ঢাকা ১১:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
‘আড়ালেই থাকতে চাই, ক্যামেরাম্যান খুঁজে বের করে’ অদ্ভূত কারণে উইম্বলডন স্থগিত রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরিতে সুখবর পেলেন মান্ধানা গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করে শহীদদের ঋণ পরিশোধের এখনই সময়: তারেক রহমান পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে প্রাথমিকভাবে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে এনবিআরের আরও ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে সিদ্ধান্ত বুধবার: নৌ উপদেষ্টা চট্টগ্রামের সাবেক ডিআইজিসহ আরও তিন পুলিশ কর্মকর্তা বরখাস্ত আ.লীগ নিষিদ্ধ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে আমরা হতাশ: নুর মুজিববাদী সংবিধান ফেলে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে: আখতার হোসেন
মেয়র আইভী ইস্যু

ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েও প্রিজন ভ্যানে জিসান

সোজাসাপটা রিপোর্ট :
  • আপডেট সময় : ১২:৪৪:৫০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫
  • / ২৯১ জন পড়েছেন

সোজাসাপটা রিপোর্ট
প্রিজন ভ্যানের ভেতরকার এই ছেলেটার নাম জান্নাতুল ফেরদৌস জিসান। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শুরুর দিকের দিনগুলোতে ওর সঙ্গে পরিচয়। লড়াইয়ের দিনগুলোতে সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করা জিসান আরো সব টগবগে তরুণদের মতো ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জীবন বাজি ধরেছিলো। আন্দোলন পরবর্তী সময়ে ট্রাফিকিংসহ নানান সংস্কারমূলক কাজে ছেলেটাকে আমরা সক্রিয় দেখেছি। পরবর্তীতে কিছুদিন ছাত্রফেডারেশনে যুক্ত ছিল। পরে রাজনীতি ছেড়ে সাংবাদিকতায় যুক্ত হয়। জিসান বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের অনলাইন গণমাধ্যম প্রেস নারায়ণগঞ্জের স্টাফ রিপোর্টার। প্রথম আলো বন্ধুসভার পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক। নারায়ণগঞ্জে সাংবাদিকদের পাঠচক্র অনুশীলনের সক্রিয় সদস্য জিসান।
নারায়ণগঞ্জের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীকে গ্রেপ্তারের সময় পুলিশের কাজে বাধা ও হামলার ঘটনায় চারদিন পর ১২ মে রাতে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে। মামলায় ‘ডা. আইভী সমর্থক’ ৫২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, আসামিরা সাবেক মেয়রের পক্ষ নিয়ে পুলিশের সরকারি কাজে বাধা দিয়েছে, পুলিশকে রক্তাক্ত যখম করেছে। সেই মামলায় জিসানকে আসামি করা হয়েছে ২৯ নম্বরে। এবং মামলার পর পরই জিসান, তার চাচা ও বাবাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জিসানের বাবা এলাকায় আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবেই পরিচিত।
তার চেয়েও ভয়ঙ্কর বিষয় হলো, এই মামলায় জিসানের চাচা জনপ্রিয় ব্লগার শওকত মিথুনের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার-কে আসামি করা হয়েছে। অথচ বিয়ের প্রায় নয় বছর পর মাহমুদা সন্তান ধারণ করেছেন। অন্তঃসত্ত্বা মায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি আইভীর পক্ষ নিয়ে সেই রাতে বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের দেওভোগে এসেছিলেন। সারারাত জেগেছিলেন এবং ভোর হওয়ার পর পুলিশের উপর আক্রমণ করে পুলিশকে যখম করেছেন।

পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে ভূমিষ্ট হওয়া এই সময়ে এসে জুলাইয়ের সক্রিয় আন্দোলনকারী আর অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের বিরুদ্ধেও নির্দ্বিধায় মামলা করে দেয়াটা কেবল দুঃখজনকই নয়। এটা হতাশার, ক্ষোভের, ভয়ের। ভয় এটা যে, এধরনের ঘটনা হাসিনা সরকারের অত্যাচার নির্যাতনকে স্বাভাবিক করে তোলে। পুলিশের যে নতুন ভাবমূর্তি তৈরির রাষ্ট্রীয় প্রচেষ্টা চলছে, তাকে বাধাগ্রস্ত করে। পুলিশকে আবারও রাজনৈতিক গুন্ডা আর গণশত্রু হিসেবে হাজিরের শঙ্কা তৈরি করে।
পুলিশ বলছে মামলার আসামি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তারা ঘটনার দিনের ছবি ও ভিডিও বিশ্লেষণ করেছেন! কিন্তু তারা সুনির্দিষ্টভাবে সেদিনের ঘটনায় জিসান কিংবা তার পরিবারের সম্পৃক্ততার কোন প্রমাণ আমাদের দেখাতে পারেননি।
মামলা সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে জানতে পেরেছি, মামলায় আসামির নাম যুক্ত করতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। মহানগর বিএনপির কয়েকজন নেতার নাম আমরা পেয়েছি যারা পুলিশের উপর প্রভাব বিস্তার করেছেন। নিজেদের ব্যক্তিগত বিরোধ থেকে মামলায় আসামির নাম যুক্ত করেছেন। এটাও জানতে পেরেছি, এমন একজন স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা এই মামলার আসামির তালিকা তৈরিতে যুক্ত ছিলেন যিনি ৫ আগস্টের আগে ১৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার একজন মাদক বিক্রেতার লোক হিসেবে পরিচিত ছিলেন, এবং বন্যার্তদের জন্য তোলা ত্রাণের টাকা আত্মসাৎ করতে গিয়ে জিসান ও তার বন্ধুদের তোপের মুখে পড়েছিলেন।
আমরা, আশা করছি পুলিশ দ্রুতই এই ঘটনার তদন্ত করবে। এবং জিসানসহ নিরাপরাধ ব্যক্তিদের আইনগত হয়রানি বন্ধ করবে। ভবিষ্যতে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে মামলা করবে। নতুন এই সময়ে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ‘গায়েবি মামলা’ গায়েবি আসামি’র মতো ঘটনা এই অভ্যুত্থানে শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানীর শামিল।
আমরা খুব শীঘ্রই সাংবাদিক জান্নাতুল ফেরদৌস জিসানের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।

সংবাদটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন