সংগঠিত হচ্ছে সেই আওয়ামী গ্যাংস্টার বাহিনী
সংগঠিত হচ্ছে সেই আওয়ামী গ্যাংস্টার বাহিনী

- আপডেট সময় : ০৩:৪৬:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫
- / ৪৭ জন পড়েছেন
সোজাসাপটা রিপোর্ট :
নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগের সেই গ্যাংস্টার বাহিনীর সন্ত্রাসীরা নতুন করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে ফতুল্লা থানার ইসদাইর ব্যাংক টাউন এলাকায়। এদের অপতৎপরতায় এরই মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ৫ আগষ্টের আগ পর্যন্ত এরা আওয়ামী লীগের হয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জরিত থাকলেও ৫ আগষ্টের পর রাতারাতি তারা বোল পাল্টিয়ে বিএনপি বনে যায়। বিএনপির কিছু নেতা এদেরকে প্রশ্রয় দেয়। জানা গেছে ৫ আগষ্টের পর এই সন্ত্রাসীরা এবং তাদের অভিবাবকরা স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি নেতার স্মরনাপন্ন হন। সারা দেশে যখন আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায় তখন এরা ইসদাইর ব্যাংক টাউন এলাকায় থেকে যায় বহালতবিয়তে। এই সন্ত্রাসীরাই এখন নতুন করে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এবং নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের সংঘটিত করছে। এরা মোটা অংকের টাকা দিয়ে ফতুল্লা থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে নিয়েছে। এলাকাবাসী জানিয়েছে এই সন্ত্রাসীদের মূল হোতা হলো ব্যাংক টাউনের আদম ব্যবসায়ী আকবরের ছেলে উজ্জল। উজ্জলের নেতৃত্বেই এখন নতুন করে সংঘটিত হচ্ছে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। ওরা এখন বিএনপির কয়েকজন নেতার মিছিলে আদম সাপ্লাই দিলেও মূলত এদের টার্গেট বিএনপি-জামায়াতকে ঠেকানো আন্দোলন। এরা এখন অনেকটা প্রকাশ্যেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। যে বিএনপি নেতারা এদেরকে শেল্টার দিচ্ছে তাদেরকেই এরা ছোবল মারার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। এলাকাবাসী জানিয়েছে আদম বেপারী আকবর বিগত পনেরো বছর নিজেকে একজন কট্টর আওয়ামী লীগ সমর্থক হিসাবে পরিচয় দিতো। সে প্রায়ই তারেক রহমানকে এবং বেগম খালেদা জিয়াকে আক্রমন করে কথা বলতো। কোটি কোটি টাকার মালিক আকবর আর তার ছেলে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এলাকায় টিকে আছে। আর এই মুহুর্তে এই বাপ-বেটা নতুন করে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের সংগঠিত করছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে।
এলাকাবাসী আরো জানিয়েছে, পলাতক গডফাদার আজমেরী ওসমানের সহযোগী গ্যাংস্টার গ্রুপের প্রধান এই আকবরের ছেলে উজ্ঝল। উত্তর মাসদাইর গাবতলী, পশ্চিম ইসদাইর ব্যাংক টাউন, টাগারের পাড়, আলআমিন বাগ সহ আশপাশের এলাকার আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এই বাহিনী। এরা ইসদাইর ব্যাংক টাউন এলাকায় গড়ে তুলেছে তাদের আস্তানা। এই গ্রুপের সদস্যরা ৫ আগষ্টের পর থেকে বিএনপির এবং যুব দলের বিভিন্ন নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে এলাকায় অবস্থান করছে।। সম্প্রতি এই গ্যাংস্টার গ্রুপের সদস্যরা জাকির খানের এবং কাঠেরপুল এলাকার নয়নের নাম ভাঙ্গাচ্ছে বলে ওইসব এলাকার বাসিন্দার অভিযোগ করেছেন। এলাকাবাসী আরো জানিয়েছে বিগত সরকারের আমলে বেশ কয়েক বছর আজমেরী ওসমানের নাম ভাঙ্গিয়ে বেপরোয়া উৎপাত চালিয়েছিলো গ্যাংস্টার গ্রুপের এই সন্ত্রাসীরা। ওই সময় এরা এতোটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলো যে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদেরও পরোয়া করতো না। র্যাব সদস্যদের উপরও হামলা চালিয়েছেলো। র্যাব সদস্যদের উপর হামলা করার পরেই গ্রেফতার অভিযান চালিয়েছিলো র্যাব ও পুলিশ। র্যাবের অভিযানে এক দিনেই গ্রেফতার হয়েছিলো সাত সন্ত্রাসী। এদের কাছ থেকে পিস্তল, রামদা, চাইনিজ কুড়াল সহ বিভিন্ন অস্ত্র উদ্ধার করেছিলো র্যাব। তখন জাতীয় এবং স্থানীয় পত্রিকায় ফলাও করে প্রচার পেয়েছিলো এই গ্যাংস্টার গ্রুপের তৎপরতা এবং তাদেরকে গ্রেফতারের খবর। এখনো গুগলে সার্চ দিলেই ওইসব নিউজ এবং ফটো পাওয়া যাচ্ছে। পরে জামিন নিয়ে বেরিয়ে এসে আবারও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়েছে এই গ্রুপ। এছাড়া বিগত ৫ আগষ্টের আগ পর্যন্ত এদের অত্যাচারে বিএনপির নেতাকর্মীরা এলাকায় ঢুকতে পারেনি। কিন্তু ৫ আগষ্টের পরপরই এরা বোল পাল্টিয়ে রাতারাতি বিএনপি বনে যায়। টানা ষোল বছর এরা এবং এদের পরিবার আওয়ামী লীগ তথা ফ্যাসিবাদের দোষর হিসাবে এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মী সহ সাধারন মানুষের উপর নির্যাতন চালায়। কিন্তু ৫ আগষ্টের পর থেকে এই সন্ত্রাসীরা বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে এলাকায় তাদের ত্রাসের রাজত্ব জারি রেখেছে বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী।
২০ জুলাই রোববার রাতেও আজমেরী ওসমানের সহযোগী আওয়ামী লীগের এই সন্ত্রাসীরা টাগারের পাড় এলাকায় হামলা চালিয়ে বিএনপির এক তৃনমূল নেতাকে কুপিয়ে রত্তাক্ত জখম করেছে। এতে উভয় পক্ষের মাঝে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়। সংঘর্ষে রহিম নামের এক বিএনপি নেতা গুরুতর আহত হয়েছেন। রবিবার ২০ শে জুলাই আনুমানিক রাত ১০:৩০ মিনিটে এই ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়,আহত আব্দুর রহিম ও হামলাকারীরা ফতুল্লার ৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
আহত আব্দুর রহিমের সাথে কথা বলে জানাযায়, তিনি বিএনপি করায় তার উপর এমন নির্মম হামলা চালানো হয়। হামলা চালানোর আগে দলবল বেধে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে তার ওপর অমানবিক নির্যাতন করা হয়। কারা এই হামলা করলো জানতে চাইলে উত্তরে রহিম বলেন, আজমেরী ওসমানের এক সময়ের ঘনিষ্ঠ সহচর উজ্জ্বল ওরফে গ্যাংস্টার উজ্জ্বল ও তার গ্যাংস্টার বাহিনী এই হামলা করে।
হামলার পরে রহিমকে নিকটস্থ হাসপাতলে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। এই ঘটানায় মামলা করার প্রস্তুতি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে রহিমের পরিবার থেকে জানা যায়। তবে অন্যদিকে হামলাকারী উজ্জ্বলের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এই বিষয়ে জানতে ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি শরিফুল ইসলামকে মুঠোফোন করলে তিনি জানান, আমি এ বিষয়টি শুনেছি তবে সম্পূর্ণ বিষয় আমি এখন অবগত নই। আমার পুলিশ দুই পক্ষকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে গেছে। তারা আসলে তদন্ত সাপেক্ষে বাকি ঘটনা জানানো হবে।
এদিকে ওই এলাকার বাসিন্দারা মনে করেন প্রশাসন যদি এখনই এদেরকে শক্ত হাতে দমন না করে তাহলে যেকোনো সময় ওই সকল এলাকায় বড় ধরনের অঘটন ঘটাতে পারে বলে ধারনা করছেন এলাকাবাসী। কারন এই সন্ত্রাসীরা এক দিকে এখন বিএনপির নাম ভাঙ্গচ্ছে অপরদিকে আজমেরী ওসমান এবং অয়ন ওসমানের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। তাই নারায়ণগঞ্জে জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার এই গ্যাংস্টার বাহিনীর প্রতি নজর না রাখলে এরা ফতুল্লার ওই এলাকা সহ আশপাশের এলাকায় আইনশৃংখলার বড় ধরনের অঘটন ঘটাতে পারে। ফলে এদেরকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে গতকাল বিকালে এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিবাদ মিছিল করেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা।
এদিকে এলাকাবাসী আরো জানিয়েছে গোপনে আওয়ামী লীগের পক্ষ্যে এই গ্যাংস্টা বাহিনীকে যারা সংগঠিত করছে তারা হলো উজ্জল, শাওন, সুমন, রুবেল, রবিন, রাকিব ও আরিফ। এই সন্ত্রাসীরা ওই এলাকায় এখন শতাধিক সন্ত্রাসীকে সংঘটিত করছে বলে জানা গেছে। এরা এখন বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নাম ভাঙ্গালেও বাস্তবে এরা নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের হয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।