নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা রুটে নন-এসি (সিটি বন্ধন, উৎসব) বাসের নতুন করে ভাড়া নির্ধারণ করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন। বুধবার (২০ আগষ্ট) বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও বিআরটিএ কর্তৃক আয়োজিত নারায়ণগঞ্জ জেলা যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় জেলা প্রশাসনের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক দল ও পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমিতির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকার জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত বাস ভাড়া বাস মালিকদের দাবীর প্রেক্ষিতে ৬১.৩৬ টাকা থেকে কমিয়ে ৫৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ভাড়া সপ্তাহের সাতদিন অর্ধেক রাখার সিদ্ধান্ত সভায় উপস্থিত পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা মেনে নেন। সেই সাথে চাষাড়া থেকে ঢাকার মাঝে কোন প্রকার যাত্রী না উঠানো বা টিকিট কাউন্টার না রাখার বিষয়ে একমত হোন বাস মালিক নেতারা।

সভার শুরুতে বাস মালিক নেতা রওশন আলী উল্লেখ করেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। সরকারি ভাবে দূর পাল্লার বাস ভাড়া নির্ধারণ করা হয় কিলোমিটার প্রতি ২টাকা ৩১ পয়সা। সে হিসেবে ২০ কিলোমিটার দূরত্বে ভাড়া আসে ৬১ টাকা ৩৬ পয়সা। তাঁর পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। তাঁর মধ্যে অন্যতম ডলারের দাম বৃদ্ধি, যন্ত্রাংশের মূল্য বৃদ্ধি। আমরা আমাদের যেটা প্রাপ্য সেটা আপনারা হিসেব করেই আমাদের দিবেন সেটাই চাই।

তিনি আরও বলেন, আমাদের গাড়ির সিট সংখ্যা ৫২ টি কিন্তু আমরা যাত্রীদের সুবিধার্থে ৪৫টি সিট করেছি। হিসেব অনুযায়ী ড্রাইভারের সিট বাদ দিয়ে বাকি ৫১টি সিটের ভাড়া আমি প্রাপ্য। কিভাবে প্রাপ্য সেটা সরকারি হিসেব অনুযায়ী আপনারা দেখবেন।

আলোচনা সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, মালিক সমিতির দাবীকৃত পরিবহনের ভাড়া ৬১.৩৬ টাকা আমরা নির্ধারণ করতে পারছি না। যাত্রীদের কথা চিন্তা করে শহরের বাস স্ট্যান্ড থেকে ঢাকায় জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত বাস ভাড়া ৫৫ টাকা নির্ধারণ করা হলো। পরিবহন মালিকদের বলবো, চাষাড়া থেকে সিটি বন্ধন আর উৎসব বাস সরাসরি ঢাকা যাতায়াত করবে। মাঝে আর কোন যাত্রী উঠাতে পারবে না।

যাত্রী অধিকার ফোরাম, রাজনৈতিক দল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের থেকে দাবি জানানো হয়, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বাস ভাড়া ৫০ টাকাই রাখা হোক। আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনেরপর আমরা আবার বসে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারি। গত ছয় মাস আগে বাসভাড়া ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশে এমন কিছু হয়নি যে আবার বাস ভাড়া বাড়াতে হবে। এটা যাত্রীদের জন্য সমস্যা বাড়াবে।

আলোচনা সভায় কয়েক দফায় উত্তেজনাকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এসময় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি বলেন, এ আলোচনা সভা কোন বাস স্ট্যান্ড না, আর আপনারা কোন শ্রমিকদের সাথেও কথা বলছেন না যে এখানে হইচই করবেন। এখানে ডিসি মহোদয় যে সিদ্ধান্ত দিবেন তা সবাই মেনে নিবেন এমন নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখুন। এসময় পরিস্থিতি শান্ত হয়।

তিনি আরও বলেন, আমরা মিডিয়াতে কাজ করি বিধায় আমরা সংবাদের পেছনের সংবাদ খুঁজি। এই সংগঠনের একটা মালিক সমিতি থাকে। সে সমিতিগুলি নিয়ন্ত্রণ করে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। দেশ যখন এক সরকার থেকে আরেক সরকারের কাছে যায় তখন এই সংগঠনও রাজনৈতিক নেতাদের কাছেই থাকে। এখনও সেই আগের মতোই আছে। বাস মালিকরা চাঁদাবাজির বিষয়ে আগেও মুখ খুলেনি এখনও খুলবেনা। কেননা তাদের নিরাপত্তার বিষয়টা বিবেচনায় রাখতে হয়।

সভায় ৫৫ টাকা সিদ্ধান্ত হওয়ার পর নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্র ফেডারেশন’র সভাপতি ফারহানা মানিক মুনা বলেন, শিক্ষার্থীদের ভাড়া অর্ধেক নির্ধারণ করা হলেও আগে শিক্ষার্থীরা নানা ভাবে হেনস্থার স্বীকার হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক। বাস ভাটা ৫ টাকা যখন বাড়ানো হয়েছে তাহলে কার্ডধারী শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়াও সপ্তাহে সাতদিন রাখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া যায় কি-না প্রস্তাব রাখলাম। এসময় উপস্থিত সকলের সম্মতিতে বাস মালিক নেতারা তা মেনে নিলে জেলা প্রশাসক তাদের করতালির মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানান।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব এড. মোঃ আবু আল ইউসুফ খান টিপু, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমাদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক আন্দোলনের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি, নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্র ফেডারেশন’র সভাপতি ফারহানা মানিক মুনা, নারায়ণগঞ্জ জেলা বাস-মিনিবাস কেন্দ্রীয় মালিক সমিতির সভাপতি রওশন আলীসহ পরিবহন, শ্রমিক, যাত্রীঅধিকার সংগঠন সহ নানা শ্রেণির নেতৃবৃন্দ।

উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা রুটে ২০২৪ সালের নভেম্বরে ৫০ টাকা করে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল। বিআরটিএ‘র সহায়তায় তৎকালীন জেলা প্রশাসক এই ভাড়া নির্ধারণ করেছিলেন। সেই সময়ে ডিজেলের মূল্য, যাত্রাপথ বিবেচনায় এই মূল্যা নির্ধারণ করা হয়েছিল।