ঢাকা ০১:১৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফতুল্লার ইসদাইরে মজিবরের মিনি গরুর হাঁট

চীফ রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ০৩:৩৬:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ জুন ২০২৫
  • / ৭২ জন পড়েছেন

নারায়ণগঞ্জ শহরের ইসদাইর এলাকায় রেলওয়ের জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ গরুর অস্থায়ী হাট। রেললাইনের একেবারে ধারে রাখা হয়েছে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫টি গরু। রেলপথ ও সড়কের সংযোগস্থলে গরু রাখার ফলে যান চলাচলে সৃষ্টি হয়েছে মারাত্মক বাধা, পাশাপাশি দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বেড়েছে।

মঙ্গলবার (৩ জুন) বেলা ১টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, গরুগুলোর আশপাশে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই, নেই রেলওয়ের কোনো সতর্কতামূলক চিহ্নও। গরুগুলো দেখভাল করছিলেন আলম নামের এক ব্যক্তি। তিনি জানান, গরুগুলো বরিশাল থেকে আনা হয়েছে এবং এগুলো চাঁনমারি এলাকার অস্থায়ী গরুর হাটে নেওয়ার জন্য রাখা হয়েছে। সেই হাটের ইজারাদার ফতুল্লা থানার বিএনপি নেতা মজিবর রহমান বলে দাবি করেন তিনি।

এসময় সাংবাদিকরা অনুসন্ধান করতে গেলে আলম ছবি তুলতে বাধা দেন এবং প্রশ্ন করা হলে উত্তেজিত হয়ে অকথ্য ভাষা ব্যবহার করেন। তিনি বলেন, “এসব গরু আজকের মধ্যেই হাটে নিয়ে যাওয়া হবে, ছবি তুললে সমস্যা হবে। এখানে রেলওয়ের মাস্টারের সাথে কথা বলেই গরু রাখা হয়েছে।” পারিপার্স্বিক অবস্থা প্রতিকূল হলে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

এসময় বিএনপি নেতা মজিবর রহমানকে না পেয়ে হাটের দ্বায়িত্বে থাকা তাঁর ভাগিনা সাইফুল ইসলাম বাবুর সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমাদের হাটে প্রচুর যায়গা আছে। এখানে জায়গা থাকতে আমরা কেনো ওখানে গরু রাখবো? একদমই মিথ্যা আর বানোয়াট কথা। আমার জানা মতে ইসদাইর রেললাইনের পাশে জেলা তাঁতীদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান উজ্জ্বল হাট বসানোর পায়ঁতারা করেছে। সেই কাজটা করেছে বলে আমার ধারণা।

এই বিষয়ে জেলা তাঁতীদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান উজ্জ্বলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান “ইসদাইর রেললাইনের পাশে আমি হাট বসানোর জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছিলাম, প্রশাসক জনদূর্ভোগ কমানোর কথা বললে আমি সাথে সাথে না করি যে, আমার কোন হাট লাগবে না। এখন কে বা কারা জনগণের দূর্ভোগ বাড়িয়ে রাস্তা দখল করে অবৈধ হাট বসিয়েছে সেটা কেনো প্রশাসন দেখছে না তাঁর কৈফিয়ত চাইবো।”

ঘটনার বিষয়ে ফতুল্লা থানা বিএনপির নেতা ও চাঁনমারি এলাকার অস্থায়ী গরুর হাটের ইজারাদার মজিবর রহমানকে মুঠোফোনে জানানো হলে তিনি উত্তেজিত কন্ঠে বলেন, “ওখানে আমার গরু রাখা হয়েছে। আমার হাটের গরু রেখেছি তাতে কি হয়েছে? আপনারা থাকেনই শুধু আমাদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করতে।”

অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে মাষ্টারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। ফলে রেলওয়ের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, প্রতি বছর ঈদকে সামনে রেখে রেলওয়ের জায়গা দখল করে এভাবে গরু রাখা হয় এবং বিষয়টি জানার পরেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন চুপ থাকে। তারা জানান, রেললাইনের এত কাছে গরু রাখা ঝুঁকিপূর্ণ এবং জনভোগান্তির কারণ সেই সাথে পরিবেশের উপর একটা প্রভাব তো রয়েছেই।

সচেতন নাগরিকরা মনে করছেন, প্রশাসন ও রেল কর্তৃপক্ষ যদি দ্রুত হস্তক্ষেপ না করে, তাহলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। একইসঙ্গে গরু রাখার নামে রেলওয়ের জায়গা দখল এবং সাংবাদিক হেনস্তার ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি উঠেছে।

ট্যাগ :

সংবাদটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ফতুল্লার ইসদাইরে মজিবরের মিনি গরুর হাঁট

আপডেট সময় : ০৩:৩৬:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ জুন ২০২৫

নারায়ণগঞ্জ শহরের ইসদাইর এলাকায় রেলওয়ের জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ গরুর অস্থায়ী হাট। রেললাইনের একেবারে ধারে রাখা হয়েছে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫টি গরু। রেলপথ ও সড়কের সংযোগস্থলে গরু রাখার ফলে যান চলাচলে সৃষ্টি হয়েছে মারাত্মক বাধা, পাশাপাশি দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বেড়েছে।

মঙ্গলবার (৩ জুন) বেলা ১টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, গরুগুলোর আশপাশে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই, নেই রেলওয়ের কোনো সতর্কতামূলক চিহ্নও। গরুগুলো দেখভাল করছিলেন আলম নামের এক ব্যক্তি। তিনি জানান, গরুগুলো বরিশাল থেকে আনা হয়েছে এবং এগুলো চাঁনমারি এলাকার অস্থায়ী গরুর হাটে নেওয়ার জন্য রাখা হয়েছে। সেই হাটের ইজারাদার ফতুল্লা থানার বিএনপি নেতা মজিবর রহমান বলে দাবি করেন তিনি।

এসময় সাংবাদিকরা অনুসন্ধান করতে গেলে আলম ছবি তুলতে বাধা দেন এবং প্রশ্ন করা হলে উত্তেজিত হয়ে অকথ্য ভাষা ব্যবহার করেন। তিনি বলেন, “এসব গরু আজকের মধ্যেই হাটে নিয়ে যাওয়া হবে, ছবি তুললে সমস্যা হবে। এখানে রেলওয়ের মাস্টারের সাথে কথা বলেই গরু রাখা হয়েছে।” পারিপার্স্বিক অবস্থা প্রতিকূল হলে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

এসময় বিএনপি নেতা মজিবর রহমানকে না পেয়ে হাটের দ্বায়িত্বে থাকা তাঁর ভাগিনা সাইফুল ইসলাম বাবুর সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমাদের হাটে প্রচুর যায়গা আছে। এখানে জায়গা থাকতে আমরা কেনো ওখানে গরু রাখবো? একদমই মিথ্যা আর বানোয়াট কথা। আমার জানা মতে ইসদাইর রেললাইনের পাশে জেলা তাঁতীদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান উজ্জ্বল হাট বসানোর পায়ঁতারা করেছে। সেই কাজটা করেছে বলে আমার ধারণা।

এই বিষয়ে জেলা তাঁতীদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান উজ্জ্বলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান “ইসদাইর রেললাইনের পাশে আমি হাট বসানোর জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছিলাম, প্রশাসক জনদূর্ভোগ কমানোর কথা বললে আমি সাথে সাথে না করি যে, আমার কোন হাট লাগবে না। এখন কে বা কারা জনগণের দূর্ভোগ বাড়িয়ে রাস্তা দখল করে অবৈধ হাট বসিয়েছে সেটা কেনো প্রশাসন দেখছে না তাঁর কৈফিয়ত চাইবো।”

ঘটনার বিষয়ে ফতুল্লা থানা বিএনপির নেতা ও চাঁনমারি এলাকার অস্থায়ী গরুর হাটের ইজারাদার মজিবর রহমানকে মুঠোফোনে জানানো হলে তিনি উত্তেজিত কন্ঠে বলেন, “ওখানে আমার গরু রাখা হয়েছে। আমার হাটের গরু রেখেছি তাতে কি হয়েছে? আপনারা থাকেনই শুধু আমাদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করতে।”

অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে মাষ্টারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। ফলে রেলওয়ের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, প্রতি বছর ঈদকে সামনে রেখে রেলওয়ের জায়গা দখল করে এভাবে গরু রাখা হয় এবং বিষয়টি জানার পরেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন চুপ থাকে। তারা জানান, রেললাইনের এত কাছে গরু রাখা ঝুঁকিপূর্ণ এবং জনভোগান্তির কারণ সেই সাথে পরিবেশের উপর একটা প্রভাব তো রয়েছেই।

সচেতন নাগরিকরা মনে করছেন, প্রশাসন ও রেল কর্তৃপক্ষ যদি দ্রুত হস্তক্ষেপ না করে, তাহলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। একইসঙ্গে গরু রাখার নামে রেলওয়ের জায়গা দখল এবং সাংবাদিক হেনস্তার ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি উঠেছে।