমকপ্রদ উন্নয়ন’ বলে বর্ণনা করেন তিনি।

ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোতে হামলার বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে লেকর্নু বলেন, ‘নাতাঞ্জ, ইসফাহান ও ফোরদোতে বেশ কিছু ক্ষতি হয়েছে। তবে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি বুঝতে হলে আমাদেরকে ‘আক্ষরিক অর্থেই মাটির নিচে’ নামতে হবে।’

তিনি এই মন্তব্যের মাধ্যমে ইঙ্গিত দেন যে, ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলো মূলত ভূগর্ভে অবস্থিত ও সুরক্ষিত এবং সাধারণ হামলায় সেগুলো সহজে ধ্বংস করা সম্ভব নয়।

প্রসঙ্গত, ইরান বরাবরই বলছে যে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ এবং এটি এনপিটি সনদ অনুযায়ী বেসামরিক কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল ইরানের এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বারবার চাপ, সন্দেহ ও হামলার মাধ্যমে বাধা সৃষ্টি করে আসছে।

এ ইস্যুতে লেকর্নুর এই মন্তব্য মূলত পশ্চিমা বিশ্বে ইরানকে ঘিরে একটি নতুন বোধোদয়ের ইঙ্গিত দিতে পারে। যেখানে ইরানকে আর সহজ প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখা যাবে না—বরং একটি কৌশলগত ও প্রযুক্তিগতভাবে আত্মনির্ভর রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করার প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ট্যাগ :

সংবাদটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ইরানকে ‘শক্তিশালী রাষ্ট্র’ আখ্যা দিয়ে যে বার্তা দিলেন ফরাসি প্রতিরক্ষামন্ত্রী

ইরানকে ‘শক্তিশালী রাষ্ট্র’ আখ্যা দিয়ে যে বার্তা দিলেন ফরাসি প্রতিরক্ষামন্ত্রী

আপডেট সময় : ০৪:৩০:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫

‘ইরানের মতো একটা শক্তিশালী রাষ্ট্রকে ছোট করে দেখা বড্ড ভুল’ বলে উল্লেখ করেছেন ফ্রান্সের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সেবাস্তিয়ান লেকর্নু। তিনি ইরানের কৌশলগত ও প্রযুক্তিগত গভীরতা সম্পর্কে সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন এবং পশ্চিমা নীতিনির্ধারকদের ইরানের সামর্থ্যকে হালকাভাবে না নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

সম্প্রতি ফরাসি ম্যাগাজিন লা ক্লাব-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ আহ্বান জানান। খবর বার্তা সংস্থা মেহের-এর।

লেকর্নু বলেন, ‘আমরা (পশ্চিমারা) আসলে ইরানের কৌশলগত, প্রযুক্তিগত, বৈজ্ঞানিক এবং প্রাকৃতিক সম্পদের গভীরতাকে অবমূল্যায়ন করি। আমরা ওদের এমনভাবে দেখি, যেন ওরা খুবই ক্ষুদ্র একটি দেশ।’

তিনি উল্লেখ করেন, ‘ইরান ১৯৭৯ সাল থেকে চরম নিরাপত্তাগত চ্যালেঞ্জের মুখেও টিকে আছে এবং আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও টিকে থাকার কৌশলে পারদর্শী হয়ে উঠেছে।’

লেকর্নুর এই মন্তব্য মূলত গত মাসে হওয়া ইরান-যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল সংঘাতের প্রেক্ষাপটে এসেছে।

যুদ্ধবাজ ইসরাইল গত ১৩ জুন ইরানের ওপর একতরফা ও উসকানিমূলক হামলা চালিয়ে কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করে।

এরপর ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের নাতাঞ্জ, ইসফাহান ও ফোরদো নামক তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়—যা জাতিসংঘ সনদ ও পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির (এনপিটি) লঙ্ঘন বলে মনে করা হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে ইরান মোট ২২ দফা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যা ইসরাইলি সামরিক ঘাঁটিগুলোতে ব্যাপকভাবে আঘাত হানে ও ক্ষয়ক্ষতি ঘটায়।এছাড়া মার্কিন হামলার জবাবেও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে থাকা তাদের সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালায় ইরান।

এর প্রেক্ষিতে এক পর্যায়ে ইসরাইল একতরফাভাবে রণভঙ্গ দেয়, যা মূলত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে প্রকাশ পায়।

এ নিয়ে লেকর্নু বলেন, ‘গত দুই দশকে ইরান তার প্রযুক্তিগত জ্ঞান এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে, যেটা এখন আর কিছু বিজ্ঞানীকে হত্যা করে ধ্বংস করার বিষয় না।’

তার ভাষায়, ‘কয়েকজন বিজ্ঞানীকে হত্যা করলে কেবল ভয় তৈরি হয়, কাজে কিছুটা বিলম্ব হয়। কিন্তু পুরো প্রযুক্তি জ্ঞান মুছে ফেলা যায় না।’

ফরাসি প্রতিরক্ষামন্ত্রী উল্লেখ করেন, ইরান বর্তমানে ‘মিসাইল প্রপালশন বা ক্ষেপণাস্ত্র চালন প্রযুক্তিতে সম্পূর্ণ দক্ষতা অর্জন করেছে’।একই সঙ্গে এটিকে ‘সাম্প্রতিক বছরের সবচেয়ে চমকপ্রদ উন্নয়ন’ বলে বর্ণনা করেন তিনি।

ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোতে হামলার বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে লেকর্নু বলেন, ‘নাতাঞ্জ, ইসফাহান ও ফোরদোতে বেশ কিছু ক্ষতি হয়েছে। তবে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি বুঝতে হলে আমাদেরকে ‘আক্ষরিক অর্থেই মাটির নিচে’ নামতে হবে।’

তিনি এই মন্তব্যের মাধ্যমে ইঙ্গিত দেন যে, ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলো মূলত ভূগর্ভে অবস্থিত ও সুরক্ষিত এবং সাধারণ হামলায় সেগুলো সহজে ধ্বংস করা সম্ভব নয়।

প্রসঙ্গত, ইরান বরাবরই বলছে যে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ এবং এটি এনপিটি সনদ অনুযায়ী বেসামরিক কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল ইরানের এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বারবার চাপ, সন্দেহ ও হামলার মাধ্যমে বাধা সৃষ্টি করে আসছে।

এ ইস্যুতে লেকর্নুর এই মন্তব্য মূলত পশ্চিমা বিশ্বে ইরানকে ঘিরে একটি নতুন বোধোদয়ের ইঙ্গিত দিতে পারে। যেখানে ইরানকে আর সহজ প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখা যাবে না—বরং একটি কৌশলগত ও প্রযুক্তিগতভাবে আত্মনির্ভর রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করার প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।