ঢাকা ০৪:১৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
‘আড়ালেই থাকতে চাই, ক্যামেরাম্যান খুঁজে বের করে’ অদ্ভূত কারণে উইম্বলডন স্থগিত রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরিতে সুখবর পেলেন মান্ধানা গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করে শহীদদের ঋণ পরিশোধের এখনই সময়: তারেক রহমান পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে প্রাথমিকভাবে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে এনবিআরের আরও ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে সিদ্ধান্ত বুধবার: নৌ উপদেষ্টা চট্টগ্রামের সাবেক ডিআইজিসহ আরও তিন পুলিশ কর্মকর্তা বরখাস্ত আ.লীগ নিষিদ্ধ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে আমরা হতাশ: নুর মুজিববাদী সংবিধান ফেলে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে: আখতার হোসেন
গণ-অভ্যুত্থানে ঝড়ে যায় ৫৫টি তাজা প্রাণ

শহীদের স্মৃতিবিজড়িত রক্তাক্ত জুলাই

অর্ণব আল আমীন
  • আপডেট সময় : ০৪:২৩:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫
  • / ১৫ জন পড়েছেন

২০২৪ সালের জুলাই মাস। বাংলাদেশের ইতিহাসে এক রক্তাক্ত অধ্যায়। কোটা সংস্কার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে গণ-অভ্যুত্থান, যার চূড়ান্ত রূপ মেলে শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী সরকারের পতনে। এই অভ্যুত্থানে নারায়ণগঞ্জ ছিল সামনের সারির একটি ফ্রন্টলাইন। প্রতিদিনের প্রতিরোধ, সংঘর্ষ, রক্তপাত ও প্রাণ বিসর্জনের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ শহর ও তার আশেপাশের জনপদ হয়ে ওঠে প্রতিরোধের দুর্গ।
এই অভ্যুত্থানের গুরুত্বপূর্ণ সংগঠক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের মূল চালিকা শক্তি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংগঠন। যাদের সরকারি চাকরিতে কোটা আন্দোলন রূপ নেয় সরকার পতনের আন্দোলনে। এই সংগঠনের নারায়ণগঞ্জ জেলা সমন্বয়ক নিরব রায়হান জানান, “১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগের ছাত্রদের হলে হামলার প্রতিবাদে আমরা নারায়ণগঞ্জে আন্দোলনের সূচনা করি। টেলিগ্রাম ও ডিসকর্ড গ্রুপে যোগাযোগ করে আমরা প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন প্রান্তে কর্মসূচি দিই। ১৮, ১৯, ২৭ ও ২৯ জুলাই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই চারদিন আমরা হাজার হাজার মানুষকে রাজপথে নামাতে পেরেছিলাম।”
তিনি জানান, ১৫ জুলাই চাষাড়ায় মশাল মিছিল হয় যেখানে বামঘরানার শতাধিক ছাত্র রাজনীতিক অংশ নেয়। এরপর ১৬ জুলাই থেকেই আন্দোলনের মোড় বদলাতে শুরু করে। ১৭ জুলাই কিছু সময়ের জন্য আন্দোলন করা গেলেও টেকেনি। তবে ১৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জ উত্তাল হয়ে ওঠে। চিটাগাংরোড, মদনপুর, সাইনবোর্ড, ভুলতা, ফতুল্লা সহ বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-জনতার সাথে ছাত্রলীগ-পুলিশের সংঘর্ষ হয়।
নীরব রায়হান জানান, “সেদিন আমরা রেললাইন বন্ধ করি, চাষাড়া থেকে নিতাইগঞ্জ পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ করি। পুলিশের গাড়ি আসলে আমরা হাতে থাকা খাবার ছুঁড়ে মারি। পুলিশ গাড়ি ফেলে পালিয়ে যায়। এরপর সংঘর্ষে পুলিশের একটি ভ্যানে আগুন দেওয়া হয়, নারায়ণগঞ্জ ক্লাবেও হামলা হয়।”
১৮ জুলাই শহরজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ, অগ্নিসংযোগ হয়। সোনারগাঁওয়ের মোগরাপাড়া চৌরাস্তা ও ত্রিবর্দীতে কর্মসূচিতে হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে চাষাড়া, শিমরাইল, সাইনবোর্ড, প্রেস ক্লাব, নিতাইগঞ্জ, ফতুল্লাসহ বিভিন্ন এলাকায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনায় হামলা-ভাঙচুর হয়।
১৯ জুলাই জুমার নামাজের পর শিবু মার্কেট থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত হাজার হাজার আন্দোলনকারী রাস্তায় নামে। তখন ২৬টি শীতল বাসে আগুন দেওয়া হয়। নীরব রায়হান জানান, “ওসমান বাহিনী তিনটি বাস ভর্তি সশস্ত্র সন্ত্রাসী নিয়ে হামলা করে। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন আজমীর ওসমান ও অয়ন ওসমান। সংঘর্ষে সাইনবোর্ড, ভূঁইগড় ও জালকুড়িতে পুলিশের গুলিতে ৩ জন নিহত হয়।”
২০ জুলাই কারফিউ জারি হলেও ছাত্ররা রাজপথ ছাড়েনি। ২১ ও ২২ জুলাই চোরাগুপ্তা হামলা করে সরকারী অবস্থানগুলো দুর্বল করা হয়। ২৭ ও ২৯ জুলাই সর্বাত্মক আন্দোলনে চাষাড়া মোড়, ২ নম্বর রেলগেট, সদর থানা, পিবিআই, পাসপোর্ট অফিস, ফায়ার সার্ভিস, এসবি গার্মেন্টস, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, যুব উন্নয়ন, হাইওয়ে পুলিশ বক্স, বিজিবি ক্যাম্প ও ধামগড় ফাঁড়িতে একযোগে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হয়।
নীরব বলেন, “দিন যত গড়িয়েছে, সরকার তত বেশি দমন-পীড়ন চালিয়েছে। ৩০ জুলাই তেজগাঁও কর্মসূচি শেষে ১ আগস্ট আমরা নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকামুখী হই। শাহবাগ, শ্যামলী, মানসিক হাসপাতালের সামনে কর্মসূচিতে সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের যৌথ অভিযান হয়।”
৩ আগস্ট সস্তাপুর ও খানপুরে সেনা ও বিজিবি যৌথভাবে রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাস ছোড়ে। ৪ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজের ৪ ছাত্র নাঈম, পান্থ, আব্দুর রহমান গাজী ও মানিক শাহ আরিফ পুলিশের গুলিতে শহীদ হন।
৫ আগস্ট ভোরে আন্দোলনকারীরা বিচ্ছিন্নভাবে ঢাকা রওনা হন। পথে পথে বাধা, অভিযানে টিয়ার সেল, শাহবাগ ও গুলিস্তানে বিশৃঙ্খলার মধ্যেও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হন হাজার হাজার মানুষ। মাত্র ২০–২৫ মিনিটে শাহবাগ জনসমুদ্রে পরিণত হয়। তখনই সেনাপ্রধান ভাষণ দেন। সেই ভাষণের পর রক্তস্নাত সূর্যদয়ে নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটে।
এই আন্দোলনে শুধু নারায়ণগঞ্জেই শহীদ হয়েছেন ৫৫ জন। নীরব রায়হান জানান, “জেলা সিভিল সার্জন মশিউর রহমান ১৫ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যে তালিকা পাঠান, সেখানে নারায়ণগঞ্জের মোট শহীদ ৫৫ জন এবং আহত ৬০০ জনের বেশি।”
তবে সরকার পরবর্তীতে জেলা ভিত্তিক শহীদদের তালিকা আলাদা করার নীতিতে গেলে নারায়ণগঞ্জে শুধুমাত্র ২২ জনের নাম সরকারি শহীদ তালিকায় স্থান পায়। বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সহযোগিতায় চূড়ান্ত করা হয়।
এবিষয়ে দেওয়া এক বক্তব্যে সিভিল সার্জন মশিউর রহমান জানান, গণ-অভ্যুত্থানে দেখা গেছে নারায়ণগঞ্জের মানুষ সিলেট গিয়ে নিহত হয়েছে আবার সিলেটের মানুষ নারায়ণগঞ্জ এসে নিহত হয়েছে। সে হিসেবে নারায়ণগঞ্জের কতজন নিহত বা নারায়ণগঞ্জে এসে কতো জন নিহত হয়েছে সেটা এ তালিকায় এখনো নিরুপন করা হয়নি। তবে আমরা নারায়ণগঞ্জ থেকে ৫৫ জন নিহত ও ৬ শতাধিক আহতের তথ্য পাঠিয়েছিলাম। মন্ত্রণালয় এ তালিকায় কিভাবে সেই তথ্য ভেরিফাই করে ২২জন শহীদের চূড়ান্ত তালিকা দিয়েছে সেটা তারা ভালো বলতে পারবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন থেকে প্রাপ্ত ২২জন শহীদদের তালিকা। মো: আবুল হাসান স্বজন, বয়স: ২৫ বছর, পিতা: মো: জাকির হোসেন, মাতা: আফিয়া বেগম। ৩১৩ কুশিয়ারা পূর্বপাড়া, নারায়ণগঞ্জ। তিনি ৫ আগষ্ট চাষাড়ায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শহীদ হোন ৬ আগষ্ট। মো: জনি, বয়স: ১৭, পিতাঃ মোঃ ইয়াসিন মাতাঃ পারভীন। গ্রামঃ বালুয়াদিঘীরপাড়, থানাঃ সোনারগী, নারায়ণগঞ্জ। গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হোন কাঁচপুরে। ইমরান হাসান, বয়স: ১৯, পিতাঃ মো: ছালে আহাম্মেদ, মাতা: কোহিনুর আক্তার। গ্রাম: গঙ্গানগর, চর রমজান সোনাউল্লাহ, ডাকঘর: নিউটাউন-১৪০০, সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জ। কাঁচপুর গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। ইব্রাহিম, বয়স: ১৩, পিতা: মো: হানিফ, মাতা: আয়শা বিবি। গ্রাম: নয়াগাও, পো: বরাব বাজার, সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জ। কাঁচপুর ব্রীজের নীচে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হয়। মোঃ আদিল, বয়স: ১৫, পিতা: মোঃ আবুল কালাম মাতা: আয়েশা আক্তার। ভূইগড়, কুতুবপুর, ফতুল্লা নারায়ণগঞ্জ। ১৯ জুলাই ২০২৪ বুকের ডান পাশে গুলি বিদ্ধ হয়ে এস.বি গার্মেন্টসের সামনে শহীদ হোন তিনি। মো: ইরফান ভূইয়া, বয়স: ২৩, পিতা: আমিনুল ইসলাম ভূইয়া মাতা: মোসলেমা । মাদানি নগর, সানারপাড়, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ। কাজলা , যাত্রাবাড়ী বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে ১৮ জুলাই ঢামেক হাসপাতালে শহীদ হোন। মোঃ তুহিন, বয়স: ৩৬, পিতা-মোঃ শহিদুল ইসলাম মাতা- ময়না । উত্তর রসুলবাগ, ৩নং ওয়ার্ড, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ থাকতেন তিনি। তিনি চিটাগাংরোড মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ২০জুলাই শহীদ হোন। পারভেজ হাওলাদার, বয়স: ২৫, পিতা-মোঃ মজিবর হাওলাদার মাতা- হাসি বেগম। ইসহাক সরদারের বাড়ী, নিমাইকাশারী, সিদ্ধিরগঞ্জ, নাঃগঞ্জ। ৫ আগষ্ট যাত্রাবাড়ি গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হোন। মোঃ মাবরুর হসাইন, বয়স-২৫, পিতা: মোঃ আব্দুল হাই, মাতা: শাহনাজ বেগম। ভূইগড়, কুতুবপুর, ফতুল্লা নারায়ণগঞ্জ। ৫ আগষ্ট যাত্রাবাড়ি গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হোন। রিয়া গোপ, ৬ বছর, পিতা: দীপক কুমার গোপ, মাতা: বিউটি ঘোষ। ৩২নং নয়ামাটি নারায়ণগঞ্জ সদর, নারায়ণগঞ্জ। ৪র্থ তলা ভবনের ছাদে খেলা করছিলো রিয়া। মাথায় গুলিবদ্ধ হয়। ঢামেক হাসপাতাল ১৯ জুলাই ২০২৪ শহিদ হয় আহসান কবির ওরফে মোঃ শরীফ, বয়স- ৩৪ পিতা- মোঃ হুমায়ুন কবির, মাতা: মোসাঃ খালেদা কবির। দক্ষিণ সানারপাড়, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ। বুকের বাম পাশে গুলিবিদ্ধ হয়ে ২১ জুলাই পিডিকে সিএনজি পাম্প সংলগ্ন বিশ্বরোডে শহীদ হয়। ছলেমান, বয়স-২১ পিতা- মিরাজ বেপারী মাতা- রোকসানা। আল নূর টাওয়ার, মাদানীনগর, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ। পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে, ঘটনাস্থলেই শহীদ হন ছলেমান। হযরত বিল্লাল, বয়স-২০ ১৩ পিতা- মোঃ হোসেন মাতাঃ তাছলিমা বেগম। ছিয়াখোলা মুড়ি ফ্যাক্টরী, চিটাগাং রোড, সিদ্ধিরগঞ্জ, না:গঞ্জ। ৫ আগষ্ট যাত্রাবাড়ি মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হোন। মো: সজল মিয়া বয়স-২০ পিতা-মো: হাসান মাতা-রুনা বেগম। সাং-সালমদী সাং-সালমদী ইউনিয়ন-মাহমুদপুর উপজেলা-আড়াইহাজার জেলা-নারায়ণগঞ্জ । ২০ জুলাই সুগন্ধি হাসপাতাল হিরাঝিল শহীদ হোন। আরমান মোল্লা, বয়স-৩৬, পিতা-ইছব মোল্লা, মাতা-জোবেদা বেগম সাং-কলাগাছিয়া নয়াপাড়া গোপালদী, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ। তিনি বাবুরহাট ,নরসিংদী এলাকায় ২১ জুলাই শহীদ হোন। সফিকুল, বয়স: ২০, পিতা: আব্দুল আজিজ, মাতা: সূর্যবান । সাং-বালুয়াকান্দী, ইউনিয়ন: বিশনন্দী, উপজেলা: আড়াইহাজার, জেলা: নারায়ণগঞ্জ। ৫ আগষ্ট আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় নিজ এলাকায় শহীদ হোন। মো: মোহসীন, বয়স: ৬৩, পিতা: ছলিম, মাতা: আছিয়া বেগম। সাং-বাহাদুরপুর, ইউনিয়ন: সাতগ্রাম, থানা: আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ। মাধবদী পৌরসভা সংলগ্ন ডানপায়ের উরুতে পুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হোন। মোহাম্মদ মাহামুদুর রহমান খান সোহেল। বয়স: ৪৫ পিতা: মৃত মো: লুতফর রহমান মাতা: মৃত সুরিয়া আক্তার খানম । বাড়ি নাম্বার-৫৯ (৫ম তলা), রোড নাম্বার-১, সেক্টর নাম্বার-৬, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০। তাঁর স্থায়ী ঠিকানা গ্রাম: ত্রিশকাহনিয়া, পো: কাঞ্চন, কাঞ্চন পৌরসভা, উপজেলা: রূপগঞ্জ, জেলা: নারায়ণগঞ্জ। মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মস্তিষ্কের আঘাত জনিত জখম হয়ে আজমপুর (মেইন রোড) উত্তরা, ঢাকাস্থ ইউনাইটেড হাসপাতাল, গুলশান, ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।মোহাম্মদ ফারহানুল ইসলাম ভূইয়া (ফারহান ফাইয়াজ), পিতা: আলহাজ্ব শহিদুল ইসলাম ভূইয়া, মাতা: ফারহানা দিবা বরপা, তারাব পৌরসভা, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ। বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে ৩০ সার্কিট হাউজ রোড, ঢাকা- ধানমন্ডি, রোড নম্বর-২৭, ঢাকা:১২০৯ লালমাটিয়া সিটি হাসপাতাল, মোহাম্মদপুর, ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় শহীদ হন ফাইয়াজ। মোহাম্মদ সাইফুল হাসান (দুলাল) পিতা: মোহাম্মদ জবেদ আলী মোল্লা মাতা: মোসা: চনপাড়া পনুর্বাসন কেন্দ্র, ২য় অংশ, পূর্বগ্রাম বাজার, কায়েতপাড়া ইউনিয়ন, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ। কুড়িল, বিশ্বরোড, ঢাকা, পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে কুর্মিটোলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শহীদ হন তিনি। মো: রোমান পিতা: মো: আনোয়ার হোসেন মাতা:মোসা: রোজিনা। চনপাড়া পনুর্বাসন কেন্দ্র, ৮ম অংশ, পূর্বগ্রাম বাজার, কায়েতপাড়া ইউনিয়ন, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ। চনপাড়া পুর্নবার্সন কেন্দ্র, কায়েতপাড়া ইউপি, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গলায়, বুকে ও মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। তাওহিদুল আলম জিসান। পিতা: মো: আলমগীর মোল্লা, মাতা: মোসা: তাহমিনা আলম নুপুর। মিঠাব, মাছুমাবাদ, ভুলতা ইউনিয়ন, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ। মিঠাব, ২নং ওয়ার্ড, ভুলতা ইউনিয়ন এর শিকদার বাড়ির পশ্চিম পাশের রাস্তায় সাবেক সরকারের দলীয় ক্যাডার কর্তৃক বুকের বাম পাশে চাকুর আঘাতে ফুসফুস ছিদ্র হয়ে যায়। পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।।
এছাড়াও আরও যারা নারায়ণগঞ্জ থেকে আন্দোলন করে শহীদ হয়েছিলেন। মো: জামাল, বয়স: ২৮, পিতা: মো: হারুল, মাতা: মেহেরজান বিবি। জালকুড়ি, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ১ রাঙ্গাবালি, পটুয়াখালী । ৯ (তার নাম পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনের চূড়ান্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় জেলা প্রশাসন, নারায়ণগঞ্জের তালিকা হতে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।) বাবুল মিয়া, দুপ্তারা, আড়াইহাজার। নুরে আলম, পিতা- মো. কিতাব আলী খান। নাভানা সিটি সিদ্ধিরগঞ্জ। আব্দুস সালাম, পিতা- সাবের বিশ্বাস। কুমারখালী, কুষ্টিয়া। আলাউদ্দিন, পিতা- সিদ্দিকুর রহমান সরদার। উত্তর মতলব, চাঁদপুর। আব্দুর রহমান, পিতা- হাসান দেওয়ান। বালিয়া, চাঁদপুর। আব্দুল লতিফ, পিতা- নিজাম উদ্দিন। কাউনিয়া রংপুর। আরাফাত হোসেন আকাশ, পিতা- আকরাম হোসেন। সিদ্ধিরগঞ্জ। আব্দুল্লাহ আল মামুন, পিতা- আব্দুল ওয়াহেদ আলী। তারাবো পৌরসভা, রূপগঞ্জ। মোঃ আল মামুন আমানত, পিতা- মো. আব্দুল লতিফ। সিদ্ধিরগঞ্জ। পারভেজ হোসেন, পিতা- সোহরাব হোসেন। মাহমুদপুর সিদ্ধিরগঞ্জ। ফয়েজ আহমেদ, পিতা- আলাউদ্দিন বেপারী। রায়পুর লক্ষীপুর। মো. মেহেদী। হীরাঝিল, সিদ্ধিরগঞ্জ। মাহদী, পিতা- সানাউল্লাহ। পিরোজপুর, সোনারগাঁ। মিনারুল ইসলাম, পিতা- মৃত এনামুল। গুডীপাড়ি, রাজশাহী। আহমেদ ইমরান, পিতা- সোহরাব মিয়া। লাখাই, হবিগঞ্জ। মো. মনির হোসেন, পিতা- মমতাজুর রহমান। মনোহরগঞ্জ, কুমিল্লা। মো. রফিকুল ইসলাম, পিতা- মৃত মোমেন মিয়া। হিরাঝিল, সিদ্ধিরগঞ্জ। মিলন মিয়া, পিতা- আলী হোসেন হাওলাদার। ধুমকি, পটুয়াখালী। মো. রুবেল মিয়া, পিতা- মো. নান্নু মিয়া। বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী। রাকিব, সিআইখোলা, সিদ্ধিরগঞ্জ। রাব্বি, সিদ্ধিরগঞ্জ। রাসেল, পিতা- পিন্টু রহমান। মান্দা, নওগা। মো. রাসেল বকাউল, পিতা- মো. নুরুল বকাউল। সানারপাড়, সিদ্ধিরগঞ্জ। সেলিম মন্ডল, পিতা- ওহাব মন্ডল। কুমারখালী, কুষ্টিয়া। মো. সজিব মিয়া, পিতা- মো. সানাউল্লাহ। কাবিলপুর, নোয়াখালী। শাহ জামান, পিতা- হারুন ভুইয়া। রাঙ্গাবালী, পটুয়াখালী। সুমাইয়া আক্তার সিমু, পিতা- মৃত সেলিম মাতবর। মেহেন্দিগঞ্জ, বরিশাল। সোহেল আহাম্মেদ, পিতা- তোফলেসুর রহমান। বিয়ানী বাজার, সিলেট। সৈয়দ গোলাম মোস্তফা রাজু, পিতা- সৈয়দ আব্দুল করিম। রামগঞ্জ, লক্ষীপুর। মো. শাহীন মিয়া, পিতা- হাসান আলী। হিরাঝিল, সিদ্ধিরগঞ্জ।মো. হৃদয়, পিতা- ছাবেদ আলী। হিরাঝিল, সিদ্ধিরগঞ্জ। মো. হোসেন মিয়া, পিতা- মানিক মিয়া। দেবিদ্বার থানা, কুমিল্লা।বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার এই দীর্ঘ সংগ্রাম একদিকে যেমন স্বৈরাচার পতনের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় যুক্ত করেছে, তেমনি নারায়ণগঞ্জের সংগ্রামী জনতার আত্মত্যাগ ইতিহাসের পাতায় লাল কালিতে লেখা থাকবে। ২৪ এর শহীদদের আমরা কখনও ভুলবো না। আমরা তোমাদের ভুলবো না

ট্যাগ :

সংবাদটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

গণ-অভ্যুত্থানে ঝড়ে যায় ৫৫টি তাজা প্রাণ

শহীদের স্মৃতিবিজড়িত রক্তাক্ত জুলাই

আপডেট সময় : ০৪:২৩:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫

২০২৪ সালের জুলাই মাস। বাংলাদেশের ইতিহাসে এক রক্তাক্ত অধ্যায়। কোটা সংস্কার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে গণ-অভ্যুত্থান, যার চূড়ান্ত রূপ মেলে শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী সরকারের পতনে। এই অভ্যুত্থানে নারায়ণগঞ্জ ছিল সামনের সারির একটি ফ্রন্টলাইন। প্রতিদিনের প্রতিরোধ, সংঘর্ষ, রক্তপাত ও প্রাণ বিসর্জনের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ শহর ও তার আশেপাশের জনপদ হয়ে ওঠে প্রতিরোধের দুর্গ।
এই অভ্যুত্থানের গুরুত্বপূর্ণ সংগঠক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের মূল চালিকা শক্তি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংগঠন। যাদের সরকারি চাকরিতে কোটা আন্দোলন রূপ নেয় সরকার পতনের আন্দোলনে। এই সংগঠনের নারায়ণগঞ্জ জেলা সমন্বয়ক নিরব রায়হান জানান, “১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগের ছাত্রদের হলে হামলার প্রতিবাদে আমরা নারায়ণগঞ্জে আন্দোলনের সূচনা করি। টেলিগ্রাম ও ডিসকর্ড গ্রুপে যোগাযোগ করে আমরা প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন প্রান্তে কর্মসূচি দিই। ১৮, ১৯, ২৭ ও ২৯ জুলাই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই চারদিন আমরা হাজার হাজার মানুষকে রাজপথে নামাতে পেরেছিলাম।”
তিনি জানান, ১৫ জুলাই চাষাড়ায় মশাল মিছিল হয় যেখানে বামঘরানার শতাধিক ছাত্র রাজনীতিক অংশ নেয়। এরপর ১৬ জুলাই থেকেই আন্দোলনের মোড় বদলাতে শুরু করে। ১৭ জুলাই কিছু সময়ের জন্য আন্দোলন করা গেলেও টেকেনি। তবে ১৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জ উত্তাল হয়ে ওঠে। চিটাগাংরোড, মদনপুর, সাইনবোর্ড, ভুলতা, ফতুল্লা সহ বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-জনতার সাথে ছাত্রলীগ-পুলিশের সংঘর্ষ হয়।
নীরব রায়হান জানান, “সেদিন আমরা রেললাইন বন্ধ করি, চাষাড়া থেকে নিতাইগঞ্জ পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ করি। পুলিশের গাড়ি আসলে আমরা হাতে থাকা খাবার ছুঁড়ে মারি। পুলিশ গাড়ি ফেলে পালিয়ে যায়। এরপর সংঘর্ষে পুলিশের একটি ভ্যানে আগুন দেওয়া হয়, নারায়ণগঞ্জ ক্লাবেও হামলা হয়।”
১৮ জুলাই শহরজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ, অগ্নিসংযোগ হয়। সোনারগাঁওয়ের মোগরাপাড়া চৌরাস্তা ও ত্রিবর্দীতে কর্মসূচিতে হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে চাষাড়া, শিমরাইল, সাইনবোর্ড, প্রেস ক্লাব, নিতাইগঞ্জ, ফতুল্লাসহ বিভিন্ন এলাকায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনায় হামলা-ভাঙচুর হয়।
১৯ জুলাই জুমার নামাজের পর শিবু মার্কেট থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত হাজার হাজার আন্দোলনকারী রাস্তায় নামে। তখন ২৬টি শীতল বাসে আগুন দেওয়া হয়। নীরব রায়হান জানান, “ওসমান বাহিনী তিনটি বাস ভর্তি সশস্ত্র সন্ত্রাসী নিয়ে হামলা করে। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন আজমীর ওসমান ও অয়ন ওসমান। সংঘর্ষে সাইনবোর্ড, ভূঁইগড় ও জালকুড়িতে পুলিশের গুলিতে ৩ জন নিহত হয়।”
২০ জুলাই কারফিউ জারি হলেও ছাত্ররা রাজপথ ছাড়েনি। ২১ ও ২২ জুলাই চোরাগুপ্তা হামলা করে সরকারী অবস্থানগুলো দুর্বল করা হয়। ২৭ ও ২৯ জুলাই সর্বাত্মক আন্দোলনে চাষাড়া মোড়, ২ নম্বর রেলগেট, সদর থানা, পিবিআই, পাসপোর্ট অফিস, ফায়ার সার্ভিস, এসবি গার্মেন্টস, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, যুব উন্নয়ন, হাইওয়ে পুলিশ বক্স, বিজিবি ক্যাম্প ও ধামগড় ফাঁড়িতে একযোগে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হয়।
নীরব বলেন, “দিন যত গড়িয়েছে, সরকার তত বেশি দমন-পীড়ন চালিয়েছে। ৩০ জুলাই তেজগাঁও কর্মসূচি শেষে ১ আগস্ট আমরা নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকামুখী হই। শাহবাগ, শ্যামলী, মানসিক হাসপাতালের সামনে কর্মসূচিতে সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের যৌথ অভিযান হয়।”
৩ আগস্ট সস্তাপুর ও খানপুরে সেনা ও বিজিবি যৌথভাবে রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাস ছোড়ে। ৪ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজের ৪ ছাত্র নাঈম, পান্থ, আব্দুর রহমান গাজী ও মানিক শাহ আরিফ পুলিশের গুলিতে শহীদ হন।
৫ আগস্ট ভোরে আন্দোলনকারীরা বিচ্ছিন্নভাবে ঢাকা রওনা হন। পথে পথে বাধা, অভিযানে টিয়ার সেল, শাহবাগ ও গুলিস্তানে বিশৃঙ্খলার মধ্যেও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হন হাজার হাজার মানুষ। মাত্র ২০–২৫ মিনিটে শাহবাগ জনসমুদ্রে পরিণত হয়। তখনই সেনাপ্রধান ভাষণ দেন। সেই ভাষণের পর রক্তস্নাত সূর্যদয়ে নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটে।
এই আন্দোলনে শুধু নারায়ণগঞ্জেই শহীদ হয়েছেন ৫৫ জন। নীরব রায়হান জানান, “জেলা সিভিল সার্জন মশিউর রহমান ১৫ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যে তালিকা পাঠান, সেখানে নারায়ণগঞ্জের মোট শহীদ ৫৫ জন এবং আহত ৬০০ জনের বেশি।”
তবে সরকার পরবর্তীতে জেলা ভিত্তিক শহীদদের তালিকা আলাদা করার নীতিতে গেলে নারায়ণগঞ্জে শুধুমাত্র ২২ জনের নাম সরকারি শহীদ তালিকায় স্থান পায়। বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সহযোগিতায় চূড়ান্ত করা হয়।
এবিষয়ে দেওয়া এক বক্তব্যে সিভিল সার্জন মশিউর রহমান জানান, গণ-অভ্যুত্থানে দেখা গেছে নারায়ণগঞ্জের মানুষ সিলেট গিয়ে নিহত হয়েছে আবার সিলেটের মানুষ নারায়ণগঞ্জ এসে নিহত হয়েছে। সে হিসেবে নারায়ণগঞ্জের কতজন নিহত বা নারায়ণগঞ্জে এসে কতো জন নিহত হয়েছে সেটা এ তালিকায় এখনো নিরুপন করা হয়নি। তবে আমরা নারায়ণগঞ্জ থেকে ৫৫ জন নিহত ও ৬ শতাধিক আহতের তথ্য পাঠিয়েছিলাম। মন্ত্রণালয় এ তালিকায় কিভাবে সেই তথ্য ভেরিফাই করে ২২জন শহীদের চূড়ান্ত তালিকা দিয়েছে সেটা তারা ভালো বলতে পারবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন থেকে প্রাপ্ত ২২জন শহীদদের তালিকা। মো: আবুল হাসান স্বজন, বয়স: ২৫ বছর, পিতা: মো: জাকির হোসেন, মাতা: আফিয়া বেগম। ৩১৩ কুশিয়ারা পূর্বপাড়া, নারায়ণগঞ্জ। তিনি ৫ আগষ্ট চাষাড়ায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শহীদ হোন ৬ আগষ্ট। মো: জনি, বয়স: ১৭, পিতাঃ মোঃ ইয়াসিন মাতাঃ পারভীন। গ্রামঃ বালুয়াদিঘীরপাড়, থানাঃ সোনারগী, নারায়ণগঞ্জ। গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হোন কাঁচপুরে। ইমরান হাসান, বয়স: ১৯, পিতাঃ মো: ছালে আহাম্মেদ, মাতা: কোহিনুর আক্তার। গ্রাম: গঙ্গানগর, চর রমজান সোনাউল্লাহ, ডাকঘর: নিউটাউন-১৪০০, সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জ। কাঁচপুর গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। ইব্রাহিম, বয়স: ১৩, পিতা: মো: হানিফ, মাতা: আয়শা বিবি। গ্রাম: নয়াগাও, পো: বরাব বাজার, সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জ। কাঁচপুর ব্রীজের নীচে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হয়। মোঃ আদিল, বয়স: ১৫, পিতা: মোঃ আবুল কালাম মাতা: আয়েশা আক্তার। ভূইগড়, কুতুবপুর, ফতুল্লা নারায়ণগঞ্জ। ১৯ জুলাই ২০২৪ বুকের ডান পাশে গুলি বিদ্ধ হয়ে এস.বি গার্মেন্টসের সামনে শহীদ হোন তিনি। মো: ইরফান ভূইয়া, বয়স: ২৩, পিতা: আমিনুল ইসলাম ভূইয়া মাতা: মোসলেমা । মাদানি নগর, সানারপাড়, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ। কাজলা , যাত্রাবাড়ী বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে ১৮ জুলাই ঢামেক হাসপাতালে শহীদ হোন। মোঃ তুহিন, বয়স: ৩৬, পিতা-মোঃ শহিদুল ইসলাম মাতা- ময়না । উত্তর রসুলবাগ, ৩নং ওয়ার্ড, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ থাকতেন তিনি। তিনি চিটাগাংরোড মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ২০জুলাই শহীদ হোন। পারভেজ হাওলাদার, বয়স: ২৫, পিতা-মোঃ মজিবর হাওলাদার মাতা- হাসি বেগম। ইসহাক সরদারের বাড়ী, নিমাইকাশারী, সিদ্ধিরগঞ্জ, নাঃগঞ্জ। ৫ আগষ্ট যাত্রাবাড়ি গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হোন। মোঃ মাবরুর হসাইন, বয়স-২৫, পিতা: মোঃ আব্দুল হাই, মাতা: শাহনাজ বেগম। ভূইগড়, কুতুবপুর, ফতুল্লা নারায়ণগঞ্জ। ৫ আগষ্ট যাত্রাবাড়ি গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হোন। রিয়া গোপ, ৬ বছর, পিতা: দীপক কুমার গোপ, মাতা: বিউটি ঘোষ। ৩২নং নয়ামাটি নারায়ণগঞ্জ সদর, নারায়ণগঞ্জ। ৪র্থ তলা ভবনের ছাদে খেলা করছিলো রিয়া। মাথায় গুলিবদ্ধ হয়। ঢামেক হাসপাতাল ১৯ জুলাই ২০২৪ শহিদ হয় আহসান কবির ওরফে মোঃ শরীফ, বয়স- ৩৪ পিতা- মোঃ হুমায়ুন কবির, মাতা: মোসাঃ খালেদা কবির। দক্ষিণ সানারপাড়, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ। বুকের বাম পাশে গুলিবিদ্ধ হয়ে ২১ জুলাই পিডিকে সিএনজি পাম্প সংলগ্ন বিশ্বরোডে শহীদ হয়। ছলেমান, বয়স-২১ পিতা- মিরাজ বেপারী মাতা- রোকসানা। আল নূর টাওয়ার, মাদানীনগর, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ। পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে, ঘটনাস্থলেই শহীদ হন ছলেমান। হযরত বিল্লাল, বয়স-২০ ১৩ পিতা- মোঃ হোসেন মাতাঃ তাছলিমা বেগম। ছিয়াখোলা মুড়ি ফ্যাক্টরী, চিটাগাং রোড, সিদ্ধিরগঞ্জ, না:গঞ্জ। ৫ আগষ্ট যাত্রাবাড়ি মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হোন। মো: সজল মিয়া বয়স-২০ পিতা-মো: হাসান মাতা-রুনা বেগম। সাং-সালমদী সাং-সালমদী ইউনিয়ন-মাহমুদপুর উপজেলা-আড়াইহাজার জেলা-নারায়ণগঞ্জ । ২০ জুলাই সুগন্ধি হাসপাতাল হিরাঝিল শহীদ হোন। আরমান মোল্লা, বয়স-৩৬, পিতা-ইছব মোল্লা, মাতা-জোবেদা বেগম সাং-কলাগাছিয়া নয়াপাড়া গোপালদী, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ। তিনি বাবুরহাট ,নরসিংদী এলাকায় ২১ জুলাই শহীদ হোন। সফিকুল, বয়স: ২০, পিতা: আব্দুল আজিজ, মাতা: সূর্যবান । সাং-বালুয়াকান্দী, ইউনিয়ন: বিশনন্দী, উপজেলা: আড়াইহাজার, জেলা: নারায়ণগঞ্জ। ৫ আগষ্ট আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় নিজ এলাকায় শহীদ হোন। মো: মোহসীন, বয়স: ৬৩, পিতা: ছলিম, মাতা: আছিয়া বেগম। সাং-বাহাদুরপুর, ইউনিয়ন: সাতগ্রাম, থানা: আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ। মাধবদী পৌরসভা সংলগ্ন ডানপায়ের উরুতে পুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হোন। মোহাম্মদ মাহামুদুর রহমান খান সোহেল। বয়স: ৪৫ পিতা: মৃত মো: লুতফর রহমান মাতা: মৃত সুরিয়া আক্তার খানম । বাড়ি নাম্বার-৫৯ (৫ম তলা), রোড নাম্বার-১, সেক্টর নাম্বার-৬, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০। তাঁর স্থায়ী ঠিকানা গ্রাম: ত্রিশকাহনিয়া, পো: কাঞ্চন, কাঞ্চন পৌরসভা, উপজেলা: রূপগঞ্জ, জেলা: নারায়ণগঞ্জ। মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মস্তিষ্কের আঘাত জনিত জখম হয়ে আজমপুর (মেইন রোড) উত্তরা, ঢাকাস্থ ইউনাইটেড হাসপাতাল, গুলশান, ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।মোহাম্মদ ফারহানুল ইসলাম ভূইয়া (ফারহান ফাইয়াজ), পিতা: আলহাজ্ব শহিদুল ইসলাম ভূইয়া, মাতা: ফারহানা দিবা বরপা, তারাব পৌরসভা, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ। বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে ৩০ সার্কিট হাউজ রোড, ঢাকা- ধানমন্ডি, রোড নম্বর-২৭, ঢাকা:১২০৯ লালমাটিয়া সিটি হাসপাতাল, মোহাম্মদপুর, ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় শহীদ হন ফাইয়াজ। মোহাম্মদ সাইফুল হাসান (দুলাল) পিতা: মোহাম্মদ জবেদ আলী মোল্লা মাতা: মোসা: চনপাড়া পনুর্বাসন কেন্দ্র, ২য় অংশ, পূর্বগ্রাম বাজার, কায়েতপাড়া ইউনিয়ন, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ। কুড়িল, বিশ্বরোড, ঢাকা, পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে কুর্মিটোলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শহীদ হন তিনি। মো: রোমান পিতা: মো: আনোয়ার হোসেন মাতা:মোসা: রোজিনা। চনপাড়া পনুর্বাসন কেন্দ্র, ৮ম অংশ, পূর্বগ্রাম বাজার, কায়েতপাড়া ইউনিয়ন, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ। চনপাড়া পুর্নবার্সন কেন্দ্র, কায়েতপাড়া ইউপি, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গলায়, বুকে ও মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। তাওহিদুল আলম জিসান। পিতা: মো: আলমগীর মোল্লা, মাতা: মোসা: তাহমিনা আলম নুপুর। মিঠাব, মাছুমাবাদ, ভুলতা ইউনিয়ন, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ। মিঠাব, ২নং ওয়ার্ড, ভুলতা ইউনিয়ন এর শিকদার বাড়ির পশ্চিম পাশের রাস্তায় সাবেক সরকারের দলীয় ক্যাডার কর্তৃক বুকের বাম পাশে চাকুর আঘাতে ফুসফুস ছিদ্র হয়ে যায়। পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।।
এছাড়াও আরও যারা নারায়ণগঞ্জ থেকে আন্দোলন করে শহীদ হয়েছিলেন। মো: জামাল, বয়স: ২৮, পিতা: মো: হারুল, মাতা: মেহেরজান বিবি। জালকুড়ি, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ১ রাঙ্গাবালি, পটুয়াখালী । ৯ (তার নাম পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনের চূড়ান্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় জেলা প্রশাসন, নারায়ণগঞ্জের তালিকা হতে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।) বাবুল মিয়া, দুপ্তারা, আড়াইহাজার। নুরে আলম, পিতা- মো. কিতাব আলী খান। নাভানা সিটি সিদ্ধিরগঞ্জ। আব্দুস সালাম, পিতা- সাবের বিশ্বাস। কুমারখালী, কুষ্টিয়া। আলাউদ্দিন, পিতা- সিদ্দিকুর রহমান সরদার। উত্তর মতলব, চাঁদপুর। আব্দুর রহমান, পিতা- হাসান দেওয়ান। বালিয়া, চাঁদপুর। আব্দুল লতিফ, পিতা- নিজাম উদ্দিন। কাউনিয়া রংপুর। আরাফাত হোসেন আকাশ, পিতা- আকরাম হোসেন। সিদ্ধিরগঞ্জ। আব্দুল্লাহ আল মামুন, পিতা- আব্দুল ওয়াহেদ আলী। তারাবো পৌরসভা, রূপগঞ্জ। মোঃ আল মামুন আমানত, পিতা- মো. আব্দুল লতিফ। সিদ্ধিরগঞ্জ। পারভেজ হোসেন, পিতা- সোহরাব হোসেন। মাহমুদপুর সিদ্ধিরগঞ্জ। ফয়েজ আহমেদ, পিতা- আলাউদ্দিন বেপারী। রায়পুর লক্ষীপুর। মো. মেহেদী। হীরাঝিল, সিদ্ধিরগঞ্জ। মাহদী, পিতা- সানাউল্লাহ। পিরোজপুর, সোনারগাঁ। মিনারুল ইসলাম, পিতা- মৃত এনামুল। গুডীপাড়ি, রাজশাহী। আহমেদ ইমরান, পিতা- সোহরাব মিয়া। লাখাই, হবিগঞ্জ। মো. মনির হোসেন, পিতা- মমতাজুর রহমান। মনোহরগঞ্জ, কুমিল্লা। মো. রফিকুল ইসলাম, পিতা- মৃত মোমেন মিয়া। হিরাঝিল, সিদ্ধিরগঞ্জ। মিলন মিয়া, পিতা- আলী হোসেন হাওলাদার। ধুমকি, পটুয়াখালী। মো. রুবেল মিয়া, পিতা- মো. নান্নু মিয়া। বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী। রাকিব, সিআইখোলা, সিদ্ধিরগঞ্জ। রাব্বি, সিদ্ধিরগঞ্জ। রাসেল, পিতা- পিন্টু রহমান। মান্দা, নওগা। মো. রাসেল বকাউল, পিতা- মো. নুরুল বকাউল। সানারপাড়, সিদ্ধিরগঞ্জ। সেলিম মন্ডল, পিতা- ওহাব মন্ডল। কুমারখালী, কুষ্টিয়া। মো. সজিব মিয়া, পিতা- মো. সানাউল্লাহ। কাবিলপুর, নোয়াখালী। শাহ জামান, পিতা- হারুন ভুইয়া। রাঙ্গাবালী, পটুয়াখালী। সুমাইয়া আক্তার সিমু, পিতা- মৃত সেলিম মাতবর। মেহেন্দিগঞ্জ, বরিশাল। সোহেল আহাম্মেদ, পিতা- তোফলেসুর রহমান। বিয়ানী বাজার, সিলেট। সৈয়দ গোলাম মোস্তফা রাজু, পিতা- সৈয়দ আব্দুল করিম। রামগঞ্জ, লক্ষীপুর। মো. শাহীন মিয়া, পিতা- হাসান আলী। হিরাঝিল, সিদ্ধিরগঞ্জ।মো. হৃদয়, পিতা- ছাবেদ আলী। হিরাঝিল, সিদ্ধিরগঞ্জ। মো. হোসেন মিয়া, পিতা- মানিক মিয়া। দেবিদ্বার থানা, কুমিল্লা।বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার এই দীর্ঘ সংগ্রাম একদিকে যেমন স্বৈরাচার পতনের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় যুক্ত করেছে, তেমনি নারায়ণগঞ্জের সংগ্রামী জনতার আত্মত্যাগ ইতিহাসের পাতায় লাল কালিতে লেখা থাকবে। ২৪ এর শহীদদের আমরা কখনও ভুলবো না। আমরা তোমাদের ভুলবো না