নারায়ণগঞ্জে দুই আসনে সক্রিয় হেফাজত

- আপডেট সময় : ০৪:১৭:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫
- / ৪৩ জন পড়েছেন
নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনে ফের আলোচনায় উঠে এসেছেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতারা। বিশেষ করে ৫ আগস্ট ২০২৪-এর পর থেকে জেলার অন্তত দুটি সংসদীয় আসনে হেফাজতের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সরব উপস্থিতি ও ময়দানি কার্যক্রম নতুন করে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে সরব হয়ে উঠেছেন হেফাজতের জেলা আমির মাওলানা মুনির হোসেন কাশেমী। স্থানীয় সূত্র ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, তিনি নিয়মিত দাওয়াতি সভা, ওয়াজ মাহফিল এবং ইসলামী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে সাংগঠনিক বৈঠক করে আসছেন। পাশাপাশি সামাজিক নানা ইস্যুতে স্থানীয় জনগণের মাঝে ধর্মীয় মূল্যবোধ তুলে ধরার মাধ্যমে নিজের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন তিনি।
বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর হেফাজতের সাবেক আমীর মাওলানা ফেদাউসুর রহমান আয়োজনে সিদ্ধিরগঞ্জ, ফতুল্লা, চাষাড়া ও শহরের সংযোগস্থল এলাকাগুলোতে তাঁর অনুসারীদের তৎপরতা বাড়ছে ও বিভিন্ন ইসলামীক অনুষ্ঠানে পুরুস্কার বিতরণসহ নানা কর্মসূচি পালন করছন। তাঁর এমন কার্যক্রমকে ঘিরে জামায়াতপন্থী ও চরমোনাইপন্থী বিভিন্ন ইসলামপন্থী গোষ্ঠীর নেতাদের মধ্যে চলছে তুমুল আলোচনা ।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হচ্ছেন আলোচিত ইসলামী বক্তা ও হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মামুনুল হক। ২০২১ সালে সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে ‘নারী কা-’ নিয়ে তাকে বেশ হেনস্তা করা হয়েছিলো। এই ঘটনার পর তাৎক্ষনিক খবর স্থানীয়রা তাকে রিসোর্ট থেকে উদ্ধার করে। এই ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড়ের পর তাকে গ্রেফতার করা হয় এপর থেকে
৩ বছর তাঁকে রাজনীতি ও মাঠ থেকে গায়েব থাকতে দেখা যায়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আবারও তিনি মাঠে সক্রিয় হয়েছেন।
সোনারগাঁ, মোগরাপাড়া, কাঁচপুর ও পিরোজপুর অঞ্চলে তাঁর অনুসারী আলেম সমাজের মাধ্যমে তিনি দাওয়াতি কার্যক্রম এবং তৃণমূলে যোগাযোগ বৃদ্ধির চেষ্টা করছেন। যদিও তাঁর অতীত বিতর্ক এখনো একটি বড় বাধা, তবুও ধর্মীয় আবেগ কাজে লাগিয়ে তিনি ভোটের মাঠে নতুনভাবে জায়গা করে নিতে চান বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
নির্বাচন সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জে ইসলামপন্থীদের তৎপরতা বাড়ছে এ নিয়ে ও বিএনপিসহ অন্যান্য দলগুলোর উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, হেফাজত নেতারা সরাসরি নির্বাচন না করলেও একটি ভোট ব্যাংক গড়ে তোলার মাধ্যমে বড় দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতায় যেতে পারেন। এতে নির্বাচনী হিসাব-নিকাশ পাল্টে যেতে পারে।
বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, নারায়ণগঞ্জের মতো শ্রমজীবী ও জনঘনত্বপূর্ণ এলাকায় ধর্মীয় আবেগ কাজে লাগিয়ে হেফাজত নেতারা যেভাবে মাঠে কাজ করছেন, তা মূলধারার দলগুলোর জন্য সতর্কসংকেত হতে পারে। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ-৩ ও ৪ আসনে হেফাজতের প্রভাবশালী নেতাদের কার্যক্রম বাড়ছে। নির্বাচনী মাঠে এটি কতটা প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এটি নিশ্চিত যে, হেফাজতের এই রাজনৈতিক সক্রিয়তা আগামী নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
সাধারণ জনগণের একাংশ হেফাজতের এই পুনরায় সক্রিয়তাকে স্বাগত জানালেও, আরেকাংশ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর প্রবণতা বাড়তে পারে। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের মতো একটি গঠনমূলক ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ জেলায় মৌলবাদী তৎপরতা ভবিষ্যতের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।