ঢাকা ০৫:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

ক্লিন ইমেজ বনাম ত্যাগ

ক্লিন ইমেজ বনাম ত্যাগ
  • আপডেট সময় : ০৫:৫১:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫
  • / ৬২ জন পড়েছেন

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি যখন জোরদার, তখন নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে শুরু হয়েছে চরম উত্তেজনা। দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে উঠে এসেছে তিনটি মুখ, ক্লিন ইমেজের তুমুল জনপ্রিয় নেতা শাহ আলম, সংগঠনের জন্য লড়ে আসা ত্যাগী নেতা ও জেলা আহ্বায়ক মামুন মাহমুদ, এবং অভিজ্ঞ রাজনীতিক ও সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিন। এই তিনজনের মধ্যকার স্নায়ু যুদ্ধ কেবল মনোনয়ন সংক্রান্তই নয়, এটি বিএনপির নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) ভবিষ্যত রাজনৈতিক দিশারও ইঙ্গিত বহন করছে।
শিল্পপতি হিসেবে সুপরিচিত শাহ আলম বিগত কয়েক বছরে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নায়ক হিসেবে উঠে এসেছেন। স্থানীয়ভাবে তাঁর জনপ্রিয়তা তরুণ ভোটার এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে বেশি। ব্যবসায়ী মহলের কাছেও তিনি সমান ভাবে প্রভাব বিস্তারে সফল একজন ব্যক্তি। তিনি সুপরিচিত সামাজিক ও মানবিক কর্মকা-ে সক্রিয়, যা তাকে রাজনীতিতে নতুন ঢেউ হিসেবে পরিচিত করেছে। তার বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ নেই, নেই দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কোন অপকর্মের কালি এবং এই পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির কারণে দলের অভ্যন্তরে ও বাইরের অনেকেই তাঁকে মনোনয়ন দেওয়ার পক্ষে। ২০০৮ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মোহাম্মদ শাহ আলম আওয়ামী লীগের প্রার্থী সারাহ বেগম কবরীর সঙ্গে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মাত্র ২ হাজার ১০০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। তিনি ইতিমধ্যেই মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করার ঘোষণা দিয়ে প্রচারণা শুরু করেছেন এবং নির্বাচনী মাঠে নিজের অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা করছেন।
ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জের বিএনপির একাংশের নেতারা মনে করেন, “বিএনপির জন্য দরকার নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব, যারা দুর্নীতিমুক্ত এবং জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য। শাহ আলম সেই রূপান্তরের প্রতীক।”
অপরপ্রান্তে রয়েছেন অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, যিনি দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সংগঠনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দলের দুঃসময়ে তিনি ছিলেন এক নির্ভরযোগ্য সৈনিক, কাজী মনির ও তৈমুর আলম খন্দকারের সময় থেকে সংগঠনের সঙ্গে নিবিড় সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি জেলা সদস্য সচিব দায়িত্বে থেকে দলের সংগঠন দৃঢ় করেছেন, এবং স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে তিনি ‘ত্যাগী নেতা’ হিসেবে পরিচিত।
নেতা কর্মীদের অনেকেই বলছেন, “স্বৈরশাসকের ১৬-১৭ বছর যখন অনেকেই পালিয়ে যাচ্ছিল, তখন মামুন ভাই ছিলেন মাঠে, সংগঠনকে টিকিয়ে রেখেছেন। তাকে বাদ দিলে দলের ঐতিহ্য ও সংগঠন নড়বড়ে হয়ে যাবে।”
তবে মামুন মাহমুদের বিরুদ্ধে কিছু সমালোচনা ও বিতর্কও রয়েছে। দলের একাংশ অভিযোগ করেন, তিনি কখনো কখনো ব্যক্তিগত স্বার্থে কাজ করেন এবং কিছু ওয়ার্ডে কর্মী বিভাজন সৃষ্টি করেছেন। এই মতভেদ তার মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
গিয়াস উদ্দিন ছিলেন একসময় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের শক্তিশালী নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য। ছাত্র রাজনীতির মধ্য দিয়ে উঠে আসা এই নেতা দীর্ঘ সময় বিএনপির রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। অভিজ্ঞতার দিক থেকে দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হন।
তার শক্তি হল দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং দলের প্রতি অবিচল আনুগত্য। তবে বয়স ও আধুনিক রাজনীতির পরিবর্তিত চ্যালেঞ্জে তিনি তরুণ ভোটারদের কাছে কম প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছেন। দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তার দূরত্বও মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় অনিশ্চয়তার কারণ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে মনোনয়ন দেওয়ার সময় বিএনপির সামনে জটিল দিকনির্দেশনা রয়েছে। ক্লিন ইমেজের নেতা হিসেবে শাহ আলম নতুন শক্তি আনতে পারেন, যা দলকে তরুণ ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলবে। অন্যদিকে, মামুন মাহমুদ দলের সংগঠন টিকিয়ে রেখেছেন এবং অভিজ্ঞ নেতৃত্ব দিতে পারবেন। আবার গিয়াস উদ্দিনের মতো পুরনো নেতা দলের ঐতিহ্য ও অভিজ্ঞতা বহন করেন।
বিশ্লেষকদের মতে, “এই তিন জনের মধ্যে নির্বাচন যেকোনো দিকে যেতে পারে। দল যদি তরুণ ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি চান, তারা শাহ আলমকে নির্বাচন করবে। কিন্তু সংগঠনের অভিজ্ঞতা ও ত্যাগকে গুরুত্ব দিলে মামুন মাহমুদই হয়তো প্রার্থী হবেন। আর পুরনো কৌশল ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজনে গিয়াস উদ্দিনও খেলার বাইরে নয়।”
নারায়ণগঞ্জ-৪ এর তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যেও মনোনয়ন নিয়ে বিভক্তি রয়েছে। একাংশ মনে করেন নতুন নেতৃত্ব আনতে হবে, অন্যরা সংগঠনের অভিজ্ঞ নেতা পক্ষপাতী। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও মনোনয়ন নিয়ে সময় নিলেও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার চাপ বাড়ছে। কারণ এই আসনটিকে তারা কেবল একটি নির্বাচন হিসেবে নয়, বিএনপির পুনর্জাগরণের মঞ্চ হিসেবেও বিবেচনা করছে।
স্থানীয় ভোটারদের মধ্যে প্রতিটি প্রার্থীর ভিন্ন ভিন্ন জনপ্রিয়তা রয়েছে। তরুণরা শাহ আলমের পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করেন, অনেক ত্যাগী কর্মী ও প্রবীণ ভোটার মামুন মাহমুদকে সমর্থন করেন, আর দলীয় পুরনো কর্মীরা গিয়াস উদ্দিনের অভিজ্ঞতার ওপর ভরসা রাখেন।
ফতুল্লার এক তরুণ ভোটার রাফেল বলেন, “নতুন প্রজন্মের জন্য দরকার তাজা নেতৃত্ব, আর সেটা হতে পারে শাহ আলম।” অন্যদিকে একজন প্রবীণ নেতার মন্তব্য, “বছর দশেক ধরে দলের জন্য যারা লড়াই করে আসছেন, তাদের বাদ দিয়ে নতুন কাউকে আনলে দলের ভিত দুর্বল হয়ে যাবে।”
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে বর্তমান ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব দলের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি, সংগঠনের ত্যাগী নেতা এবং অভিজ্ঞ রাজনীতিক, এই তিনের যেকোনো এক জনকে কেন্দ্রীয় নেতারা বেছে নেবেন, তা আগামী দিনে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক মানচিত্র গড়ে দেবে।
বিএনপি কি পরিবর্তনের হাওয়া নিয়ে এগোবে, নাকি পুরনো শক্তির ওপর নির্ভর করবে। সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। এই সিদ্ধান্তই হবে নারায়ণগঞ্জ-৪ থেকে শুরু করে জাতীয় রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।

সোজাসাপটা রিপোর্ট
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি যখন জোরদার, তখন নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে শুরু হয়েছে চরম উত্তেজনা। দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে উঠে এসেছে তিনটি মুখ, ক্লিন ইমেজের তুমুল জনপ্রিয় নেতা শাহ আলম, সংগঠনের জন্য লড়ে আসা ত্যাগী নেতা ও জেলা আহ্বায়ক মামুন মাহমুদ, এবং অভিজ্ঞ রাজনীতিক ও সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিন। এই তিনজনের মধ্যকার স্নায়ু যুদ্ধ কেবল মনোনয়ন সংক্রান্তই নয়, এটি বিএনপির নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) ভবিষ্যত রাজনৈতিক দিশারও ইঙ্গিত বহন করছে।
শিল্পপতি হিসেবে সুপরিচিত শাহ আলম বিগত কয়েক বছরে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নায়ক হিসেবে উঠে এসেছেন। স্থানীয়ভাবে তাঁর জনপ্রিয়তা তরুণ ভোটার এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে বেশি। ব্যবসায়ী মহলের কাছেও তিনি সমান ভাবে প্রভাব বিস্তারে সফল একজন ব্যক্তি। তিনি সুপরিচিত সামাজিক ও মানবিক কর্মকা-ে সক্রিয়, যা তাকে রাজনীতিতে নতুন ঢেউ হিসেবে পরিচিত করেছে। তার বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ নেই, নেই দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কোন অপকর্মের কালি এবং এই পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির কারণে দলের অভ্যন্তরে ও বাইরের অনেকেই তাঁকে মনোনয়ন দেওয়ার পক্ষে। ২০০৮ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মোহাম্মদ শাহ আলম আওয়ামী লীগের প্রার্থী সারাহ বেগম কবরীর সঙ্গে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মাত্র ২ হাজার ১০০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। তিনি ইতিমধ্যেই মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করার ঘোষণা দিয়ে প্রচারণা শুরু করেছেন এবং নির্বাচনী মাঠে নিজের অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা করছেন।
ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জের বিএনপির একাংশের নেতারা মনে করেন, “বিএনপির জন্য দরকার নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব, যারা দুর্নীতিমুক্ত এবং জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য। শাহ আলম সেই রূপান্তরের প্রতীক।”
অপরপ্রান্তে রয়েছেন অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, যিনি দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সংগঠনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দলের দুঃসময়ে তিনি ছিলেন এক নির্ভরযোগ্য সৈনিক, কাজী মনির ও তৈমুর আলম খন্দকারের সময় থেকে সংগঠনের সঙ্গে নিবিড় সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি জেলা সদস্য সচিব দায়িত্বে থেকে দলের সংগঠন দৃঢ় করেছেন, এবং স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে তিনি ‘ত্যাগী নেতা’ হিসেবে পরিচিত।
নেতা কর্মীদের অনেকেই বলছেন, “স্বৈরশাসকের ১৬-১৭ বছর যখন অনেকেই পালিয়ে যাচ্ছিল, তখন মামুন ভাই ছিলেন মাঠে, সংগঠনকে টিকিয়ে রেখেছেন। তাকে বাদ দিলে দলের ঐতিহ্য ও সংগঠন নড়বড়ে হয়ে যাবে।”
তবে মামুন মাহমুদের বিরুদ্ধে কিছু সমালোচনা ও বিতর্কও রয়েছে। দলের একাংশ অভিযোগ করেন, তিনি কখনো কখনো ব্যক্তিগত স্বার্থে কাজ করেন এবং কিছু ওয়ার্ডে কর্মী বিভাজন সৃষ্টি করেছেন। এই মতভেদ তার মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
গিয়াস উদ্দিন ছিলেন একসময় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের শক্তিশালী নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য। ছাত্র রাজনীতির মধ্য দিয়ে উঠে আসা এই নেতা দীর্ঘ সময় বিএনপির রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। অভিজ্ঞতার দিক থেকে দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হন।
তার শক্তি হল দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং দলের প্রতি অবিচল আনুগত্য। তবে বয়স ও আধুনিক রাজনীতির পরিবর্তিত চ্যালেঞ্জে তিনি তরুণ ভোটারদের কাছে কম প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছেন। দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তার দূরত্বও মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় অনিশ্চয়তার কারণ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে মনোনয়ন দেওয়ার সময় বিএনপির সামনে জটিল দিকনির্দেশনা রয়েছে। ক্লিন ইমেজের নেতা হিসেবে শাহ আলম নতুন শক্তি আনতে পারেন, যা দলকে তরুণ ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলবে। অন্যদিকে, মামুন মাহমুদ দলের সংগঠন টিকিয়ে রেখেছেন এবং অভিজ্ঞ নেতৃত্ব দিতে পারবেন। আবার গিয়াস উদ্দিনের মতো পুরনো নেতা দলের ঐতিহ্য ও অভিজ্ঞতা বহন করেন।
বিশ্লেষকদের মতে, “এই তিন জনের মধ্যে নির্বাচন যেকোনো দিকে যেতে পারে। দল যদি তরুণ ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি চান, তারা শাহ আলমকে নির্বাচন করবে। কিন্তু সংগঠনের অভিজ্ঞতা ও ত্যাগকে গুরুত্ব দিলে মামুন মাহমুদই হয়তো প্রার্থী হবেন। আর পুরনো কৌশল ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজনে গিয়াস উদ্দিনও খেলার বাইরে নয়।”
নারায়ণগঞ্জ-৪ এর তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যেও মনোনয়ন নিয়ে বিভক্তি রয়েছে। একাংশ মনে করেন নতুন নেতৃত্ব আনতে হবে, অন্যরা সংগঠনের অভিজ্ঞ নেতা পক্ষপাতী। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও মনোনয়ন নিয়ে সময় নিলেও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার চাপ বাড়ছে। কারণ এই আসনটিকে তারা কেবল একটি নির্বাচন হিসেবে নয়, বিএনপির পুনর্জাগরণের মঞ্চ হিসেবেও বিবেচনা করছে।
স্থানীয় ভোটারদের মধ্যে প্রতিটি প্রার্থীর ভিন্ন ভিন্ন জনপ্রিয়তা রয়েছে। তরুণরা শাহ আলমের পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করেন, অনেক ত্যাগী কর্মী ও প্রবীণ ভোটার মামুন মাহমুদকে সমর্থন করেন, আর দলীয় পুরনো কর্মীরা গিয়াস উদ্দিনের অভিজ্ঞতার ওপর ভরসা রাখেন।
ফতুল্লার এক তরুণ ভোটার রাফেল বলেন, “নতুন প্রজন্মের জন্য দরকার তাজা নেতৃত্ব, আর সেটা হতে পারে শাহ আলম।” অন্যদিকে একজন প্রবীণ নেতার মন্তব্য, “বছর দশেক ধরে দলের জন্য যারা লড়াই করে আসছেন, তাদের বাদ দিয়ে নতুন কাউকে আনলে দলের ভিত দুর্বল হয়ে যাবে।”
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে বর্তমান ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব দলের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি, সংগঠনের ত্যাগী নেতা এবং অভিজ্ঞ রাজনীতিক, এই তিনের যেকোনো এক জনকে কেন্দ্রীয় নেতারা বেছে নেবেন, তা আগামী দিনে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক মানচিত্র গড়ে দেবে।
বিএনপি কি পরিবর্তনের হাওয়া নিয়ে এগোবে, নাকি পুরনো শক্তির ওপর নির্ভর করবে। সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। এই সিদ্ধান্তই হবে নারায়ণগঞ্জ-৪ থেকে শুরু করে জাতীয় রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।

ট্যাগ :

সংবাদটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ক্লিন ইমেজ বনাম ত্যাগ

আপডেট সময় : ০৫:৫১:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি যখন জোরদার, তখন নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে শুরু হয়েছে চরম উত্তেজনা। দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে উঠে এসেছে তিনটি মুখ, ক্লিন ইমেজের তুমুল জনপ্রিয় নেতা শাহ আলম, সংগঠনের জন্য লড়ে আসা ত্যাগী নেতা ও জেলা আহ্বায়ক মামুন মাহমুদ, এবং অভিজ্ঞ রাজনীতিক ও সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিন। এই তিনজনের মধ্যকার স্নায়ু যুদ্ধ কেবল মনোনয়ন সংক্রান্তই নয়, এটি বিএনপির নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) ভবিষ্যত রাজনৈতিক দিশারও ইঙ্গিত বহন করছে।
শিল্পপতি হিসেবে সুপরিচিত শাহ আলম বিগত কয়েক বছরে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নায়ক হিসেবে উঠে এসেছেন। স্থানীয়ভাবে তাঁর জনপ্রিয়তা তরুণ ভোটার এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে বেশি। ব্যবসায়ী মহলের কাছেও তিনি সমান ভাবে প্রভাব বিস্তারে সফল একজন ব্যক্তি। তিনি সুপরিচিত সামাজিক ও মানবিক কর্মকা-ে সক্রিয়, যা তাকে রাজনীতিতে নতুন ঢেউ হিসেবে পরিচিত করেছে। তার বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ নেই, নেই দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কোন অপকর্মের কালি এবং এই পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির কারণে দলের অভ্যন্তরে ও বাইরের অনেকেই তাঁকে মনোনয়ন দেওয়ার পক্ষে। ২০০৮ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মোহাম্মদ শাহ আলম আওয়ামী লীগের প্রার্থী সারাহ বেগম কবরীর সঙ্গে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মাত্র ২ হাজার ১০০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। তিনি ইতিমধ্যেই মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করার ঘোষণা দিয়ে প্রচারণা শুরু করেছেন এবং নির্বাচনী মাঠে নিজের অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা করছেন।
ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জের বিএনপির একাংশের নেতারা মনে করেন, “বিএনপির জন্য দরকার নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব, যারা দুর্নীতিমুক্ত এবং জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য। শাহ আলম সেই রূপান্তরের প্রতীক।”
অপরপ্রান্তে রয়েছেন অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, যিনি দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সংগঠনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দলের দুঃসময়ে তিনি ছিলেন এক নির্ভরযোগ্য সৈনিক, কাজী মনির ও তৈমুর আলম খন্দকারের সময় থেকে সংগঠনের সঙ্গে নিবিড় সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি জেলা সদস্য সচিব দায়িত্বে থেকে দলের সংগঠন দৃঢ় করেছেন, এবং স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে তিনি ‘ত্যাগী নেতা’ হিসেবে পরিচিত।
নেতা কর্মীদের অনেকেই বলছেন, “স্বৈরশাসকের ১৬-১৭ বছর যখন অনেকেই পালিয়ে যাচ্ছিল, তখন মামুন ভাই ছিলেন মাঠে, সংগঠনকে টিকিয়ে রেখেছেন। তাকে বাদ দিলে দলের ঐতিহ্য ও সংগঠন নড়বড়ে হয়ে যাবে।”
তবে মামুন মাহমুদের বিরুদ্ধে কিছু সমালোচনা ও বিতর্কও রয়েছে। দলের একাংশ অভিযোগ করেন, তিনি কখনো কখনো ব্যক্তিগত স্বার্থে কাজ করেন এবং কিছু ওয়ার্ডে কর্মী বিভাজন সৃষ্টি করেছেন। এই মতভেদ তার মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
গিয়াস উদ্দিন ছিলেন একসময় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের শক্তিশালী নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য। ছাত্র রাজনীতির মধ্য দিয়ে উঠে আসা এই নেতা দীর্ঘ সময় বিএনপির রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। অভিজ্ঞতার দিক থেকে দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হন।
তার শক্তি হল দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং দলের প্রতি অবিচল আনুগত্য। তবে বয়স ও আধুনিক রাজনীতির পরিবর্তিত চ্যালেঞ্জে তিনি তরুণ ভোটারদের কাছে কম প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছেন। দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তার দূরত্বও মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় অনিশ্চয়তার কারণ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে মনোনয়ন দেওয়ার সময় বিএনপির সামনে জটিল দিকনির্দেশনা রয়েছে। ক্লিন ইমেজের নেতা হিসেবে শাহ আলম নতুন শক্তি আনতে পারেন, যা দলকে তরুণ ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলবে। অন্যদিকে, মামুন মাহমুদ দলের সংগঠন টিকিয়ে রেখেছেন এবং অভিজ্ঞ নেতৃত্ব দিতে পারবেন। আবার গিয়াস উদ্দিনের মতো পুরনো নেতা দলের ঐতিহ্য ও অভিজ্ঞতা বহন করেন।
বিশ্লেষকদের মতে, “এই তিন জনের মধ্যে নির্বাচন যেকোনো দিকে যেতে পারে। দল যদি তরুণ ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি চান, তারা শাহ আলমকে নির্বাচন করবে। কিন্তু সংগঠনের অভিজ্ঞতা ও ত্যাগকে গুরুত্ব দিলে মামুন মাহমুদই হয়তো প্রার্থী হবেন। আর পুরনো কৌশল ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজনে গিয়াস উদ্দিনও খেলার বাইরে নয়।”
নারায়ণগঞ্জ-৪ এর তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যেও মনোনয়ন নিয়ে বিভক্তি রয়েছে। একাংশ মনে করেন নতুন নেতৃত্ব আনতে হবে, অন্যরা সংগঠনের অভিজ্ঞ নেতা পক্ষপাতী। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও মনোনয়ন নিয়ে সময় নিলেও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার চাপ বাড়ছে। কারণ এই আসনটিকে তারা কেবল একটি নির্বাচন হিসেবে নয়, বিএনপির পুনর্জাগরণের মঞ্চ হিসেবেও বিবেচনা করছে।
স্থানীয় ভোটারদের মধ্যে প্রতিটি প্রার্থীর ভিন্ন ভিন্ন জনপ্রিয়তা রয়েছে। তরুণরা শাহ আলমের পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করেন, অনেক ত্যাগী কর্মী ও প্রবীণ ভোটার মামুন মাহমুদকে সমর্থন করেন, আর দলীয় পুরনো কর্মীরা গিয়াস উদ্দিনের অভিজ্ঞতার ওপর ভরসা রাখেন।
ফতুল্লার এক তরুণ ভোটার রাফেল বলেন, “নতুন প্রজন্মের জন্য দরকার তাজা নেতৃত্ব, আর সেটা হতে পারে শাহ আলম।” অন্যদিকে একজন প্রবীণ নেতার মন্তব্য, “বছর দশেক ধরে দলের জন্য যারা লড়াই করে আসছেন, তাদের বাদ দিয়ে নতুন কাউকে আনলে দলের ভিত দুর্বল হয়ে যাবে।”
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে বর্তমান ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব দলের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি, সংগঠনের ত্যাগী নেতা এবং অভিজ্ঞ রাজনীতিক, এই তিনের যেকোনো এক জনকে কেন্দ্রীয় নেতারা বেছে নেবেন, তা আগামী দিনে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক মানচিত্র গড়ে দেবে।
বিএনপি কি পরিবর্তনের হাওয়া নিয়ে এগোবে, নাকি পুরনো শক্তির ওপর নির্ভর করবে। সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। এই সিদ্ধান্তই হবে নারায়ণগঞ্জ-৪ থেকে শুরু করে জাতীয় রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।

সোজাসাপটা রিপোর্ট
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি যখন জোরদার, তখন নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে শুরু হয়েছে চরম উত্তেজনা। দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে উঠে এসেছে তিনটি মুখ, ক্লিন ইমেজের তুমুল জনপ্রিয় নেতা শাহ আলম, সংগঠনের জন্য লড়ে আসা ত্যাগী নেতা ও জেলা আহ্বায়ক মামুন মাহমুদ, এবং অভিজ্ঞ রাজনীতিক ও সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিন। এই তিনজনের মধ্যকার স্নায়ু যুদ্ধ কেবল মনোনয়ন সংক্রান্তই নয়, এটি বিএনপির নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) ভবিষ্যত রাজনৈতিক দিশারও ইঙ্গিত বহন করছে।
শিল্পপতি হিসেবে সুপরিচিত শাহ আলম বিগত কয়েক বছরে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নায়ক হিসেবে উঠে এসেছেন। স্থানীয়ভাবে তাঁর জনপ্রিয়তা তরুণ ভোটার এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে বেশি। ব্যবসায়ী মহলের কাছেও তিনি সমান ভাবে প্রভাব বিস্তারে সফল একজন ব্যক্তি। তিনি সুপরিচিত সামাজিক ও মানবিক কর্মকা-ে সক্রিয়, যা তাকে রাজনীতিতে নতুন ঢেউ হিসেবে পরিচিত করেছে। তার বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ নেই, নেই দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কোন অপকর্মের কালি এবং এই পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির কারণে দলের অভ্যন্তরে ও বাইরের অনেকেই তাঁকে মনোনয়ন দেওয়ার পক্ষে। ২০০৮ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মোহাম্মদ শাহ আলম আওয়ামী লীগের প্রার্থী সারাহ বেগম কবরীর সঙ্গে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মাত্র ২ হাজার ১০০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। তিনি ইতিমধ্যেই মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করার ঘোষণা দিয়ে প্রচারণা শুরু করেছেন এবং নির্বাচনী মাঠে নিজের অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা করছেন।
ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জের বিএনপির একাংশের নেতারা মনে করেন, “বিএনপির জন্য দরকার নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব, যারা দুর্নীতিমুক্ত এবং জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য। শাহ আলম সেই রূপান্তরের প্রতীক।”
অপরপ্রান্তে রয়েছেন অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, যিনি দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সংগঠনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দলের দুঃসময়ে তিনি ছিলেন এক নির্ভরযোগ্য সৈনিক, কাজী মনির ও তৈমুর আলম খন্দকারের সময় থেকে সংগঠনের সঙ্গে নিবিড় সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি জেলা সদস্য সচিব দায়িত্বে থেকে দলের সংগঠন দৃঢ় করেছেন, এবং স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে তিনি ‘ত্যাগী নেতা’ হিসেবে পরিচিত।
নেতা কর্মীদের অনেকেই বলছেন, “স্বৈরশাসকের ১৬-১৭ বছর যখন অনেকেই পালিয়ে যাচ্ছিল, তখন মামুন ভাই ছিলেন মাঠে, সংগঠনকে টিকিয়ে রেখেছেন। তাকে বাদ দিলে দলের ঐতিহ্য ও সংগঠন নড়বড়ে হয়ে যাবে।”
তবে মামুন মাহমুদের বিরুদ্ধে কিছু সমালোচনা ও বিতর্কও রয়েছে। দলের একাংশ অভিযোগ করেন, তিনি কখনো কখনো ব্যক্তিগত স্বার্থে কাজ করেন এবং কিছু ওয়ার্ডে কর্মী বিভাজন সৃষ্টি করেছেন। এই মতভেদ তার মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
গিয়াস উদ্দিন ছিলেন একসময় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের শক্তিশালী নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য। ছাত্র রাজনীতির মধ্য দিয়ে উঠে আসা এই নেতা দীর্ঘ সময় বিএনপির রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। অভিজ্ঞতার দিক থেকে দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হন।
তার শক্তি হল দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং দলের প্রতি অবিচল আনুগত্য। তবে বয়স ও আধুনিক রাজনীতির পরিবর্তিত চ্যালেঞ্জে তিনি তরুণ ভোটারদের কাছে কম প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছেন। দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তার দূরত্বও মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় অনিশ্চয়তার কারণ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে মনোনয়ন দেওয়ার সময় বিএনপির সামনে জটিল দিকনির্দেশনা রয়েছে। ক্লিন ইমেজের নেতা হিসেবে শাহ আলম নতুন শক্তি আনতে পারেন, যা দলকে তরুণ ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলবে। অন্যদিকে, মামুন মাহমুদ দলের সংগঠন টিকিয়ে রেখেছেন এবং অভিজ্ঞ নেতৃত্ব দিতে পারবেন। আবার গিয়াস উদ্দিনের মতো পুরনো নেতা দলের ঐতিহ্য ও অভিজ্ঞতা বহন করেন।
বিশ্লেষকদের মতে, “এই তিন জনের মধ্যে নির্বাচন যেকোনো দিকে যেতে পারে। দল যদি তরুণ ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি চান, তারা শাহ আলমকে নির্বাচন করবে। কিন্তু সংগঠনের অভিজ্ঞতা ও ত্যাগকে গুরুত্ব দিলে মামুন মাহমুদই হয়তো প্রার্থী হবেন। আর পুরনো কৌশল ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজনে গিয়াস উদ্দিনও খেলার বাইরে নয়।”
নারায়ণগঞ্জ-৪ এর তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যেও মনোনয়ন নিয়ে বিভক্তি রয়েছে। একাংশ মনে করেন নতুন নেতৃত্ব আনতে হবে, অন্যরা সংগঠনের অভিজ্ঞ নেতা পক্ষপাতী। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও মনোনয়ন নিয়ে সময় নিলেও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার চাপ বাড়ছে। কারণ এই আসনটিকে তারা কেবল একটি নির্বাচন হিসেবে নয়, বিএনপির পুনর্জাগরণের মঞ্চ হিসেবেও বিবেচনা করছে।
স্থানীয় ভোটারদের মধ্যে প্রতিটি প্রার্থীর ভিন্ন ভিন্ন জনপ্রিয়তা রয়েছে। তরুণরা শাহ আলমের পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করেন, অনেক ত্যাগী কর্মী ও প্রবীণ ভোটার মামুন মাহমুদকে সমর্থন করেন, আর দলীয় পুরনো কর্মীরা গিয়াস উদ্দিনের অভিজ্ঞতার ওপর ভরসা রাখেন।
ফতুল্লার এক তরুণ ভোটার রাফেল বলেন, “নতুন প্রজন্মের জন্য দরকার তাজা নেতৃত্ব, আর সেটা হতে পারে শাহ আলম।” অন্যদিকে একজন প্রবীণ নেতার মন্তব্য, “বছর দশেক ধরে দলের জন্য যারা লড়াই করে আসছেন, তাদের বাদ দিয়ে নতুন কাউকে আনলে দলের ভিত দুর্বল হয়ে যাবে।”
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে বর্তমান ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব দলের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি, সংগঠনের ত্যাগী নেতা এবং অভিজ্ঞ রাজনীতিক, এই তিনের যেকোনো এক জনকে কেন্দ্রীয় নেতারা বেছে নেবেন, তা আগামী দিনে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক মানচিত্র গড়ে দেবে।
বিএনপি কি পরিবর্তনের হাওয়া নিয়ে এগোবে, নাকি পুরনো শক্তির ওপর নির্ভর করবে। সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। এই সিদ্ধান্তই হবে নারায়ণগঞ্জ-৪ থেকে শুরু করে জাতীয় রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।